Wednesday, January 25, 2017

কাফফারার মাসায়েল


রমযানের রোযা নষ্ট হয়ে গেলে তার কাফফারা এই যে, ক্রমাগত ষাট দিন রোযা রাখতে হবে। মাঝে কোনো রোযা ছুটে গেলে আবার নতুন করে ক্রমাগত ষাট রোযা রাখতে হবে। মাঝে যে রোযা ছুটে গেছে তা হিসেবের মধ্যে গণ্য হবে না।
কোনো কারণে কেউ রোযা রাখতে না পারলে ষাটজন অভাবগ্রস্তকে দু বেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে।
১. মেয়েদের জন্যে কাফফারা এ সুবিধা আছে যে, হায়েযের জন্যে মাঝে রোযা বাদ পড়লে ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে না। তবে হায়েয বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে রোযা শুরু করতে হবে।
২. কাফফারা রোযা রাখার সময় যদি নেফাসের অবস্থায় হয় তাহলে ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে। আবার নতুন করে ষাট রোযা রাখতে হবে।
৩. কাফফরা রোযা রাখার সময় যদি রমযান মাস এসে যায় তাহলে রমযানের রোযা রাখতে হবে। তারপর পুনরায় এক সাথে ষাট রাখতে হবে।
৪. যদি একই রমযানে একাধিক রোযা নষ্ট হয় তাহলে সব নষ্ট রোযার জন্যে একই কাফফারা ওয়াজিব হবে।
৫. কারো ওপর একটি কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে। এ আদায় করার পূর্বে আর এক কাফফারা ওয়াজিব হলো। তাহলে দুয়ের জন্যে একই কাফফারা ওয়াজিব হবে তা এ দুটি কাফফারা দুটি রমযানের হোক না কেন। শর্ত এই যে, যৌনক্রিয়ার কারণে যদি রোযা নষ্ট না হয়ে থাকে। যৌনক্রিয়ার কারণে যতো রোযা নষ্ট হবে তার প্রত্যেকটির জন্যে আলাদা আলাদা কাফফারা ওয়াজিব হবে।
৬. ষাটজন দুঃস্থ লোকের ব্যাপারে এটা লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তারা পূর্ণ বয়স্ক হতে হবে, ছোট বালককে খানা খাওয়ালে তার বদলায় পুনরায় বয়স্ক দুঃস্থকে খাওয়াতে হবে।
৭. খানা খাওয়ানোর পরিবর্তে খাদ্য শস্য দেয়াও জায়েয। অথবা তার মূল্যও দিয়ে দেয়া যায়।
৮. দুঃস্থদের খাওয়ানোর ব্যাপারে সাধারণ মানের খাদ্য হতে হবে- না খুব ভালো, না খারাপ।
৯. দুঃস্থদের খাওয়াবার ব্যাপারে ধারাবাহিকতা রক্ষা না করলে কোনো ক্ষতি নেই কাফফারা হয়ে যাবে।
১০. একই ব্যক্তিকে ষাটদিন খাওয়ালে সহীহ হবে না- খাদ্য শস্য বা তার মূল্য দেয়ার ব্যাপারেও তাই।
ফিদিয়া
কেউ যদি বার্ধক্যের কারণে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে অথবা এমন কঠিন পীড়ায় ভুগছে যে, বাহ্যত সুস্থ হওয়ার আশা নেই এবং তার রোযা রাখার শক্তি নেই। এমন অবস্থায় শায়িত এ ধরনের লোকের জন্যে রোযা না রাখার অনুমতি দিয়েছে। প্রত্যেক রোযার বদলে এক একজন দুঃস্থকে ফিদিয়া দেবে। ফিদিয়ার মধ্যে খানাও খাওয়ানো যেতে পারে, পরিমাণ মতো খাদ্য শস্যও দেয়া যেতে পারে অথবা তার মূল্যও দেয়া যেতে পারে।
ফিদিয়ার পরিমাণ
একজন ফকীরকে সাদকায়ে ফিতরের পরিমাণ খাদ্য শস্য দেয়া অথবা তার মূল্য দেয়া। প্রত্যেক রোযার বদলায় দু বেলা কোনো অভাবগ্রস্তকে খানা খাওয়ানোও দুরস্ত আছে। মধ্যম ধরনের খানা খাওয়াতে হবে।
ফিদিয়ার মাসায়েল
১. ফিদিয়া আদায় করা সত্ত্বেও যদি রোগী স্বাস্থ্যবান হয়ে যায় তাহলে রোযাগুলোর কাযা ওয়াজিব হবে। যে ফিদিয়া দেয়া হয়েছে তার আলাদা সওয়াব আল্লাহ দেবেন।
২. কারো জিম্মায় কিছু কাযা রোযা আছে। মৃত্যুর সময় সে অসিয়ত করে গেল যে, তার মাল থেকে যেন ফিদিয়া দিয়ে দেয়া হয়। কাযা রোযার মোট ফিদিয়া যদি তার এ পরিত্যক্ত মালের এক তৃতীয়াংশের পরিমাণ হয় (পরিত্যক্ত মাল বলতে বুঝায় যা দাফন কাফনের ব্যয় ভার বহন এবং ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করার পর যা বাচে। তার এক তৃতীয়াংশ।) তাহলে ফিদিয়া ওয়াজিব হবে। ফিদিয়ার মূল্য যদি অধিক হয় আর এক তৃতীয়াংশের মালের পরিমাণ কম হয়, তাহলে এক তৃতীয়াংশ মালের বেশী ফিদিয়া তখন জায়েয হবে যখন ওয়ারিশগণ খুশী হয়ে রাযী হবে। নাবালেগ বাচ্চাদের অনুমতির কোনো প্রয়োজন নেই।
৩. মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত করে না থাকে এবং ওয়ারিশগণ আপন ইচ্ছায় যদি ফিদিয়া আদায় করে তাহলেও দুরস্ত হবে। আশা করা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা ফিদিয়া কবুল করবেন।
৪. প্রতি ওয়াক্তের নামাযের ফিদিয়াও তাই যা রোযার ফিদিয়া। মনে রাখতে হবে দিনে পাঁচ ওয়াক্তের নামায এবং তার সাথে বেতের নামায অর্থাৎ দৈনিক ছয় নামায।
৫. মৃত্যুর সময় কেউ নামাযের জন্যে ফিদিয়া দেয়ার অসিয়ত করলে তার হুকুম রোযার ফিদিয়ার মতোই হবো।
৬. মৃত ব্যক্তি পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশ যদি নামায পড়ে বা রোযা রাখে, তাহলে তা দুরস্ত হবে না।
৭. সামান্য অসুখের জন্যে রমযানের রোযা কাযা করা অথবা এ ধারণা করা যে পরে কাযা আদায় করবে অথবা ফিদিয়া দিয়ে মনে করবে যে, রোযার হক আদায় হয়েছে এমন মনে করা ঠিক নয়।
নবী (স) বলেন, যদি কেউ বিনা ওজরে অথবা রোগের কারণ ছাড়া একটা রোযাও ছেড়ে দেবে- সারা জীবন রোযা রাখলেও তার ক্ষতি পূরণ হবে না। (তিরমিযি, আবু দাউদ)
রোযার বিভিন্ন হুকুম ও নিয়মনীতি
১. যে ব্যক্তি কোনো কারণে রোযা রাখতে পারলো না তার জন্যে এটা জরুরী যে, সে যেন প্রকাশ্যে খানাপিনা না করে এবং বাহ্যত রোযাদারের মতো হয়ে থাকে।
২. যার মধ্যে রোযা ফরয হওয়া ও সহীহ হওয়ার সকল শর্ত পাওয়া যায়, তার রোযা যদি কোনো কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তার জন্যে ওয়াজিব যে, সে দিনে বাকী অংশ রোযাদারের মতো হয়ে থাকবে এবং খানাপিনা ও যৌনক্রিয়া থেকে বিরত থাকবে।
৩. কোনো মুসাফির যদি দুপুরের পর বাড়ী পৌঁছে অথবা কোথাও মুকীম হওয়ার এরাদা করে তাহলে দিনের বাকী অংশ রোযাদারের মতো হয়ে থাকা এবং খানাপিনা থেকে বিরত থাকা তার জন্যে মুস্তাহাব হবে। এমনিভাবে কোনো স্ত্রীলোক যদি দুপুরের পর হায়েয বা নেফাস থেকে পাক হয় তাহলে তার জন্যেও মুস্তাহাব যে, সে দিনের বাকী অংশ খানাপিনা থেকে বিরত থাকবে।
৪. যদি কেউ ইচ্ছা করে রোযা নষ্ট করে অথবা কেউ রাত আছে মনে করে সুবেহ সাদেকের পর খানা খায়, তাহলে তার জন্যে ওয়াজিব হবে সারাদিন রোযাদারের মতো কাটানো এবং খানাপিনা থেকে বিরত থাকা।
৫. দুপুরের পর যদি কোনো শিশু বালেগ হয় অথবা কেউ যদি মুসলমান হয়, তাহলে তাদের জন্যে মুস্তাহাব এই যে, তারা বাকী দিনটুকু রোযাদারের মতো কাটাবে।
৬. রোযা রাখার পর যদি কোনো মেয়ে মানুষের হায়েয শুরু হয় তাহলে রোযা নষ্ট হবে। কিন্তু তারপর তার উচিত রোযাদারের মতো খানাপিনা থেকে বিরত থাকা।

Wednesday, January 18, 2017

যেসব অবস্থায় রোযা ভাঙা জায়েয


১. হঠাৎ সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছে, এমন কোনো রোগ যার ফলে জীবন বিপদাপন্ন অথবা মোটর দুর্ঘটনায় আহত, উঁচু জায়গা থেকে পড়ে অবস্থা আশংকাজনক এমন অবস্থায় রোযা ভাঙা জায়েয।
২. কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং জীবনের আশংকা নেই কিন্তু আশংকা যে রোযা যদি ভাঙা না হয় তাহলে রোগ খুব বেড়ে যাবে, এমন অবস্থায় রোযা ভাঙার অনুমতি আছে।
৩. কারও এমন প্রচন্ড ক্ষুধা তৃষ্ণা লেগেছে যে, কিছু পানাহার না করলে জীবন যাওয়ার আশংকা রয়েছে, তাহলে এমন অবস্থায় রোযা ভাঙা দুরস্ত আছে।
৪. কোনো গর্ভবতী মেয়েলোকের এমন দুর্ঘটনা হলো যে, তার নিজের অথবা পেটের বাচ্চার জীবনের আশংকা হলো, এমন অবস্থায় রোযা ভাঙার এখতিয়ার আছে।
৫. কাউকে সাপে দংশন করেছে এবং তাৎক্ষনিকভাবে ওষুধ পত্রের প্রয়োজন। এমন অবস্থায় রোযা ভাঙা উচিত।
৬. দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও সাহস করে রোযা রাখা হলো। তারপর মনে হলো যে, যদি রোযা ভাঙা না হয় তাহলে জীবনের আশংকা রয়েছে, অথবা সাংঘাতিকভাবে রোগ বেড়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় রোযা ভাঙার অনুমতি আছে।
কাযা রোযার মাসায়েল
১. রমযানের যেসব রোযা কোনো কারণে করা হয়নি, তার কাযা আদায় করতে অযথা বিলম্ব করা উচিত নয়। যতো শীঘ্র করা যায় ততোই ভালো।
২. রমযানের রোযা হোক বা অন্য কোনো রোযা, তা ক্রমাগত করা জরুরী নয়। এটাও জরুরী নয় যে, ওজর শেষ হওয়ার সাথে সাথেই করতে হবে। সুযোগ মতো কাযা আদায় করলেই চলবে।
৩. রোযার কাযা ক্রমানুসারে করা ফরয নয়। যেমন কাযা রোযা না করেও রমযানের চলতি রোযা করা যায়।
৪. কাযা রোযা রাখার জন্যে দিন তারিখ নির্দিষ্ট করা জরুরী নয়। যতো রোযা কাযা হয়েছে তার বদলার ততোগুলো রোযা রাখতে হবে।
৫. যদি রমযানের দু বছরের রোযা কাযা পড়ে থাকে, তাহলে কোন বছরের কাযা আদায় করা হচ্ছে তা নির্দিষ্ট হওয়া জরুরী। এজন্যে এ নিয়ত করতে হবে যে, অমুক বছরের কাযা রোযা রাখা হচ্ছে।
৬. কাযা রোযা রাখার জন্যে রাতেই নিয়ত করা জরুরী। সুবেহ সাদেকের পর কাযা রোযার নিয়ত করলে তা দুরস্ত হবে না। সে রোযা নফল হয়ে যাবে। কাযা রোযা পুনরায় রাখতে হবে।
৭. রমযানের কিছু রোযা কাযা হয়ে গেল। এ কাযা রোযা রাখার সুযোগ পাওয়া গেল না এবং আর এক রমযান এসে গেল। তাহলে প্রথমে রমযানের রোযা রাখতে হবে, কাযা রোযা পরে রাখবে।
৮. কেউ সন্দেহে দিনে রমযানের রোযা রাখলো। পরে জানা গেল যে, সেদিন শাবানের ৩০ তারিখ। তাহলে এ রোযা নফল হয়ে যাবে যদিও তা মাকরূহ হবে। আর যদি সে রোযা ভেঙে ফেলা হয় তো তার কাযা ওয়াজিব হবে না।

Tuesday, January 17, 2017

যেসব ওজরের কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে

যেসব ওজরের কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে তা হলো দশটি। তার বিবরণ নিম্নরূপ:
(১) সফর, (২) রোগ (৩) গর্ভধারণ (৪) স্তন্যদান (৫) ক্ষুধা তৃষ্ণার প্রাবল্য (৬) বার্ধক্য ও দুর্বলতা (৭) জীবন নাশের ভয় (৮) জেহাদ (৯) বেহুঁশ হওয়া (১০) মম্তিষ্ক বিকৃতি।
১। সফর
শরীয়াত তার যাবতীয় হুকুমের মধ্যে বান্দাহর সহজসাধ্যতার প্রতি লক্ষ্য রেখেছে। কোনো ব্যাপারেও তাকে অযথা কষ্ট ও সংকীর্ণতার সম্মুখীন করা হয়নি। বস্তুত কুরআন পাকে রোযা ফরয হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করতে গিয়ে মুসাফির ও রোগীর অক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে এবং রোযা না রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
*******আরবী*********
অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে তার জন্যে অপরিহার্য যে, সে যেন রোযা রাখে। আর যে ব্যক্তি রোগী অথবা সফরে আছে, সে অন্যান্য দিনে রোযা রেখে তার হিসেব পুরো করবে। (সূরা আল বাকারাঃ ১৮৫)
১. সফর যে কোনো উদ্দেশ্যেই হোক না কেন, এবং তার মধ্যে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থাক অথবা দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হোক, সকল অবস্থায় মুসাফিরের রোযা না রাখার অনুমতি আছে। অবশ্যই যে সফরে কোনো অসুবিধা নেই, তাতে রোযা রাখাই মুস্তাহাব যাতে করে রমযানের ফযিলত ও বরকত লাভ করা যায়। কিন্তু পেরেশানি ও অসুবিধা হলে রোযা না রাখা ভালো।
২. যদি রোযার নিয়ত করার পর অথবা রোযা শুরু হয়ে যাওয়ার পর কেউ সফরে রওয়ানা হয়। তাহলে সেদিনের রোযা কাযা জরুরী। কিন্তু রোযা ভেঙে দিলে কাফফারা দিতে হবে না।
৩. যদি কোনো মুসাফির দুপুরের আগে কোথাও মুকীম হয়ে যায় এবং ঐ সময় পর্যন্ত রোযা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ সে করেনি, তাহলে তার জন্যেও সেদিন রোযা রাখা জরুরী, কিন্তু রোযা নষ্ট করলে কাফফারা দিতে হবে না।
৪. যদি কোনো মুসাফির কোনো স্থানে মুকীম হওয়ার ইরাদা করে, ১৫দিনের কমই ইরাদা করুক না কেন, তথাপি তার উচিত যে, সে রোযা রাখে, এ দিনগুলোতে রোযা না রাখা মাকরূহ। আর যদি ১৫ দিন থাকার ইরাদা করে তাহরে তো রোযা না রাখা জায়েয নয়।
২। রোগ
১.যদি রোযা রাখার কারণে কোনো রোগ সৃষ্টির আশংকা হয় অথবা এ ধারণা হয় যে, ওষুধ না পাওয়ার কারণে অথবা আহার না পাওয়ার কারণে রোগ বেড়ে যাবে, অথবা যদি এ ধারণা হয় যে, স্বাস্থ্য বিলম্বে লাভ হবে তাহলে এসব অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে। কিন্তু জেনে রাখা দরকার যে, এমন ধারণা করার সংগত কারণ থাকতে হবে। যেমন ধরুন, কোনো নেক ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক পরামর্শ দেয় অথবা নিজের বার বার অভিজ্ঞতা হয়েছে অথবা প্রবল সম্ভাবনা থাকে। নিছক অমূলক ধারণার ভিত্তিতে রোযা না রাখা জায়েয নয়।
২. যদি কারো নিজের নিছক এ ধারণা হয় যে সম্ভবত রোযা রাখলে রোগ সৃষ্টি হবে অথবা বেড়ে যাবে যার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, অথবা কোনো অভিজ্ঞ ডাক্তার বা হেকীমের পরামর্শ নেয়া হয়নি এবং রোযা রাখা হলো না, তাহলে গোনাহগার হবে এবং তার কাফফারাও দিতে হবে।
৩. কোনো বেদীন চিকিৎসক, যে শরীয়াতের মর্যাদা ও গুরুত্ব অনুভব করে না, তার পরামর্শ অনুযায়ী চলাও ঠিক নয়।
৩। গর্ভ
১. যদি কোনো স্ত্রীলোকের প্রবল ধারণা হয় যে, রোযা রাখলে তার পেটের সন্তানের ক্ষতি হবে অথবা স্বয়ং তার ক্ষতি হবে, তাহলে তার জন্যে রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
২. যদি রোযার নিয়ত করার পর কোনো মেয়ে মানুষ জানতে পারে যে, তার গর্ভসঞ্চার হয়েছে এবং তার সুস্পষ্ট ধারণা হয় যে, রোযা রাখলে তার ক্ষতি হবে তাহলে তার জন্যে এ অনুমতি আছে যে, সে রোযা ভেঙে ফেলবে। তারপর কাযা করবে। তার কাফফারা দিতে হবে না।
৪। স্তন্যদান
১. রোযা রেখে স্তন্যদান যদি প্রবল ধারণা হয় যে, প্রসূতির ভয়ানক ক্ষতি হবে, যেমন দুধ শুকিয়ে যাবে এবং বাচ্চা ক্ষুধায় ছটফট করবে অথবা তার জীবনেই আশংকা হয়, তাহলে তার রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
২. যদি পারিশ্রমিক দিয়ে দুধ খাওয়ানো যেতে পারে এবং বাচ্চাও যদি অন্য কারো দুধ খায়, তাহলে রোযা না রাখার দুরস্ত নয়, আর যদি বাচ্চা অন্য কারো দুধ খেতেই চায় না, তাহলে রোযা না রাখার জায়েয আছে।
৩. পারিশ্রমিক নিয়ে যে দুধ খাওয়ায়, তারও যদি এ প্রবল ধারণা হয় যে, রোযা রাখার কারণে তার বাচ্চা অথবা স্বয়ং তার ক্ষতি হবে, তাহলে সে রোযা ছেড়ে দিতে পারে।
৪. কোনো মেয়ে মানুষ ঠিক রমযানের দিনেই দুধ খাওয়ানোর কাজ শুরু করলো। ঐ দিন যদি সে রোযার নিয়তও করে থাকে তবুও তার রোযা না রাখা জায়েজ। রোযা ভাঙ্গার জন্য কাযা করতে হবে, কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
৫। ক্ষুধা-তৃষ্ণার তীব্রতা
কোনো ব্যক্তি রোগী তো নয়, কিন্তু রোগের কারণে এতোটা দুর্বল হয়েছে যে, রোযা রাখলে পুনরায় অসুস্থ হওয়ার প্রবল আশংকা রয়েছে, তাহলে তার জন্যে রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
৬। দুর্বলতা ও বার্ধক্য
কোনো ব্যক্তি বার্ধক্যের কারণে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার জন্যে অনুমতি আছে যে,সে রোযা রাখবে না। আর এমন ব্যক্তির সম্পর্কে এ আশা তো করা যায় না যে, সুস্থ হয়ে কাযা করবে। এজন্যে তার ওয়াজিব যে, সে রোযার ফিদিয়া দেবে তখনই দিক বা পরে। ফিদিয়ার পরিমাণ সাদকায়ে ফিতরের সমান।
৭। জীবনের আশংকা
যদি কঠোর পরিশ্রমের কারণে জীবনের আশংকা হয় অথবা কেউ যদি এ বলে বাধ্য করে যে, রোযা রাখলে তাকে মেরে ফেলবে, অথবা নিষ্ঠুরভাবে মারপিট করবে অথবা কোনো অঙ্গ কেটে দেবে, তাহলে এমন ব্যক্তির জন্যেও রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
৮। জিহাদ
দীনের দুশমনের বিরুদ্ধে জিহাদের নিয়ত আছে এবং এ ধারণা হয় যে, রোযা রাখলে দুর্বল হয়ে পড়বে তাহলে রোযা না রাখার  অনুমতি আছে।
*কার্যত জেহাদ চলছে তখনও রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
*কার্যত জেহাদ চলছে না, কিন্তু শীঘ্রই সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে, এমন অবস্থায়ও অনুমতি আছে।
*রোযা রাখার পর যদি এমন অবস্থার সম্মুখীন হয় তাহলেও রোযা ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি আছে। তার জন্যে কাফফারা দিতে হবে না।
৯। হুশ না থাকা
কেউ যদি বেহুশ হয়ে যায় এবং কয়েকদিন ধরে বেহুশ থাকে, এ অবস্থায় যেসব রোযা রাখা হবে তার কাযা ওয়াজিব হবে। তবে যে রাতে সে বেহুশ হয়েছে তার পরদিন যদি তার দ্বারা এমন কোনো কাজ না হয় যার দ্বারা রোযা নষ্ট হয় এবং এটাও যদি জানা যায় যে, সে রোযার নিয়ত করেছে বা করেনি, তাহলে সেদিন তার রোযা ধরা হবে এবং তার কাযা করতে হবে না। অবশ্যই পরের দিনগুলোর কাযা করতে হবে।
১০। মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়া
যদি কেউ পাগল হয়ে পড়ে এবং রোযা রাখতে না পারে তাহলে তার দুটি উপায় রয়েছেঃ
এক – কোনো সময়েই পাগলামি ভালো হচ্ছে না। এমন অবস্থায় রোযা বিলকুল মাফ-কাযা ফিদিয়া কিছুই দরকার নেই।
দুই – কোনো সময়ে পাগলামি ভালো হয়ে যাচ্ছে তাহলে এ অবস্থায় কাযা করতে হবে।