পেশাব পায়খানার পর শৌচ করাকে এস্তেঞ্জা
বলে। শরীয়তে এস্তেঞ্জার জন্যে বিশেষ তাকিদ করা হয়েছে। এস্তেঞ্জায় অবহেলা
করা বড়ো গুনাহ। নবী পাক (সা) একে কবর আযাবের কারণ বলেছেন। একবার তিনি দুটি
কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় বলেন, এ দুজন মুর্দার উপর আযাব হচ্ছে।
কোন বড়ো কারণের জন্যে নয় বরং এমন কাজের জন্য যা খুব সাধারণ মনে করা হয়।
এদের মধ্যে একজন এমন ছিল যে পেশাবের পর ভালোভাবে পাক হতো না আর দ্বিতীয়
ব্যক্তি চোড়লখুরি করতো (বুখারী)।
পেশাব পায়খানা করার আদব ও হুকুম
১. পেশাব পায়খানার সময় কেবলার দিকে মুখ
অথবা পিঠ করে বসা নিষেধ। বাচ্চাদেরকে পেশাব পায়খানা করাবার সময় এমনভাবে
বসানো উচিত নয় যাতে মুখ অথবা পিঠ কেবলার দিকে হয়। চাঁদ সূর্যের দিকে মুখ
পিঠ করে পেশাব পায়খানা করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
২. কোন ছিদ্র বা শক্ত মাটির উপর পেশাব করা
নিষেধ। ছিদ্রে নিষেধ এ জন্যে যে তাতে কোন ক্ষতিকারক প্রাণী থাকতে পারে যে
বের হয়ে দংশন করতে পারে। শক্ত মাটির উপর পেশাব করলে যায়ে পেশাবের ছিটা
লাগবে।
৩. ছায়াদানকারী গাছের নীচে নদী ও পুকুরের
তীরে যে দিক দিয়ে মানুষ পানি নেয়, ফলবান বৃক্ষের নীচে, যেখানে মানুষ
অযু-গোসল করে সেখানে, কবরস্থানে, মসজিদ, ঈদগাহের এতোটা নিকটে যে, সেখান
থেকে দুর্গন্ধে নামাযীদের কষ্ট হয়, জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায়, রাস্তার
পাশে, কোন বৈঠকাদির নিকটে, মোট কথা এমন সকল স্থনে পেশাব পায়খানা করা নিষেধ
যেখানে মানুষ উঠা বসা করে বিশ্রাম নেয় অথবা অন্যান্য কাজকর্ম করে। এসব
স্থানে পেশাবে পায়খানায় মানুষের কষ্ট হয়।
৪. দাঁড়িয়ে পেশাব পায়খানা করা নিষেধ। তবে বিশেষ কারণে কোন সময় করলে দোষ নেই।
৫. যদি আংটিতে আল্লহর নাম, কালেমা, কোন
আয়াত বা হাদীস লেখা থাকে, তাহলে পেশাব পায়খানায় যাবার সময় তা খুলে রাখতে
হবে, নতুবা বেয়াদবি হবে।
হযরত আনাস (রা) বলেন-
নবী পাক (সা) একটা আংটি ব্যবহার করতেন
যাতে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ কুন্দানো ছিল। তিনি পেশাব পায়খানার সময় তা
খুলে রেখে যেতেন (মুসলিম, তিরমিযী)।
৬. পেশাব পায়খানা করার সময় বিনা কারণে কথা
বলা, কাশি দেয়া, হাদীস, কুরআনের আয়াত বা কোন ভালো জিনিস পড়া, হাঁচি হলে
আলহামদুলিল্লাহ বলা দুরস্ত নয়। মনে মনে পড়লে দোষ নেই।
৭. পায়কানা বিলকুল উলংগ হয়ে অথবা বিনা কারণে শুয়ে বা দাঁড়িয়ে পেশাব পায়খানা করা ঠিক নয়।
৮. মাঠে পায়খানা করতে হলে বসার পূর্বে এবং টয়লেট বা পায়খানায় প্রবেশ কারার আগে নিম্নের দোয়া পড়া উচিত:
আরবী****************১০৮******)
হে আল্লাহ! দুস্কৃতিকারী নারী-পুরুষ ও জ্বীন থেকে তোমার পানাহ (আশ্রয়) চাই- (বোখারী)
পায়খানা শেষ করার পর বাইরে এসে এ দোয়া পড়তে হয়:
(আরবী************১০৮*****)
আল্লাহর শোকর যিনি আমার মলমূত্রের কষ্ট
দূর করে দিয়ে আমাকে শান্তি দান করেছেন- (নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)। পায়খানা থেকে
বেরুবার পর উপরের দোয়া মনে না থাকলে শুধু এতটুকু পড়লেও হবে (আরবী***) হে
আল্লাহ! আমি তোমার মাগফেরাত চাই।
৯. আবদ্ধ পানিতে বা স্রোতে পেশাব না করা
উচিত। হযরত জাবের (রা) বলেন, নবী (সা) স্রোতের পানিতে পেশাব করতে নিষেধ
করেছেন। তিনি আরও বলেন, নবী (সা) আবদ্ধ পানিতেও পেশাব করতে নিষেধ করেছেন-
(মুসলিম, নাসায়ী)
এস্তেঞ্জার আদব ও হুকুম
১. পেশাব পায়খানার পর আবশ্যক মতো মাটির
ঢিলা দিয়ে মলদ্বার ভালো করে পরিস্কার করে তারপর পানি দিয়ে তাহারাত হাসিল
করা মসনুন। ঢিলা পাওয়া না গেলেও শুধু পানি দিয়েও পাক সাফ করা যায়। শুধু
পানি দিয়ে এস্তেঞ্জা করতে হলে পেশাবের পর এতোটা সময় কাটাতে হবে যেন পরে
ফোঁটা পেশাব না বেরয়। তারপর পানি দিয়ে এস্তেঞ্জা করবে।
২. পেশাবের পর ঢিলা দিয়ে এতক্ষণ ধরে এস্তেঞ্জা করতে হবে যেন ঢিলা একেবারে শুকিয়ে যায়-হাটাহাটি করে তা করা হোক অথবা অন্য কোন পন্থায়।
৩. ঢিলা দিয়ে এস্তেঞ্জা করার সময় সভ্যতা,
ভদ্রতা, সুরুচি, দ্বীনি মর্যাদা এবং লজ্জা শরমের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
যেখানে নারী, শিশু, পুরুষ সাধারণত চলাফেরা করে সেখানে বিনা দ্বিধায় পায়খানা
বা তহবন্দের মধ্যে হাত দিয়ে হাঁটাহাটি করা, কথাবর্তা বলা এক উরু দিয়ে
অন্যটাকে চাপ দেয়ার বিচিত্র ভঙ্গি চরম নির্লজ্জতা ও অসভ্যতার পরিচায়ক। এতে
ইসলামী তাহযীব ও রুচিবোধের প্রতি ভ্রন্ত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ কাজ
পায়খানার মধ্যেই করা উচিত অথবা মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে।
৪. পানি, মাটির ঢিল, পাথর, মামুলি পুরানো
কাপড়, চুষে নিতে পারে এমন অন্যান্য জিনিস দিয়ে এস্তেঞ্জা করা যায় যা পাক হয়
এবং যার দ্বারা নাজাসাত দূর হয়। অবশ্য লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যা দিয়ে
এস্তেঞ্জা করা হবে তা যেন কোন মূল্যবান এবং সম্মানের বন্তু না হয়।
৫. গোবর, মল বা এমন ঢিল যা দিয়ে যা দিয়ে
একবার এস্তেঞ্জা করা হয়েছে অথবা এমন বস্তু দিয়ে নাজাসাত দূর হবে না, যেমন
সির্কা, শরবত প্রভৃতি এসব দিয়ে এস্তেঞ্জা করা নিষেধ।
৬. হাড়, কায়লা, কাঁচ অথবা এমন কঠিন বস্তু যা দিয়ে এস্তেঞ্জা করলে কষ্ট হতে পারে এসব দিয়ে এস্তেঞ্জা নিষেধ।
৭. লোহা, তামা, পিতল, সোনা-চাঁদি এবং অন্যান্য ধাতব দ্রব্য দিয়ে এস্তেঞ্জা করা নিষেধ।
৮. যেসব বস্তু পশুর খাদ্য, যেমন ঘাস,
পাতা, খড় ইত্যাদি। মূল্যবান বস্তু যেমন কাপড়, মানবদেহের অংশ বিশেষ, যেমন
চুল, গোশত ইত্যাদি। মসজিদের বিছারার টুকরা, ঝারণ প্রভৃতি। লেখার কাগজ যার
উপর লেখা যাবে, যমযম পানি, ফলের ছাল মোট কথা মানুষ এবং পশু যেসব বস্তু থেকে
উপকার লাভ করে এবং যার সম্মান করা জরুরী সে সব দ্বারা এস্তেঞ্জা নিষেধ।
৯. যদি মল মলদ্বারের বাইরে ছড়িয়ে না পড়ে তাহলে এস্তেঞ্জা করা সুন্নত মুয়াক্কাদাহ। আর ছড়িয়ে পড়লে ফরয।
১০. পেশাব পায়খানার দ্বার দিয়ে অন্য কোন বস্তু যেমন রক্ত, পুঁজ প্রভৃতি বের হলে এস্তেঞ্জা করতে হবে।
১১. এস্তেঞ্জা বাম হাতে করতে হবে। এস্তেঞ্জার পর মাটি বা সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, নবী (সা) যখন
পায়খানায় যেতেন তখন আমি একটি পিতলের পাত্রে তাঁকে পানি দিতাম। তিনি
এস্তেঞ্জা করে মাটিতে হাত ঘষে সাফ করতেন। – (আবু দাউদ, নাসায়ী)
0 comments:
Post a Comment