তাহারাত-পবিত্রতা


Tuesday, November 1, 2016

তাহারাত- পাক পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা


নবুয়তের মর্যাদায় ভূষিত হবার পর নবীর দায়ত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে নবী মুস্তফা (সা)এর উপর প্রথমে যে অহী নাযিল হয় তাতে তৌহীদের শিক্ষার পরই এ নির্দেশ দেয়া হয় যে, পরিপূর্ণ পরিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা (তাহারাত) অবলম্বন করতে হবে। وَثِيَابَكَ فَطَهِّر )المدثر-4) নিজেকে পাক পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন (মুদ্দাসসির-৪)। ثياب  শব্দটি ثوب  শব্দের বহুবচন। যার শাব্দিক অর্থ পোশাক। কিন্তু এখানে ثياب (সিয়াব) বলতে শুধুমাত্র পোশাক-পরিচ্ছদ বুঝানো হয়নি। বরঞ্চ শরীর, পোশাক, মন-মস্তিস্ক মোট কথা সমগ্র ব্যক্তিসত্তাকে বুঝানো হয়েছে। আরবী ভাষায় طاهر الثوب  ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে সকল ক্রটি-বিচ্যুতি ও মলিনতার উর্ধে। কুরআনের নির্দেশের মর্ম এই যে, স্বীয় পোশাক, শরীর ও মন-মস্তিস্কের মলিনতার অর্থ শির্ক কুফরের ভ্রন্ত মতবাদ ও চিন্তাধারা...

Tuesday, November 1, 2016

নাজাসাতে হুকমী


নাজাসাতে হুকমী নাপাকীর এমন এক অবস্থা যা দেখা যায় না। শরীয়তের মাধ্যমে তা জানা যায়। যেমন অজুহীন হওয়া, গোসলের প্রয়োজন হওয়া। নাজাসাতে হুকমীকে হাদাসও বলে। নাজাসাতে হুকমীর প্রকার ভেদ নাজাসাতে হুকমী বা হাদাস দু’প্রকারঃ হাদাসে আসগার এবং হাদাসে আকবার। হাদাসে আসগার পেশাব পায়খান করলে, পায়খানার দ্বার দিয়ে বায়ু নির্গত হলে, শরীরের কোন অংশ থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হলে, মুখ ভরে মবি হলে, ইস্তেহাযার রক্ত বের হলে, ঠেস দিয়ে ঘুমালে যে নাপাকীর অবস্থা হয় তাকে হাদাসে আসগার বলে। এর থেকে পাক হতে হলে অযু করতে হবে। পানি পাওয়া না গেলে অথবা পানি ব্যবহার ক্ষতিকারক হলে তায়াম্মুম দ্বারাও পাক হওয়া যায়। হাদাসে আসগার অবস্থায় নামায পড়া যাবে না, কুরআন পাক স্পর্শ করা যাবে না। কিন্তু যাদের হাতে সর্বদা কুরআন থাকে এবং বার বার অযু করা মশকিল অথবা কুরআন পাঠকারী...

নাজাসাতের (অপবিত্রতা) বর্ণনা


নাজাসাতের (نجاست)  অর্থ হচ্ছে মলিনতা, অশুচিতা ও অপবিত্রতা। এ হলো তাহারাত (طهارت) বা পবিত্রতার বিপরীত। তাহারাতের মর্ম পন্থা-পদ্ধতি, হুকুম-আহকাম এবং মাসয়ালা জানার জন্যে প্রথমে প্রয়োজন হচ্ছে যে, নাজাসাতের মর্ম, তার প্রকারভেদ এবং তা পাক করার নিয়মপদ্ধতি জেজে নিতে হবে। এ জন্যে প্রথমেই নাজাসাতের হুকুমগুলো ও সে সম্পর্কিত মাসয়ালাগুলো বর্ণনা করা হচ্ছে। নাজাসাতের প্রকারভেদ নাজাসাত দুই প্রকারের। নাজাসাতের হাকিকী ও নাজাসাতে হুকমী। উভয়ের হুকুম আহকাম ও মাসয়ালা পৃথক পৃথক। পবিত্রতা অর্জন করার জন্যে তার হুকুম ও মাসয়ালাগুলো ভালো করে বুঝেসুঝে তা মনে রাখা অত্যন্ত জুরুরী। নাজাসাত দুই প্রকারের। নাজাসাতের হাকিকী ও নাজাসাতে হুকমী।  নাজাসাতে হাকিকী ঐ সব জিনিসকে নাজাসাতে গালিযা বলা হয় যাদের নাপাক হওয়া সম্পর্কে কোন প্রশ্নই...

Tuesday, November 1, 2016

এস্তেঞ্জার বিবরণ


পেশাব পায়খানার পর শৌচ করাকে এস্তেঞ্জা বলে। শরীয়তে এস্তেঞ্জার জন্যে বিশেষ তাকিদ করা হয়েছে। এস্তেঞ্জায় অবহেলা করা বড়ো গুনাহ। নবী পাক (সা) একে কবর আযাবের কারণ বলেছেন। একবার তিনি দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় বলেন, এ দুজন মুর্দার উপর আযাব হচ্ছে। কোন বড়ো কারণের জন্যে নয় বরং এমন কাজের জন্য যা খুব সাধারণ মনে করা হয়। এদের মধ্যে একজন এমন ছিল যে পেশাবের পর ভালোভাবে পাক হতো না আর দ্বিতীয় ব্যক্তি চোড়লখুরি করতো (বুখারী)। পেশাব পায়খানা করার আদব ও হুকুম ১. পেশাব পায়খানার সময় কেবলার দিকে মুখ অথবা পিঠ করে বসা নিষেধ। বাচ্চাদেরকে পেশাব পায়খানা করাবার সময় এমনভাবে বসানো উচিত নয় যাতে মুখ অথবা পিঠ কেবলার দিকে হয়। চাঁদ সূর্যের দিকে মুখ পিঠ করে পেশাব পায়খানা করা থেকে বিরত থাকা উচিত। ২. কোন ছিদ্র বা শক্ত মাটির উপর পেশাব...

কূপের মাসয়ালা ও হুকুম


কুপের পানি পাক করার বিস্তারিত হুকুম কূপের মাসয়ালা এবং তা পাক করার নিয়ম-পদ্ধতি ও হুকুম-আহকাম বুঝতে হলে নিম্নের সাতটি বিস্তারিত হুকুম মনে রাখতে হবে: ১. কূপের সমস্ত পানি নাপাক হলে তা পাক করার জন্যে সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে। সমস্ত পানি তুরে ফেলার অর্থ এইযে, তাতে বালতি ফেললে যেন আধ বালতি পানিও না উঠে। এত পানি তুলে ফেলার পর কূপের সিঁড়ি, রশি, বালতি সবই পাক হয়ে যায়। আর যে কূপের সব পানি উঠানো সম্ভব নয়, তার থেকে তিনশো বালতি পানি উঠাতে হবে এবং তাতে কূপের পানি পাক হয়ে যাবে। ২. যে অবস্থায় কুপ পাক থাকে এবং অল্প পানিও তুলে ফেলার প্রয়োজন হয় না এমন অবস্থায় যদি কেউ তার মনে আশ্বস্তির জন্যে কোন সময়ে কূপ থেকে বিশ বাইশ বালতি পানি তুলে ফেলতে চায় তো তা শরীয়তের খেলাপ হবে না এবং এতে কোন দোষ নেই। ৩. কূপ নাপাক হওয়ার সময় নিশ্চিত করে যদি জানা...

Tuesday, November 1, 2016

তাহারাত (পবিত্রতা) অর্জনে ব্যবহৃত পানির বিবরণ


তাহারাত (পবিত্রতা) শুধু সেই পানি হতে পারে যা স্বয়ং পাক। নাপাক পানি দ্বারা না অযু-গোসল হতে পারে আর না কোন নাপাক জিনিস পাক হতে পারে। বরঞ্চ এর দ্বারা পাক জিনিসই নাপাক হয়ে যায়। এ জন্যে পানি পাক-নাপাক হওয়ার হুকুম ও মাসয়ালা ভালোভাবে বুঝে নেয়া দরকার যাতে করে নিশ্চয়তা এবং নিশ্চিন্ততা সহকারে তাহারাত অর্জন করা যায়। পানি প্রকার বুনিয়াদীভাবে পানি দুই প্রকারের: পাক ও নাপাক পাক পানি পবিত্রতা অর্জনের দিক দিয়ে পাক পানি চার রকমের ঃ ১. তাহের মুতাহহের গায়ের মাকরুহঃ অর্থাত্ এমন পাক পানি যার দ্বারা কোন কেরাহাত (ঘৃণা বা অশ্রদ্ধার ভাব) ব্যতিরেকে নিশ্চিন্ত মনে অযু-গোসল করা যায়। যেমন বৃষ্টির পানি, নদী, সমুদ্র, পুকুর, নালা, ঝর্ণা, কূপ, টিউবওয়েল প্রভৃতির পানি। সে পানি মিঠা হোক অথবা লোনা, শিশির অথবা বরফ পানি হোক কোন প্রকার কেরাহাত ব্যতিরেকে...

মেয়েদের তাহারাতের(পবিত্রতার) মাসায়েল (হায়েয, নেফাস ও এস্তেহাযা)


হায়েযের বিবরণ সাবালিকা হওয়ার পর মেয়েদের প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে স্বভাবত যে রক্ত নির্গত হয় তাকে হায়েয বলে। এ রক্ত নাপাক। কাপড় এবং শরীরে লাগলে তা নাপাক হয়ে যাবে। হায়েয হওয়ার বয়স হায়েয হওয়ার বয়স কমপক্ষে ন’ বছর। ন’ বছরের পূর্বে কোন মেয়ের যদি রক্ত আসে তাহলে তা হায়েয বলে গন্য হবে না। তারপর সাধারণত মেয়েদের পঞ্চান্ন বছর পর্যন্ত হায়েয হয়ে থাকে। পঞ্চান্ন বছরের পর রক্ত এলে তা আবার আয়েয বলা যাবে না। হাঁ তবে এ বয়সে রক্তের রং যদি গাঢ় লাল হয় অথবা কালচে লাল হয়, তাহলে হায়েয মনে করা হবে। হায়েযের সময়-কাল ১. হায়েযের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে একেবারে সাদা রঙের ব্যতীত যে বঙের রক্ত আসবে তা লাল, হলুদ, খাকি, সবুজ, কালো, যাই হোক না কেন, সব হায়েয বলে গন্য হবে। ২. যে সব মেয়েদের পঞ্চান্ন বছরের আগেও গাঢ় লাল বর্ণের ছাড়াও সবুজ,...

Page 9 of 12

Tuesday, November 1, 2016

গোসলের বিস্তারিত বিবরণ


গোসলের পারিভাষিক অর্থ অভিধানে গোসলের অর্থ হলো সমস্ত শরীর ধুয়ে ফেলা এবং ফেকাহর পরিভাষায় তার অর্থ হলো শরীয়তের বলে দেয়া বিশেষ পদ্ধতি অনুযায়ী নাপাকী দুর করার উদ্দেশ্যে অথবা সওয়াবের আশায় সমস্ত শরীর ধোয়া। গোসল সম্পর্কে সাতটি হেদায়েত ১. গোসলখানয় অথবা খোলা জায়গায় গোসল করতে হলে তহবন্দ, নেকাব অথবা অন্য কাপড় পড়ে গোসল করতে হবে। ২. হামেশা পর্দা করা স্থানে গোসল করতে হয় যাতে করে পর পুরুষ বা পর স্ত্রীর নজরে না পড়ে। এরূপ স্থানে না হলে লংগি প্রভৃতি বেঁধে গোসল করবে। যদি বাঁধাবারও কিছু না থাকে তাহলে আঙ্গুল দিয়ে চারদিকে আঁক টেনে বিসমিল্লাহ বলে বসে বসে গোসল করবে। ৩. মেয়েদের উচিত সর্বদা বসে গোসল করা। পুরুষ যদি উলংগ হয় তাহলে বসে বসেই গোসল করবে। তাবে লুংগি প্রভৃতি পরে দাঁড়িয়ে গোসল করতে দোষ নেই। ৪. গোসলের সময় কথাবার্তা না বলা উচিত। বিশেষ প্রয়োজন...

অযুর বিস্তারিত বিবরণ


অযুর ফযীলত ও বরকত অযুর মহত্ব ও গুরুত্ব এর চেয়ে অধিক আর কি হতে পারে যে, স্বয়ং কুরআনে তার শুধু হুকুমই নেই, বরঞ্চ তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, অযুতে দেহের কোন কোন অংগ ধুতে হবে। আর এ কথাও সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, অযু নামাযের অপরিহার্য শর্ত। (আরবী*****************১১১) যারা তোমরা ঈমান এনেছো জেনে রাখো, যখন তোমরা নামাযের জন্যে দাঁড়াবে তার আগে নিজেদের মুখ-মণ্ডল ধুয়ে নেবে এবং তোমাদের দু‘হাত কুনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে এবং মাথা মাসেহ করবে এবং তারপর দু‘পা চাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলবে- (মায়েদাহ: ৬)। নবী (সা) অযুর ফযীলত ও বরকত বয়ান করতে গিয়ে বলেন- আমি কোয়ামতের দিন আমার উম্মতের লোকদেরকে চিনে ফেলবো। কোন সাহাবী জিজ্ঞাস করলেন- কেমন করে, হে আল্লাহর রসূল? নবী (সা) বলেন, এ জন্যে তাদেরকে চিনতে পারব যে, অযুর বদৌলতে আমার উম্মতের মখমণ্ডল...

তায়াম্মুমের বয়ান


তাহারাত আসিল করার আসল মাধ্যম পানি যা আল্লাহ তায়ালা তাঁর বিশেষ মেহেরবানীতে বান্দাদের জন্যে প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করে রেখেছেন। তথাপি এমন অবস্থার সৃষ্টিও হতে পারে যে, কোন স্থানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না, অথবা পাওয়া গেলেও পানি দিয়ে তাহারাত আসিল করা মানুষের সাধ্যের বাইরে, অথবা পানি ব্যবহারে ভীষণ ক্ষতির আশংকা রয়েছে। এসব অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা অতিরিক্ত মেহেরবানী এই যে, তিনি মাটি দিয়ে তাহারাত হাসিল করার অনুমতি দিয়েছেন। তার পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন যাতে করে বান্দাহ দ্বীনের উপর আমল করতে কোন অসুবিধা বা সংকীর্ণতার সম্মুখীন না হয়। কুরআনে আছে- (আরবী*******************************১৩৯*************) “আর তোমরা যদি পানি না পাও, তাহলে পাক মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তাতে হাত মেরে চেহারা এবং হাত দুটির উপর মুসেহ কর। আল্লাহ তোমাদেরকে সংকীর্ণতার মধ্যে ফেলতে চাননা।...


0 comments:

Post a Comment