ইমামতির বর্ণনা
ইমাম নির্বাচন
নামাযের ইমামতি একটি বিরাট দ্বীনী মর্যাদ
এবং দায়িত্ব। এ রসূলের উত্তরাধিকারীর মর্যাদা। এ জন্যে খুব সাবধানতার সাথে
ইমাম নির্বাচন করতে হবে। এমন ব্যক্তির উপর এ দায়িত্ব ন্যস্ত করতে হবে যিনি
সামগ্রিকভাবে সকল নামাযীর চেয়ে অধিক উত্তম ও মর্যাদাসম্পন্ন, যিনি এলেম ও
পরহেজগারী, ত্যাগ ও কুরবানি এবং দ্বীনের ব্যাপারে দুরদর্শিতা ও সুক্ষ্ম
বিচর বিবেচনায় সকলের উর্ধে। যিনি মসজিদের মধ্যে মুসলমানদের ইমামও হবেন এবং
ব্যবহারিক জীবনেও তাদের পথ প্রদর্শক ও নেতা হবেন।
মৃত্যু শয্যা থেকে নবী পাক (স) যখন মসজিদে
যেতে অপরাগ হন, তখন তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে হযরত আবু বকর সিদ্দীক
(রা)কে তিনি মনোনীত করেন যিনি সামগ্রিকভাবে গোটা উম্মতের মধ্যে সকলের
শ্রেষ্ঠ ছিলেন। ঘরের মহিলাগণ দু’বার আপাত্তি করে বলেন যে, হযরত আবু বকর
সিদ্দীক অত্যন্ত নরমমনা লোক বলে নিজেকে সামলাতে পারবেন না। তথাপি নবী (স)
তিন বার বললেন, আবু বকর (রা) কে নামায পড়িয়ে দিতে বল। তারপর হযরত আবু বকর
(রা) নামায পড়ান।
প্রকৃতপক্ষে নামায দ্বীনী যিন্দেগীর উৎস।
নামাযের মধ্যে আল্লাহর দরবারে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারী তিনিই
যিনি এ মর্যাদর উপযুক্ত এবং সামগ্রিকভাবে দ্বীনি গুণাবলীতে সকলের চেয়ে অধিক
মর্যাদাশীল, হযরত আবু মাসউদ (রা) বলেন নবী (স) বলেছেন-
মুসলমানদের ইমাম ঐ ব্যক্তি হতে পারেন যিনি
সকলের চেয়ে অধিক কুরআন পাঠকারী। যদি এ গুণে সকলেই সমান হয়, তাহলে যিনি
সকরের চেয়ে সুন্নাত ও শরীয়তের জ্ঞান রাখেন। যদি এ ব্যপারেও সকলে সমান হন
তাহলে যিনি সকলের আগে হিযরত করেছেন। যদি এ ব্যাপারেও সকলে সমান হলে যার বয়স
সবচেয়ে বেশী- (মুসলিম)।
অধিত কুরআন পাঠকারী সেই ব্যক্তিকে বলে যার
কুরআনের সাথে বিশেষ মহব্বত ও সম্পর্ক হবে। যিনি বেশী বেশী তেলাওয়াত করেন
এবং কুরআনের হাফেয, ভালবাবে কুরআন পড়তে পারেন। যিনি কুরআন নিয়ে চিন্তা
গবেষণা করতে পারেন এবং যিনি কুরআনের দাওয়াত ও হিকমত উপলব্ধি করেছেন। এ গুণ
যদি সকলের মধে্য পাওয়া যায় তাহলে এমন ব্যক্তিকে ইমাম বানাতে হবে যিনি
সুন্নাত ও শরীয়ত সম্পর্কে বেশী অভিজ্ঞ এবং দ্বীনের আহকাম ও মাসয়ালা-মাসায়েল
সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞ।
হিজরতে অগ্রগামী হওয়ার অর্থ এমন ব্যক্তি
যিনি দ্বীনের পথে অগ্রগামী এবং ত্যাগ ও কুরবানীতে সকলের সেরা। এসব গুণাবলী
সকলের মধ্যে সমানভাবে থাকলে যিনি সকলের চেয়ে বেশী তাঁকেই প্রাধান্য দিতে
হবে।
ইমামতির মাসয়ালা
১. কোন মহিলার জন্যে জায়য নয় যে, তিনি
পুরুষের ইমামতি করবেন। হযরত জাবের (রা) বলেন, কোন মহিলা যেন কোন পুরুষের
ইমামতি না করে একথা নবী (স) বলেছেন। -(ইবনে মাজাহ)
২. যদি মহিলাদের ইমামতি মহিলা করেন তাহলে কাতারের মাঝখানে দাঁড়াতে হবে আগে নয়।
৩. ইমামের জন্যে প্রয়োজন যে, মুক্তাদীগণের
প্রয়োজন এবং অসুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে কুরআন পড়বেন এবং রুকূ সিজদা দীর্ঘ
করবেন না। মুক্তাদীদের প্রতি খেয়াল না করে লম্বা লম্বা সূরা পড়া এবং লম্বা
লম্বা রুকু সিজদা করা মাকরুহ তাহরীমি।
নবী (স) বলেন-
তোমাদের কেউ যদি নামায পড়ায় তো তার উচিত
হালকা নামায পড়াবে। এ জন্যে যে, মুক্তাদীদের মধ্যে অসুস্থও থাকে, দুর্বল
লোকও থাকে এবং বুড়ো লোকও থাকে। তবে যদি একা নামায পড়ে তাহলে যতো লম্বা খুশী
পড়তে পারে। -(বুখকারী, মুসলিম)
হযরত মাআয (রা) এশার নামাযে লম্বা সূরা
পড়তেন। তারপর নবী (স)-এর নিকট এ নিয়ে অভিযোগ করা হলো। নবী (স) হযরত মাআযের
উপর খুব রাগ করে বলেলেন-
মাআয তুমি কি মানুষকে ফেতনার মধ্যে জড়িত করতে চাও?
তারপর তিনি তাঁকে বলেন- (আরবী************) এ ধরনের সূরাগুলো পড়বে। -(বুখারী, মুসলিম)
নবী (স) স্বয়ং নিজের বেলায় বলেন,
আমি নামায পড়াতে শুরু করলে মনে করি যে,
নামায লম্বা পড়ি। কিন্তু আমার কানে বাচ্চাদের কান্নার আওয়ায পৌছলে নামায
সংক্ষেপ করি। এ জন্যে যে, আমি জানি বাচ্চা কাঁদলে মায়ের মনে কত কষ্ট হয়।
-(বুখারী)
৪. ইমামের তাকবীর মুক্তাদী পর্যন্ত
পৌঁছাবার জন্যে মাঝখানে মুকাব্বের ঠিক করে দেয়া জায়েয, যে ইমামের তাকবীর
শুনে তাকবীর বলতে এবং তার তাকবীর শুনে মুক্তাদীগণ সিজদা ও নামাযের অন্যন্য
আরকান আদায় করবে।
৫. ফাসেক, বদকার এবং বেদআতা লোককে ইমাম
বানানো মাকরূহ তাহরীমি। তবে কোন সময় এমন লোক ছাড়া যদি আর কাউকে না পাওয়া
যায়, তাহলে মাকরূহ হবে না।
৬. যে কোন ফেকাহর অনুসারী লোককে ইমাম
বানানো এবং তার পেছনে নামায জায়েয। ইমামের নামায যদি তার ফেকাহর দিক দিযে
সহীহ হয় তাহলে সকল মুক্তাদীর নামায সহীহ হবে তারা যে কোন ফেকাহের অনুসরী
হোক না কেন।
৭. যদি কোন ব্যক্তি মাগরেব, এশা অথবা
ফজরের ফরয নামায একাকী পড়ে এবং কেউ এসে তার মুক্তাদী হয় তাহলে ঐ ইমামের
জোরে জোরে কেরায়াত করা ওয়াজেব হবে। যদি সূরা ফাতেহা অথবা তার পরের সূরা সে
পড়ে থাকে তথাপি উচ্চ শব্দে পুনরায় তা পড়তে হবে। কারণ এসব নামাযের ইমামের
জন্যে উচ্চ শব্দে কেরায়াত করা ওয়াজেব। অবশ্যি সূরা ফাতেহা দুবার পড়ার জন্যে
সুহু সিজদা করা ওয়াজেব হবে।
৮. এমন কোন ব্যক্তিকে ইমাম বানানো মাকরূহ যার রোগের কারণে সাধারণত মানুষ ঘৃণা বোধ করে। যেমন কুষ্ঠ বা এ জাতীয় কোন রোগ হ।ে
৯. এমন কোন সুশ্রী বালককে ইমাম বালককে ইমাম বানানো মাকরূহ যার দাড়ি উঠেনি।
১০. যে ব্যক্তির ইমামতিতে মুক্তাদী সন্তুষ্ট নয় তার ইমামতি করা উচিত নয়। কওমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইমামতি করা মাকরু তাহরীমি।
১১. যদি কখনো কারো বাড়ীতে নামায পড়া হয়
তাহলে বাড়ীর মালিকই ইমামতির হকদার। তবে তিনি নিজে কাউকে আগে বাড়িযে দিলে
তাতে দোষ নেই। তেমনি কোন মসজিদে নির্ধারিত ইমাম থাকলে তিনিই ইমামতির হকদার।
তবে তিনি স্বয়ং অন্য কাউকে ইমাম বানালে দোষ হবে না।
১২. ইমামের নামায কোন কারণে নষ্ট হলে সকল
নামাযীর নামায নষ্ট হয়ে যাবে, নামায নষ্ট হওয়ার বিষয় নামাযের মধ্যেই জানতে
পারা যাক অথবা নামাযের পর। নামাযের পর জানতে পারা গেলে ইমামের জন্যে জরুরী
হবে সকল মুক্তাদীকে তা জানিয়ে দেয়া যেন তারা পুনরায় নামায পড়তে পারে।
১৩. ইমামের দায়িত্ব এই যে, তিনি
মুক্তাদীগণকে কাতার সোজা ও বরাবর করার জন্যে বলবেন যে, তারা যেন এসে অপরের
সাথে মিলে গিয়ে দাঁড়ায় এবং দু’জনের মাঝে কোন ফাঁক না থাকে।
১৪. পুরুষ শুধু মেয়েদের ইমামতিও করতে
পারে- এ অবস্থায় যে, মেয়েদের মধ্যে অবশ্যই কেউ তার মুহাররম মেয়েলোক হতে হবে
অথবা ঐসব মেয়েলোক ছাড়া একজন পুরুষ জামায়াতে শরীক হতে হবে।
মেশিনের সাহয্যে ইমামতি
টেপরেকর্ডে কোন ইমামের আওয়ায রেকর্ড করে
অথবা গ্রামোফোনের সাহায্যে জামায়াতে নামযের রেকর্ড তৈরী করে তার এক্তেদায়
জামায়াতে নামায পড়া জায়েয হবে না। এমনি ভাবে যদি কেউ রেডিওর সাহায্রে দূর
দূরান্তর থেকে নামাযের ইমামতি করে তাহলে তার একতেদায় নামায জায়েয হবে না। [
আল্লামা মওদূদী (র) এক প্রশ্নের জবাবে এ প্রসংগে তার অভিমত ব্যক্ত করেছেন
তা নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো:
প্রশ্ন : রেডিও এমন একটি প্রচার মাধ্যম যা
এক ব্যক্তির কথা ও শব্দ হাযার হাযার মাইল দূর পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়। এভঅবে
গ্রামোফোনের রেকর্ডেও মানুষের আওয়ায সংরক্ষণ করা যায় তারপর আবার বিশেষ
পদ্ধতিতে তার পুনরাবৃত্তি করা যায়। এখন প্রশ্ন এই যে, যদি কোন ইমাম হাযার
হাযার মাইল দূর থেকে রেডিওর সাহায্যে ইমামতি করে অথবা কোন গ্রামোফোন
রেকর্ডে কোন আওয়ায সংরক্ষণ করে তা আবার পুনর্বার বাজানো যায়। তাহলে এসব
যান্ত্রিক আওয়াজের এক্তেদা করে নামাযের জামায়াত করা কি জায়েয হবে?
জবাব: রেডিওতে এক ব্যক্তির ইমামতীতে দূর
দূরান্তের নামায পড়া অথবা কোন জামায়াতের নামায পড়া নীতিগতভাবেই সহীহ নয়।
তার কারণগুলো যদি তলিয়ে দেখেন তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
ইমামের কাজ শুধু নামায পড়ানো নয়। বরঞ্চ
তিনি এক দিক দিয়ে স্থানীয় জামায়াতের নেতা। তাঁর কাজ হচ্ছে এই যে, তিনি
লোকের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করবেন, তাদের চরিত্র, আচার-ব্যবহার
এবং স্থানীয় অবস্থার প্রতি নযর রাখবেন। তারপর অবস্থা ও প্রয়োজনবোধে তাঁর
খোতবার মাধ্যমে অথবা অন্য কোন সুযোগে তাদের সংশোধনের ও হেদায়েত দানের
দায়িত্ব পালন করবেন। এটা অবশ্যি অন্য কথা যে, অন্যান্য ব্যাপারের সাথে এ
ধরনের প্রতিষ্ঠানেরও অবনতি ঘটেছে। কিন্তু সক অবস্থায় মূল প্রতিষ্ঠানকে তার
প্রকৃত রূপে কায়েম রাখা প্রয়োজন। যদি রেডিওতে নামায শুরু হয় অথবা
গ্রামোফোনের মাধ্যমে ইমামতি ও খোতবা দেয়ার কাজ নেয়া যেতে থাকে, তাহলে
ইমামতির প্রকৃত প্রাণশক্তিই চিরদিনের জন্যে নষ্ট হয়ে যাবে।
নামায অন্যান্য ধর্মের মতো নিছক ‘পূজা’
নয়। অতএব তার ইমামতী তেকে ব্যক্তিত্বকে দূরীভূত করে দেয়া এবং তার মধ্যে
‘যান্ত্রিকতা’ সৃষ্টি করা প্রকৃতপক্ষে তার মর্যাদা ও মূল্য নষ্ট করে দেয়া।
তা ছাড়াও যদি কোন কেন্দ্রী স্থান থেকে কোন
ব্যক্তি রেডিও অথবা গ্রামোফোনের সাহায্যে ইমামতি ও খোতবা দেয়ার কাজ করে
এবং স্থানীয় ইমমতি খতম করে দেয়, তাহলে এটা এমন একটা কৃত্রিম সমরূপতা
(Uniformity) হবে যা ইসলামের গণতান্ত্রিক প্রাণশক্তিকে (Spirit) বিনষ্ট করে
দেবে এবং একনায়কত্বের পথ প্রশস্ত করবে। এ জিনিস ঐসব ব্যবস্থাপনার
মেযাজ-প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রাখে, যার দ্বারা লোককে একই নেতার
সার্বিকভাবে অনুগত বানাবার নীতি অবলম্বন করা হয়। যেমন, ফ্যাসিজম এবং
কমিউনিজম। কিন্তু ইসলাম একজন কেন্দ্রীয় ইমাম অথবা আমীরে কর্তৃত্বকে এতোটা
সর্বব্যাপী বানাতে চায় না যাতে করে স্থানীয় লোকের কর্তৃত্ব একেবারে তার
হাতে চলে যায় এবং স্বয়ং তাদের মধ্যে নিজের স্বার্থ সম্পর্কে চিন্তা করার,
নিজেদের বিষয়াদি বুঝবার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার যোগ্যতার বিকাশ হতে পারবে
না। নবী (স)-এর যুগ ছিল সর্বোত্তম যুগ (খায়রুল করুন)। তখন ইমাম নিছক
পুজারীর ভূমিকা পালন করতেন না যার কাজ শুধু কিছু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন
করা। বরঞ্চ তাঁরা স্থানীয় নেতা হিসেবে নিয়োজিত হতেন। তাঁদের কাজ ছিল
তা’লীম ও তাযকিয়া এবং সমাজ ও তামাদ্দুনের সংস্কার-সংশোধন করা। স্থানীয়
জামায়াতগুলো এ উদ্দেশ্যে তৈরী করতে হতো যে বড় ও কেন্দ্রী জামায়াতের কল্যাণ
ও উন্নয়নে নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী তারা অংশগ্রহণ করবে। এ ধরনের মহান ও
গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য রেডিও অথবা গ্রামোফোনের দ্বারা কি করে পূর্ণ হতে
পারে? যন্ত্র মানুষের বিকল্প কিছুতেই হতে পারে না। বরঞ্চ সহায়ক হতে পারে,
এসব কারণে আমি মনে করি যান্ত্রিক ইমামতি’ ইসলামী প্রাণশক্তির একেবারে
পরিপন্থী। -(রাসালে ও মাসায়েল, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৫৬-আবুল আ’লা মওদূদী)।]
মুক্তাদীর হুকুম
১. মুক্তাদীর নামায সহী হওয়ার শর্ত এই যে, তাকেও নিয়ত করতে হবে এই বলে, “আমি এ ইমামের একতেদায় নামায পড়ছি।”
নিয়তের জন্যে এ জরুরী নয় যে, সে মুখের দ্বারা তা প্রকাশ করবে। মনে মনে ধারণা করাই যথেষ্ট।
২. মুক্তাদীর জন্যে জরুরী এই যে, সে ইমামের পেছনে দাঁড়াবে। মুক্তাদী একজন হলে ইমামের বরাবর দাঁড়াবে, আগে দাঁড়ালে নামায হবে না।
এতটুকুতেই আগে দাঁড়ানো হবে যদি তার পা ইমামের পা থেকে এগিয়ে যায়।
৩. নামাযের যাবতীয় ফরয ও ওয়াজেবগুলোতে
ইমামের অনুসরণ করা মুক্তাদীর জন্যে ওয়াজেব। তবে নামাযের সুন্নাতগুলোতে
ইমামের মতো করা জরুরী নয়। অতএব এমাম যদি শাফেয়ী মতালম্বী হন এবং রুকুতে
যেতে ও উঠতে ‘রফে’ ইয়াদাইন করেন, তাহলে হানাফী হানাফী মতাবলম্বী মুক্তাদীর এ
সুন্নাতে ইমামের অনুসরণ ওয়াজেব হবে না। এমনিভাবে ফজরের নামাযের যদি দোয়া
কুনুত পড়েন, তাহলে হানাফী মুক্তাদীর জন্যে তা পড়া জরুরী নয়। তবে বেতের
নামাযের শাফয়ী ইমাম রুকুর পরে দোয়াকুনুত পড়লে হানাফী মুক্তাদীর জন্যেও
রুকুর পরে দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজেব হবে। এ জন্যে যে, বেতের নামাযে কুনুত পড়া
ওয়াজেব।
৪. জামায়াতে একজন মুক্তাদী হলে এবং সে
বালেগ অথবা নামালেগ ছেলে হোক, তাকে ইমামের ডান দিকে বরাবর অথবা একটু পেছনে
হটে দাঁড়াতে হবে। ইমামের পেছনে অথবা বামে দাঁড়ালে মাকরুহ হবে। অবশ্যি
মুক্তাদী কোন মহিলা হলে তাকে সকল অবস্থায় পেছনে দাঁড়াতে হবে।
৫. প্রথম কাতারে জায়গা থাকতে দ্বিতীয়
কাতারে দাঁড়ানো মাকরূহ হবে। আর প্রথম কাতারে যদি জায়গা না থাকে তাহলে
দ্বিতীয় কাতারে একা দাঁড়ানো মাকরুহ হবে [হযরত ওয়াবেসা বিন মা’বাদ (রা)
বলেন, একবার নবী (স) দেখলেন যে, এক ব্যক্তি কাতারের পেছনে একাই দাঁড়িযে
নামায পড়ছে। তখন নবী (স) তাকে পুনরায় নামায পড়তে বললেন- (তরমিযী, আবু
দাউদ)।] এমন অবস্থায় মুক্তাদীর উচিত হবে আগের কাতার থেকে এমন এক ব্যক্তিকে
পেছনে টেনে আনা- যার সম্পর্কে এ বিশ্বাস থাকে যে, সে খারাপ মনে করবে না। আর
যদি আগের কাতারে এ ধরনের কোন লোক পাওয়া না যায়, তাহলে অগত্যা একাই
দাঁড়াবে।
৬. মুক্তাদীর জন্যে জরুরী যে, সে কেরায়াত
ব্যতীত সকল আরকানে ইমামের সাথে শরীক থাকবে। যদি কোন রুকনে শরীক না হয় তাহলে
নামায দুরস্ত হবে না। যেমন, ইমাম রুকুতে গেলেন এবং তারপর রুকু থেকে
উঠলেন। কিন্তু মুক্তাদী রুকু করলো না, অথবা ইমামের রুকু থেকে উঠার পর রুকু
করলো, তাহলে মুক্তাদীর নামায হবে না। তবে যদি মুক্তিাদী কিচু বিলম্বে
রুকুতে গেল অথবা একটু আগে গেল এবং তারপর ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হলো,
তাহলে নামায সহীহ হবে।
মুক্তাদীর প্রকার।
জামায়াতে শরীক হওয়ার দিক দিয়ে মুক্তাদী তিন প্রকারের, যথা- মুদরেক, মসবুক, লাহেক।
মুদরেক
যে নামাযী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বরাবর ইমামের সাথে নামাযে শরীক রইল তাকে মুদরেক বলে।
মসবুক
এক বা একাধিক রাকয়াত হয়ে যাওয়ার পর যে নামাযী জামায়াতে শরীক হয় তাকে মসবুক বলে।
লাহেক
লাহেক এমন নামাযীকে বলে, যে জামায়াতে শরীক
হলো বটে, কিন্তু শরীক হওয়ার পর এক বা একাধিক রাকয়াত নষ্ট হয়ে গেল-অযু
যাওয়ার কারণ হোক, ঘুমিয়ে পড়ার কারণে হোক, পায়খানার জন্যে জামায়াতে শরীক
থাকতে পারলো না অথবা কোন অসাধারণ কারণ বশত রুকু সিজদা করতে পারলো না।
মসবুকের মাসয়ালা
মসবুক জামায়াতে শরীক হয়ে প্রথমে ইমামের
সাথে ঐসব বাকী নামায আদায় করবে যা সে ইমামের সাথে পাবে। তারপর ইমাম নামায
শেষ করে সালাম ফিরবে, তখন মসবুক সালাম ফিরাবে না বরঞ্চ তার ছুটে যাওয়া
রাকয়াতগুলো আদায় করার জন্যে উঠে দাঁড়াবে। তারপর ছুটে যাওয়া রাকায়াতগুলো
এককী নামাযীর ন্যায় আদায় করবে। অর্থাৎ কেরায়াতও করবে এবং ভুল হলে সিজদা সহও
করবে। এমন ক্রমানুসারে নামায পড়বে যে, প্রথমে কেরায়াত ওয়ালা রাকয়াত সে
ইমামের সহিত পেয়েছে তার হিসাবে কা’দায় বসবে। যেমন ধরুন, যোহরের জামায়াতে এক
ব্যক্তি তিন রাকয়াত হয়ে যাওয়ার পর শরীক হলে। তাহলে সে ইমামের সাথে এক
রাকয়াত পড়ার পর উঠে দাঁড়াবে এবং ছুটে যাওয়া তিন রাকয়াত এমনভাবে পড়বে যে,
প্রথম রাকয়াতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা মিলিয়ৈ পড়বে এবং কা’দা উলা (প্রথম
বৈঠক) করবে। এ জন্যে এ রাকায়াত তারপরও পুরা নামাযের হিসাবে দ্বিতীয় রাকায়।
তারপর দ্বিতীয় রাকায়াতেও সূরা ফাতেহার সাথে সূরা মিলিয়ে পড়বে এবং তারপর
কা’দা করবে না। এজন্যে যে এ তার প্রাপ্ত রাকয়াতগুলোর মধ্যে তৃতীয় রাকয়াত
হচ্ছে। তারপর তৃতীয় রাকয়াতে সূরা ফাতেহার সাথে কোন সূরা পড়বে না। কা’দায়ে
আখীরায় (শেষ বৈঠক) বসে নামায শেষ করে সালাম ফিরাবে।
লাহেকের মাসয়ালা
লাহেক প্রথমে ঐ রাকয়াতগুলো আদায় করবে যা
ইমামের সাথে পড়তে নষ্ট হয়েছে এবং এ রাকয়াতগুলো মুক্তাদীর মতো আদায় করবে।
অর্থাৎ কেরায়াত করবে না, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে। যদি কোন এমন ভুল হয় যার
জন্যে সহু সিজদা ওয়াজেব হয় তাহলে তাও করবে। তার এ ছুটে যাওয়া নামাযগুলো
আদায় করার পর জামায়াতে শরীক হবে এবং বাকী নামায ইমামের সাথ পুরা করবে। আর
ইত্যবসরে ইমাম যদি নামায শেষ করেন, তাহলে লাহেক বাকী নামায আলাদা শেষ করবে।
যেমন ধরুন এক ব্যক্তি প্রথম থেকে ইমামের সাথে জামায়াতে শরীক আছে। তারপর এক
রাকয়াত পর তার অযু নষ্ট হয়ে গেল। তারপরও সে চুপচাপ গিয়ে অযু করলো। এর
মধ্যে ইমাম আর এক রাকায়াত পড়ে ফেলেছেন। তাহলে এ সময়ে লাহেক তার ছুটে যাওয়া
রাকয়াতগুলো এমনভাবে আদায় করবে যেমন মুক্তাদী করে। অর্তাৎ কেরায়াত প্রভৃতি
পড়বে না। এর মধ্যে যদি ইমাম জামায়াত শেষ করে ফেলেন তাহলে লাহেক তার বাকী
রাকয়াতগুলো আলাদা পড়ে নেবে।
নামাযে কেরায়াতের মাসয়ালা
১. কুরআন মজীদ সহী পড়া ওয়াজেব। সহীহ পড়ার
অর্থঞ এই যে, প্রত্যেক অক্ষর ঠিক ঠিক উচ্চারণ করতে হবে অর্থাৎ (******)
প্রভৃতি অক্ষরগুলো উচ্চারণে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়। চেষ্টা করেও যদি কোন
অক্ষর সহীহ উচ্চারণ না হয় তাহলে অপরাগই থাকতে হবে। কিন্তু বেপরোয়া হয়ে ভুল
পড়া এবং সহীহ পড়ার অভ্যাস না করা বড়ো গুনাহ।
২. পরয নামাযগুলোর প্রথম দু’রাকায়াতের
সূরা ফাতেহার পর কোন সূরা অথবা বড়ো এক আয়অত অথবা ছোট তিন আয়াত পড়া ওয়াজেব।
বেতর, সুননাত ও নফল নামাযের সব রাকয়াতে সূরা ফাতেহার পর কোন সূরা অথবা এক
বড়ো আয়াত অথবা ছোটো আয়াত পড়া ওয়াজেব। ফরয নামাযের তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকয়াতে
সূরা ফাতেহার পর কোন সূরা পড়া চলবে না। শুধু ফাতেহা পড়ে রুকুতে যাবে।
৩. ফরয নামাযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকয়াত
বাদে সকল নামাযের প্রত্যেক রাকয়াতে সূরা ফাতেহা পড়া ওয়াজেব তা ফরয হোক,
ওয়াবেজ, সুন্নাত অথবা নফল হোক।
৪. প্রথমে সূরা ফাতেহা এবং তারপর কোন সূরা
অথবা তিন ছোটো আয়াত পড়া ওয়াজেব। যদি কেউ প্রথমে অন্য সূরা পড়ে এবং পরে
সূরা ফাতেহা তাহলে ওয়াজেব আদায় হবে না।
৫. ফজর, মাগরেব, এশা, জুমা এবং দুঈদের
নামায জাহরী। অর্থাৎ মাগরেব এবং এশার প্রথম দু’রাকায়াতের এবং বাকী সকল
নামায ইমামের উচ্চস্বরে কেরায়াত করা ওয়াজেব। যদি ভুলে ইমাম আস্তে (কেরায়াত
করে তাহলে সিজদা সহু করার দরকার হবে। আর ইচ্ছা করে আস্তে পড়লে নামায
দ্বিতীয়বার পড়তে হবে।
৬. যোহর-আসর নামায ‘সিররী’ অর্থাৎ এ
দু’নামাযে ইমাম এবং মুক্তাদির আস্তে আস্তে কেরায়াত করা ওয়াজেব। বেতরের
নামাযেওর একাকী পাঠকারীর জন্যে আস্তে কেরায়াত ওয়াজেব।
৭. যদি কেউ ফজর, মাগরেব ও এশা একা পড়ে তার জন্যে উচ্চস্বরে কেরায়াত করা ভালো।
৮. ইমাম ফজর, মাগরেব ও এশার নামায কাযা পড়াচ্ছেন। তার জন্যেও উচ্চস্বরে কেরায়াত ওয়াজেব।
৯. যে সূরা প্রথম রাকয়াতে পড়া হয়েছে তা আবার দ্বিতীয় রাকয়াতে পড়া জায়েয। কিন্তু এমন করা ভালো নয়।
১০. সিররী নামাযেও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে কেরায়াত করা জরুরী। খেয়ল করে মুখ বন্ধ করে মনে মনে পড়লে হবে না।
১১. কেরায়াত খতম হওয়ার পূর্বে রুকুর জন্যে ঝুঁকে পড়া এবং ঝুঁকে পড়া অবস্থায় কেরায়াত করা মাকরুহ।
১২. ফরয নামাযে ইচ্ছা করে কুরআনের ক্রমিক
ধারার বিপরীত কেরায়াত করা মাকরুহ। যেমন, কেউ ‘আল কাফেরুন’ প্রথম রাকয়াতে
পড়লো এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে ‘আাম তারা’। ভুলে পড়লে মাকরুহ হবে না। নফল নামাযে
ইচ্ছা করেও কেই ক্রমিক ধারা অবলম্বন না করলেও মাকরূহ হবে না।
১৩. একই সূরায় কয়েক আয়াত এক স্থান থেকে
পড়া এবং দু’আয়াতের কম ছেড়ে দ্বিতীয় রাকয়াতে সামনে থেকে পড়া মাকরুহ। এভাবে
যদি কেউ দ’সূরা এভাবে পড়ে যে, মাঝখানে এমন এক সূরা যার মধ্যে তিন আয়াত আছে
তা ছেড়ে দিয়ে সামনের সূরা পড়ে তাহলে মাকরূহ হবে। যেমন প্রথম রাকয়াতে ‘সূরা
লাহাব’ পড়লো এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে ‘আল ফালাক’ পড়লো মাঝখানে ‘কুলহু আল্লাহ
ছেড়ে দিল, তাহলে মাকরুহ হবে। কিন্তু শুধু ফরয নামাযে এরূপ করা মাকরূহ –নফল
নামাযে নয়।
১৪. এক রাকয়অতে দু’সূরা এমনভাবে পড়া যে,
মাঝখানে এক বা একাধিক আয়াত ছেড়ে দেয়া হলো তাহলে মাকরূহ। কিন্তু এটাও ফরয
নামাযে মাকরূহ হবে- নফলে নয়।
১৫. যদি কারো কুরআানেসর কোন আয়াত মনে না
থাকে। যেমন কেউ নতুন মুসলমান হয়েছে এবং সবে মাত্র নামায শুরু করেছে এবং তার
কুরআনের কোন সূরা বা আয়াত মুখস্ত হয়নি। তাহলে যতা তাড়াতাড়ি হোক তার মুখস্ত
করা উচিত। এ সময় কেরায়াতের জায়গায় ‘সুবহানাল্লাহ’ অথবা ‘আলহামদুল্লিাহ’
প্রভৃতি পড়বে। কিন্তু কুরআনের সূরা –আয়াত মুখস্ত করতে অবহেলা করলে
গুনাহগার হবে।
নামাযের মসনূন কেরায়াত
১. সফর অবস্থায় সূরা ফাতেহার পর যে কোন
সূরা পড়া যায় কিন্তু সফর ব্যতী বাড়ীতে অবস্থানকালে ইমাম একাকী নামাযী উভযের
জন্যে নামাযে কিচু বিশেষ পরিমাণে সূরা পড়া সুন্নাত।
** ফযর এবং যোহার নামাযে সূরা ‘হুজরাত’
থেকে সূরা ‘বুরুজ’ পর্যন্ত সূরাগুলোর মধ্য থেকে পড়া সুন্নাত। এ সূরাগুলোকে
‘তোয়অলে মুফাসসাল’ (*****) বলে।
আসর এবং এশার নামাযে সূরা ‘তারেক’ থেকে সূরা বাইয়্যেনাহ’ পর্যন্ত সূরাগুলোর মধ্যে পড়া মসনূন। এগুলোকে আওসাতে মুফাসসাল (*******) বলে।
** মাগরেবের নামাযে সূরা ‘যিলযাল’ থেকে
সূরা ‘নাস’ পর্যন্ত সূরাগুলোর মধ্য থেকে পড়া মসনূন। এগুলোকে বল ‘কেসারে
মুফাসসাল।’ )(********)
২. কোন সূরা নিজের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট
করে নেয়া শরীয়তের খেলাপ। অবশ্রি নবী (স) যেসব নামাযে যেসব সূরা অধিকাংশ
সময়ে পড়তেন সেসব নামাযে সেসব সূরা মসনূন।
** ফজরের সুন্নাতে নবী (স) অধিকাংশ সময়ে প্রথম রাকয়াতে সূরা ‘কাফেলূণ” এবং দ্বিতীয় রাকয়অতে সূরা এখলাস’ পড়তেন।
**বেতের নামাযে নবী (স) প্রথম রাকয়াতে সূরা ‘আল আলা’ এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে সূরা কাফেরুন এবং তৃতীয় রাকয়অতে সূরা ‘এখলাস’ পড়তেন।
** জুমার দিন ফজরের নামাযে তিনি প্রায়ই সূরা আলিফ লাম মীম সাজদাহ এবং সূরা আদ-দাহর পড়তেন।
৩. জুমার নামাযে নবী (স) প্রায়ই সূরা আল-আ’লা এবং সূলা আল গাশিয়াহ পড়তেন অথবা সলা আল জুমআ’হ এবং সূরা মুনাফেকুন পড়তেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, নবী (স)
জুমার দিন ফজর নামাযে (****) এবং (******) আর জুমার নামাযে সূরা জুমআা এবং
সূরা মুনাফেকুন পড়তেন।
৪. ফরয নামাযের প্রথম রাকয়াতে কেরায়াত
দ্বিতীয় রাকয়াতের কেরায়াত থেকে লম্বা হওয়া উচিত। এ জন্যে নবী (স) দ্বিতীয়
রাকয়অতে তুলনায় প্রথম রাকয়াতে লম্বা সূরা পড়তেন-(বুখারী)।
৫. ফজরের নামাযে সকল নামাযের কেরায়াত থেকে
লম্বা কেরায়াত করা উচিত। কারণ সে সময়ে মন ধীরস্থির থাকে এবং একাগ্রতা হয়।
উপরন্তু সকাল ও সন্ধায় ফেরেশতাদের সম্মেলন হয়। প্রথম রাকয়অতের কেরায়াত
দ্বিতীয় রাকয়াতের দেড়গুণ হওয়া উচিত।
সিজদায়ে তেলাওয়াত
কুরআন পাকে এমন চৌদ্দটি স্থান আছে যা
তেলাওয়াত করলে অথবা শুনলে এক সিজদা ওয়াজেব হয়ে যায়। নামাযে ইমামের নিক থেকে
শুনা হোক, অথবা স্বয়ং কেউ পড়ুক, নামাযের বাইরে কেউ তেলাওয়াত করুক বা শুনুক
এবং পুরা আয়অত পড়া হোক বা শুনা হোক, অথবা শুধু সিজদার আয়াত পূর্বাপর মিলে
পড়া হো-সকল অবস্থায় সিজদায়ে তেলাওয়াত ওয়াজেব হবে। ****১
ইমামের পেছনে কেরায়াতের হুকুম
নামাযে ইমামের পেছনে মুক্তাদীর কেরায়াত
দুরস্ত নয়। উচ্চ শব্দে ইমামের পেছনে কেরায়াত করা মাকরুহ তাহরীমি। এ জন্যে
যে, এতে ইমামের কেরায়াত বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এবং নবী (স) তা করতে নিষেধ করেছেন।
একবার তিনি ফজরের নামাযের পর সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের কেউ কি আমার পেছনে কেরায়াত করছিলে?
এক সাহাবী বললে, জ্বি হাঁ, আমি করছিলাম।
এরশাধ হলো- আমি জিজ্ঞাসা করি, তোমরা আমার সাথে কুরআন পড়তে ঝগড়া কর কেন?
ইমামের পেছনে নিঃশব্দে কেরায়াত করা মাকরূহ নয়, কিন্তু জরুরীও নয়। এ জন্যে যে, ইমামের কেরায়াত সকল মুক্তাদীর
***১ সিজদা তেলাওয়াতের বিস্তারিত বিবরণ এ গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে দ্রস্টব্য।
কেরায়াত বলে গণ্য করা হয়। হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, নবী (স) বলেছেন-
যে ব্যক্তি কোন ইমামের পেছনে নামায পড়ছে তাহলে ইমামের কেরায়াত মুক্তাদীর কেরায়াত বলে গণ্য হবে।***১
ইমামের পেছনে সূরা ফাতেহা পড়া
ইমাম যখন উচ্চশব্দে কেরায়অত করবেন, যেমন
ফজর, এশা ও মাগরেব প্রবৃতি জাহরী নামাযগুলোতে, তখন মুক্তাদীর সূরা ফাতেহা
পড়া মাকরুহ। কিন্তু ইমাম যখন নিঃশব্দে কেরায়অত করবে, যেমন যোহর, আসর, তখন
সুসমঞ্জস্য মতবাদ এই যে, মুক্তাদীর সূরা ফাতেহা পড়া মুস্তাহাব। ইমাম
মুহাম্মদ (র) ও সাবধান্যতা স্বরূপ মুক্তাদীর জন্যে সূরা ফাতেহা পড়া ভালো
বলেছেন। ****২ যেমন হেদায়া গ্রন্থকার উদ্ধৃতি দিযেছেন-
(আরবী******************)
***১ [হাদীরেস শব্দগুলো নিম্নরূপ: (আরবী************)
ইমাম মুহাম্মদ (র) তাঁর মুয়াত্তার এ হাদীস
দুটি সনদে বর্ণনা করেছেন এবং উভয় রাবী অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। এক সনদে ইমাম
আবু হানীফঅ (র) এং অন্যটিতে মুসা ইবনে আবী আয়েশা (র)। আল্লামা ইবনে হাম্মাম
বলেন, এ হাদীস সহীহ এবং বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী। আল্লামা আইনী
বলেন, এ হাদীস সহীহ। এক তো আবু হানীফা, তিনিও আবু হানীফাই অন্যজন মুসা ইবনে
আবী আয়েশা (র)। তিনিও অত্যন্ত পরহেজগার এবং নির্ভরযোগ্য লোকের মধ্যে একজন।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম তার নিক থেকে রেওয়ায়েত করেছেন।]
***২[ ইমাম মালেকের মতও তাই যে, সিররী
নামাযগুলোতে মুক্তাদীর সূরা ফাতেহা পড়া মুস্তাহাব। ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম
আহমদ বিন হাম্মল-সিররী, জেহরী উভয় নামাযেই মুক্তাদীল সূরা ফাতেহা পাড় ফরয
বলেছেন। আহলে হাদীরেস অভিমতও তাই।)]
0 comments:
Post a Comment