Monday, November 14, 2016

ছয় নম্বরের বয়ান




ইন্নাল হামদা লিল্লাহ
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আ'লা রাসুলিহিল কারীম
আম্মাবাদ,

মেরে ভাই, আযিয ও দোস্ত! বুযুর্গ আমরা সবাই আল্লাহর দরবারে মাকবুল হতে চাই। আল্লাহর কাছে মাকবুল হওয়ার জন্য তিনি বান্দার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা এবং মান-সম্মান কিছুরই কোনও  মূল্য নেই। তিনি দেখেন বান্দার সিফাত বা গুণ। যার মধ্যে এসব গুণ যত পরিপূর্ণরূপে থাকবে আল্লাহর কাছে সে তত বেশি মাকবুল হবে। আর এসব গুণের মধ্যে সবচে প্রথম এবং বড় গুণ হলো ঈমানের গুণ। 

আভিধানিক অর্থে ঈমান বলা হয়- কারো ওপর আস্থার কারণে তাঁর কথাকে নিশ্চিতরূপে মেনে নেয়া। দ্বীনের বিশেষ পরিভাষায় ঈমান হলরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর পুর্ন আস্থা থাকার কারনে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে তিনি যে সকল খবর  নিয়ে এসেছেন তা বিনা দ্বিধায় মেনে নেয়া।

কালিমা

 কালিমা তথা ঈমানের বুলি হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।

ঈমানের উদ্দেশ্যঃ

ক) দিলের একীন সহীহ করাঃ  আমরা দুচোখে যা কিছু দেখি অথবা দেখিনা আল্লাহ ছাড়া সবই মাখলুক, আর আল্লাহ হলেন খালেক। মাখলুক কিছুই করতে পারে না খালেক অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম ছাড়া। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা মাখলুক ছাড়া সবই করতে পারেন এ কথার একিন অন্তরে বদ্ধমূল করা গাইরুল্লাহর একিনকে দিল থেকে বের করা । সুতরাং আল্লাহ তায়ালার হুকুম-আহকাম নিয়ে চিন্তা করা প্রত্যেকের জন্য একান্ত কর্তব্য।
 খ) তরীকার একীন সহীহ করাঃ তরিকার একিন সহী করার অর্থ হলো, নবী মুহাম্মদ সা.-এর তরিকা ব্যতীত যত মত ও পথ আছে- কোনটার মধ্যে শান্তি ও কামিয়াবি নেই। শান্তি ও কামিয়াবি একমাত্র হুযুর সা.-এর তরিকায়। কেবল আখেরি নবী মুহাম্মাদ সা.-এর সুন্নাতে।

গ) জযবার একীন সহীহ করাঃ মালমুখী দিলকে আমালমুখী করা, দুনিয়ামুখী দিলকে আখেরাতমুখী করা ।
অর্থাৎ, আজ মানুষের জযবা ও প্রতিযোগিতা হলো দ্বীনবিহীন দুনিয়ার কামাই অর্থাৎ কে কত বেশি টাকা উপার্জন করতে পারে। কে কত বেশি গাড়ি-বাড়ির মালিক হতে পারে। কাজেই আমাদের এ জযবাকে সহী করতে হবে। মুসলমানের জযবা, তাদের প্রতিযোগিতা তো হবে দ্বীন ও তাকওয়ার ব্যাপারে। ঈমান ও একিনের ব্যাপারে। রাসূলের সা. আদর্শে আদর্শী হওয়ার ব্যাপারে। দেখার বিষয়, আমি কত বেশি তাকওয়া অর্জন করতে পারি, কত অধিক পরিমাণ দ্বীনের কাজ করতে পারি। এছাড়া আমার নামাজ কতসুন্দর হতে পারে। আমার আমল কত সুন্নত অনুযায়ী হতে পারে। মুসলমানের জযবা এটা হওয়া উচিত।

ঈমানের ফযিলতঃ
১)যে ব্যক্তি এই একীনের সহিত মৃত্যুবরণ করিল যে, আল্লাহ তায়ালার (অস্তিত্ব) হক, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে(আবু ইয়ালা)
২)তোমরা আল্লাহ তায়ালার আজমত অন্তরে বসাও, তিনি তোমাদিগকে মাফ করিয়া দিবেন।(মুসনাদে আহমাদ)
৩)যে ব্যক্তি জাররা পরিমান ঈমান নিয়ে মৃত্যু বরন করবে সে এই দুনিয়া এবং এর চেয়ে দশগুণ বড় জান্নাত পাবে।
৪)একজন ঈমানওয়ালা  যতদিন দুনিয়াতে থাকবে আল্লাহ পাক তার বদৌলতে দুনিয়ার সমস্ত কায়েনাতকে  ঠিক রাখবেন।

পরিপূর্ণ ঈমান হাসিল করার তরীকাঃ
 তিন লাইনে মেহনতের দ্বারা ঈমান হাসিল হবে -দাওয়াত, মশক, দোয়া।
দাওয়াতঃ
*ঈমানের উদ্দেশ্য ও লাভ বলে বলে উম্মতের মাঝে চলে ফিরে দাওয়াত দেয়া।
*আল্লাহ থেকেই সমস্ত কিছু হয় মাখলুক থেকে কিছুই হয় না, একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নুরানী তরীকাতেই একশতভাগ শান্তি ও কামিয়াবী অন্য যে কোন তরীকাতেই একশত ভাগ ধ্বংস, দুনিয়ার জিন্দেগী অল্প সময়ের জিন্দেগী আর আখেরাতের জিন্দেগী চিরস্থায়ী জিন্দেগী এই কথা মানুষ কে বলা।
*তাওহীদ , রিসালাত ও আখেরাতের দাওয়াত দেয়া।
*যেখানে যেখানে আসবাব থেকে হওয়ার কথা আলোচনা হয়, সেখানে সেখানে গিয়ে আল্লাহ থেকে হওয়ার দাওয়াত দিতে হবে। যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকা ব্যতীত অন্য তরীকার কথা আলোচনা  করা  হয় সেখানে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকায় একশত ভাগ কামিয়াবী আছে তার দাওয়াত দিতে হবে। যেখানে মানুষের আগ্রহ অল্পসময়ের দুনিয়ার প্রতি সেখানে গিয়ে চিরস্থায়ী আখেরাতের দাওয়াত দিতে হবে।  নিজের জীবনে আনার জন্যই দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহ পাকের বড়ত্বের, আজমতের, একত্ববাদের দাওয়াত দিতে হবে।
এভাবে দাওয়াত দেয়ার দ্বারা ঈমান বনবে, এই ঈমানকে মজবুত করার জন্য ঈমানের মশক করতে হবে।
মশকঃ
ঘরে ও মসজিদে ঈমানী হালকা কায়েম করে চার লাইনে কথা বার্তা আলোচনা করতে হবে।
ক) আল্লাহ পাকের কুদরতের কথা আলোচনা করতে হবে, এর দ্বারা দিলে আল্লাহ পাকের আজমত বসবে, ধারনা সাফ হবে।
খ) আল্লাহ পাক নবীদের সাথে জাহেরের খেলাফ যে সব সাহায্য আর মদদ করছেন তা বেশী বেশী আলোচনা করা।
গ) একীন বুনিয়াদের উপর সাহাবাদেরকে জাহেরের খেলাফ যে সকল মদদ আল্লাহ পাক করেছেন তা আলোচনা করা।
ঘ) ঈমানের লক্ষন সমূহের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে যে সব আয়াত ও হাদিস আছে তার সাথে নিজের ঈমানকে যাচাই করা। যেমনঃযদি তোমার নেক আমাল তোমাকে আনন্দিত করে এবং তোমার গুনাহ তোমাকে দুঃখিত করে তবে তুমি মোমেন।  
দোয়াঃ কামেল ঈমান হাসিল করার জন্য দোয়া করতে হবে।

দ্বিতীয় সিফাত হল নামাজ

আল্লাহর খাজানা থেকে নেয়ার মাধ্যম হল আমাল এবং আমালের মধ্যে সব চেয়ে বড় আমাল হল নামাজ।
আল্লাহ পাকের খাজানা থেকে সরাসরি নেয়ার মাধ্যম হলো নামাজ।

নামাজের উদ্দেশ্যঃ 

আল্লাহ পাকের খাজানা থেকে সরাসরি নেয়ার এক যোগ্যতা আর্জন করা।

নামাজের ফযিলতঃ

১)হুযূর সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন যে, আল্লাহ তায়ালা ফরমাইয়াছেন, আমি আপনার উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করিয়াছি এবং প্রতিজ্ঞা করিয়াছি যে, যে ব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মত গুরত্ব সহকারে আদায় করিবে আমি তাহাকে নিজ দায়িত্বে জান্নাতে প্রবেশ করাইব। এর যে ব্যক্তি গুরুত্ব সহকারে এই নামাজসমূহ আদায় করিবেনা তাহার ব্যাপারে আমার কোন দায়িত্ব নাই।(দুররে মানসূরঃআবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ)  
২)নামাজ বেহেশতের চাবি।(ফাজায়েলে আমাল-৩০ পৃ) 
৩)নামাজ দ্বীনের খুঁটি। (ফাজায়েলে আমাল-২৯পৃ) 
৪)নামাজ মোমিনের নূর।(ফাজায়েলে আমাল-২৯পৃ) 
৫)নামাজ শয়তানের মুখ কালো করিয়া দেয়।(ফাজায়েলে আমাল-২৯পৃ)  
 

নামাজের সিফাত হাসিল করার তরীকাঃ 

তিন লাইনে মেহনতের দ্বারা নামাজ হাসিল হবে -দাওয়াত, মশক, দোয়া।
দাওয়াতঃ আমার জিন্দেগীতে কামেল নামাজ আনার জন্য উম্মতের মধ্যে চলাফেরা করে উদ্দেশ্য ও ফাযায়েল জানিয়ে  কামেল নামাজের দাওয়াত দিতে হবে।
মশকঃ ২ লাইনে নামাজের মশক করতে হবে।
১) জাহেরী লাইনেঃ
ক)ইস্তেঞ্জা থেকে পাকসাফ হওয়া।
খ)অজু নামাজের চাবি, তাইঅজু করার সময় ফরজ, সুন্নত, মুস্তাহাব ইত্যাদি খেয়াল রাখতে হবে।
খ)কিয়াম, রুকু, সিজদা, জলসা  ইত্যাদি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যবহার সুন্নত তরীকায়  আদায় করার জন্য আলেমদের কাছে গিয়ে মশক করতে হবে।
২) বাতেনী লাইনেঃ
ক)আল্লাহর ধ্যানে নামাজ পড়া।
খ)প্রতি রোকনে কমপক্ষে ৩ বার এই ধ্যান করতে হবে যে, আল্লাহ আমাকে দেখতেছেন।
গ)মোয়ামেলাতের মধ্যে তাকওয়া আনা। নিজের কামাই/রোজগার হালাল করা।
ঘ)কোন সমস্যা আসলে তাহা নামায দ্বারা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
নামাজের এই হাকিকত আনার জন্য ফরয নামাজগুলি জামাতের সাথে,সুন্নত ও ওয়াজিব নামাজের এহতেমাম করা, বিভিন্ন নফল নামাজেরও এহতেমাম করা, ক্বাযা নামাজ হিসাব করে আদায় করা।

দোয়াঃ হাকীকতওয়ালা নামাজ পড়ার তৌফিক চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।

৩য় সিফাত হল এলেম ও জিকির

এলেমের উদ্দেশ্যঃ

আল্লাহ তায়ালার মহান সত্তা হইতে সরাসরি ফায়দা হাসিল করার জন্য আল্লাহ তায়ালার হুকুমসমূহকে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকায় পালন করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ ওয়ালার এলেম হাসিল করা। অর্থাৎ এই বিষয়ে যাচাই করা যে,আল্লাহ তায়ালা বর্তমানে অবস্হায় আমার নিকটে কি চাহিতেছেন।  

এলেমের ফজিলতঃ

১) যে ব্যাক্তি শুধু কল্যাণের কথা শিক্ষা করার জন্য অথবা শিক্ষা দানের জন্য মসজিদে যায় তাহার সওয়াব সেই হাজীর ন্যায় হয় যাহার হজ্জ কামেল হইয়াছে।(তাবারানী,মাজমায়ে যাওয়ায়েদ)
২) এলেমের একটা অধ্যায় শিক্ষা করা চাই তার উপর তৎক্ষণাৎ আমল করা হউক বা না হউক হাজার রাকাত নফল নামাজ পড়ার হইতে উত্তম।(ইবনে মাজাহ)
৩) একজন আলেমে দ্বীন শয়তানের উপর এক হাজার আবেদ অপেক্ষা কঠিন।(তিরমিজী)
৪) যখন আল্লাহ তায়ালা কোন বান্দার সহিত কল্যাণের এরাদা করেন তখন তাহাকে দ্বীনের বুঝ দান করেন এবং সঠিক কথা তাহার অন্তরে ঢালেন।(বাযযার,তাবারানী,মাজমায়ে যাওয়ায়েদ)

এলেমের সিফাত হাসিল করার তরিকাঃ

৩ লাইনে মেহানত দ্বারা এলেম হাসিল হবে-দাওয়াত,মশক ও দোয়া
দাওয়াতঃ এলেমের উদ্দেশ্য ও লাভ বলে বলে মানুষে মধ্যে দাওয়াত দিতে হবে।
 মশকঃ ৪ ভাবে এলেম হাসিলের মশক করতে হবে।
১) ফাজায়েল-ওয়ালা এলেম (ঘরে ও মসজিদে তালিমের হালকায় বসে)
২) মাসায়েল-ওয়ালা এলেম(ওলামায়ে কেরাম থেকে)
৩) ছিফাত-ওয়ালা এলেম (মুন্তাখাব হাদীস পড়ে)
৪)তরবিয়ত-ওয়ালা এলেম (হায়াতুস সাহাবাহ পড়ে)
 দোয়াঃ আল্লাহ তায়ালা যাতে উপকারী এলেম দান করে তার জন্য দোয়া করতে হবে।

যিকিরের উদ্দেশ্যঃ 

আল্লাহ তায়ালা আমার সামনে আছেন এবং তিনি আমাকে দেখিতেছেন, এই ধ্যানের সহিত আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালনে মশগুল হওয়া।

যিকিরের ফজিলতঃ 

১) তোমরা ঐ জিনিস অপেক্ষা আর কোন জিনিস দ্বারা আল্লাহ তায়ালার অধিক নৈকট্য লাভ করিতে পারিবে না যা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা হইতে বাহির হইয়াছে। অর্থাৎ কুরআনে কারীম।(মুসতাদরাকে হাকেম)
২)নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, তোমাদিগকে কি দ্বীনের বুনিয়াদি জিনিস বলিয়া দিব না, যাহা দ্বারা তোমরা দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণ হাসিল করিবে? আল্লাহ তায়ালার যিকিরে নিজের জিহ্বাকে নাড়াইতে থাক।(বাইহাকী,মেসকাত)
৩)আল্লাহ তায়ালার এরশাদ, যখন আমার বান্দা আমাকে স্মরণ করে এবং তাহার ঠোঁট আমার স্মরণে নড়াচড়া করিতে থাকে তখন আমি তাহার সঙ্গে থাকি।(ইবনে মাজাহ)
৪)জান্নাতীদের জান্নাতে যাওয়ার পর দুনিয়ার কোন জিনিসের জন্য আফসোস হইবে নাশুধু ঐ সময়ের জন্য আফসোস হইবে যাহা দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালার যিকির ব্যতীত অতিবাহিত হইয়াছে।(তাবারানী, বাইহাকী, জামে সগীর) 

যিকিরের সিফাত হাসিল করার তরীকাঃ 
৩ লাইনে মেহানত দ্বারা জিকির হাসিল হবে।দাওয়াত,মশক ওদোয়া
দাওয়াতঃ
 জিকিরের উদ্দেশ্য ও লাভ বলে বলে মানুষে মধ্যে দাওয়াত দিতে হবে।
 মশকঃ
* ধ্যানের সাথে রোজানা ১ পারা কোরআন পাকের তেলাওয়াত করতে হবে।
* আল্লাহর ধ্যানের সাথে সকাল সন্ধ্যায় ৩ তাসবিহ আদায় করা। ধ্যান ছাড়া তাসবিহাত আদায় করলে গাফেলত পয়দা হয়।
* জাগায় জাগায় মাসনুন দোয়া আদায় করা।
 দোয়াঃ হাকীকতের যিকিরের তৌফিক চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।

৪র্থ সিফাত হল একরামুল মুসলিমীন

একরামে মুসলিমিনের উদ্দেশ্যঃ 
আল্লাহ তায়ালার বান্দাদের সহিত সম্পর্কিত আল্লাহ তায়ালার হুকুমসমুহকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকায় পাবন্দি সহকারে পুরা করা এবং উহাতে মুসলমানদের বিশেষ মর্যাদার প্রতি খেয়াল রাখা।
একরামে মুসলিমিনের ফজিলতঃ
১)আল্লাহ তায়ালার এরশাদ- রহমানের খাছ বান্দা তাহারা যাহারা জমিনের উপর বিনয়ের সহিত চলে।(সূরা ফোরকান)
২)মুমেন আপন সচ্চরিত্র দ্বারা রোজাদের ও রাতভর ইবাদতকারীর মর্যাদা লাভ করে।(আবু দাউদ)
৩)মুমিনের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চাইতে বেশী ভারী কোন জিনিস হইবে না।(আবু দাউদ)  
৪) কোন মুসলমানের উপকার করার চেষ্টা করা, ১০ বছর এতেকাফ করার চেয়ে উত্তম।
৫) জাহান্নামের আগুন প্রত্যেক এইরূপ ব্যক্তির জন্য হারাম হইবে যে মানুষের নিকটবর্তী,অত্যন্ত নম্রস্বভাব ও বিনয়ী হয়।(তিরমিজী)  
একরামে মুসলিমিনের হাসিল করার তরিকাঃ
 ৩ লাইনে মেহানত দ্বারা  একরাম হাসিল হবে-দাওয়াত,মশক ওদোয়া
দাওয়াতঃ সমস্ত মাখলুকের হক আদায় করতে হবে এই কথার দাওয়াত দিতে হবে।
 মশকঃ
১) নিজের ভাল কাজের মধ্যে দোষ তালাশ করা এবং অপর মুসলমান ভাইয়ের মধ্যে গুন তালাশ করা।
২) মুসলমান ভাইয়ের পিছনে তার গুন আলোচনা করা এবং তার জন্য দোয়া করা।
৩)মুসলমান ভাইয়ের দোষকে ভাল তাবীর করা ও তার জন্য দোয়া করা।
৪)প্রত্যেক মাখলুকের আমার কি হক আছে তা জেনে আদায় করা।
 দোয়াঃ হুসনে আখলাক নিজের জিন্দেগীতে নসীব হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।

৫ম সিফাত হল তাসহিহে নিয়্যাত

তাসিহে নিয়্যাতের উদ্দেশ্যঃ 
আল্লাহ তায়ালার হুকুমসমুহ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য পূরা করা।
তাসিহে নিয়্যাতের ফজিলতঃ
১) হাদীসে আছে-আল্লাহ তায়ালা সমস্ত আমলের মধ্যে শুধু সেই আমল্কেই কবুল করেন যাহা খালেসভাবে তাঁহারই জন্য হয় এবং উহাতে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিই উদ্দেশ্য হয়।(নাসাঈ)
২)হাদীসে আছে- এখলাস ওলারাদের জন্য সুসংবাদ হউক, তাহারা অন্ধকারের চেরাগ সরূপ। তাহাদের দ্বারা কঠিন হইতে কঠিন ফেতনা দূর হইয়া যায়।(বাইহাকী)
৩)হাদীসে আছে- এক ব্যক্তি উচ্চস্বরে জিজ্ঞাসা করিল, ইয়া রাসুলাল্লাহ, ঈমান কি? তিনি এরশাদ করলেন,ঈমান হল এখলাস।(বাইহাকী)
তাসিহে নিয়্যাতের সিফাত হাসিল করার তরিকাঃ
 ৩ লাইনে মেহানত দ্বারা  এখলাস হাসিল হবে-দাওয়াত,মশক ও দোয়া
দাওয়াতঃ এখালসের উদ্দেশ্য ও ফজিলত বলে বলে দাওয়াত দিতে হবে।
 মশকঃ
* প্রতিটি আমাল শুরু, মাঝে এবং শেষে নিয়তকে যাচাই করতে হবে। আমালটি আল্লাহ পাকের রেজামন্দীর জন্য হইতেছে কিনা।
*রোজানা অন্ততঃ একটা আমাল এমনভাবে করা যাহা আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ বেতীত আর কেহ না জানে।
* নিজের সমস্ত ভাল আমালের মধ্যে খারাবী তালাশ করা।
 দোয়াঃ এখলাস হাসিল করার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হবে।

৬ষ্ঠ সিফাত হল দাওয়াত ও তাবলীগ

দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্যঃ 
 নিজের একীন ও আমলকে সহীহ করা ও সকল মানুষকে সহীহ একীন ও আমলের উপর আনার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেহনতের তরীকাকে সমস্ত বিশ্বে যিন্দা করার চেষ্টা করা।
দাওয়াত ও তাবলীগের ফজিলতঃ 
১)আল্লাহর তায়ালার রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল দুনিয়া ও দুনিয়ার ভিতর যাহা রহিয়াছে তাহা অপেক্ষা উত্তম।”(নাসাঈ)
২)যে ব্যক্তি সৎকাজের দিকে পথ দেখায় সে সৎকর্মকারীদের সমান সওয়াব লাভ করবে।(আবু দাউদ)
৩)যে ব্যক্তির উভয় পা আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় ধুলিময় হইবে আল্লাহ তায়ালা উহাকে দোযখের আগুনের উপর হারাম করিয়া দিবেন।”(মুসনাদে আহমাদ)
৪)আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় একদিন উহা ব্যতীত হাজার দিন অপেক্ষা উত্তম।(নাসাঈ)
৫)তোমাদের কাহারো সামান্য সময় আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় দাঁড়াইয়া থাকা তাহার পরিবার পরিজনের মধ্যে থাকিয়া সারা জীবনের নেক আমল হইতে উত্তম।(মুস্তাদারাকে হাকেম)
৬)তিন ব্যক্তি এমন যে,তাহারা আল্লাহ তায়ালার দায়িত্বে রহিয়াছে। যদি জীবিত থাকে তবে তাহাদিগকে রুজী দেওয়া হইবে এবং তাহাদের কাজে সাহায্য করা হইবে।আর যদি তাহাদের মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ তায়ালা তাহাদিগকে জান্নাতে দাখিল করিবেন। একজন ঐ ব্যক্তি- যে আপন ঘরে প্রবেশ করিয়া সালাম করে। দ্বিতীয় ঐ ব্যক্তি- যে মসজিদে গমন করে। তৃতীয় ঐ ব্যক্তি- যে আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় বের হয়।(ইবনে হিব্বান)
৭)আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় রাত কাটানোর অর্থ জান্নাতের বাগানে রাত কাটানো।(সুনানে কুবরা) 

দাওয়াত ও তাবলীগের সিফাত হাসিল করার তরিকাঃ

 ৩ লাইনে মেহানত দ্বারা   এই ছিফত হাসিল হবে-দাওয়াত,মশক ও দোয়া
 দাওয়াতঃ দাওয়াতে তাবলীগের  উদ্দেশ্য ও ফজিলত বলে বলে দাওয়াত দিতে হবে।
মশকঃ নিজের জান মাল ও সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে এই ছিফতের মশক করতে হবে।৩ চিল্লা দিয়ে এই মেহেনত শিখা।মউত পর্যন্ত এই মেহেনতের নিয়ত করা এবং মসজিদওয়ারী কাজের সাথে নিজেকে জুড়ে রাখা।

 দোয়াঃ নিজের জান মাল ও সময় আল্লাহর রাস্তায় কবুল হওয়ার জন্য দোয়া করতে হবে এবং পুরা উম্মতের জন্যও এই দোয়া করতে হবে



রাপ্তি স্বীকারঃ এই পোষ্টটি লিখতে গিয়ে সকল বিষয়ই শাইখুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া সাহেব কান্দালভী (রহঃ) রচিত 'ফাযায়েলে আমল' এবং হযরতজ্বী মাওলানা ইউসুফ সাহেব (রহঃ) রচিত 'মুন্তাখাব হাদিস' কিতাবদ্বয়ের থেকে সরাসরি নেওয়া হয়েছে। জামায়াতের মুরুব্বীদের মুখে শোনা বয়ান এর সহযোগীতা গ্রহন করেছি, এছাড়া অনলাইনে অনেকের লেখার সহযোগীতা গ্রহন করেছি সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ যেন সকলকে যাঝায়ে খাইর (উত্তম বিনিময়) দান করেন। আমিন

0 comments:

Post a Comment