Tuesday, November 1, 2016

গোসলের বিস্তারিত বিবরণ

গোসলের পারিভাষিক অর্থ
অভিধানে গোসলের অর্থ হলো সমস্ত শরীর ধুয়ে ফেলা এবং ফেকাহর পরিভাষায় তার অর্থ হলো শরীয়তের বলে দেয়া বিশেষ পদ্ধতি অনুযায়ী নাপাকী দুর করার উদ্দেশ্যে অথবা সওয়াবের আশায় সমস্ত শরীর ধোয়া।
গোসল সম্পর্কে সাতটি হেদায়েত
১. গোসলখানয় অথবা খোলা জায়গায় গোসল করতে হলে তহবন্দ, নেকাব অথবা অন্য কাপড় পড়ে গোসল করতে হবে।
২. হামেশা পর্দা করা স্থানে গোসল করতে হয় যাতে করে পর পুরুষ বা পর স্ত্রীর নজরে না পড়ে।
এরূপ স্থানে না হলে লংগি প্রভৃতি বেঁধে গোসল করবে। যদি বাঁধাবারও কিছু না থাকে তাহলে আঙ্গুল দিয়ে চারদিকে আঁক টেনে বিসমিল্লাহ বলে বসে বসে গোসল করবে।
৩. মেয়েদের উচিত সর্বদা বসে গোসল করা। পুরুষ যদি উলংগ হয় তাহলে বসে বসেই গোসল করবে। তাবে লুংগি প্রভৃতি পরে দাঁড়িয়ে গোসল করতে দোষ নেই।
৪. গোসলের সময় কথাবার্তা না বলা উচিত। বিশেষ প্রয়োজন হলে অন্য কথা।
৫. উলংগ হয়ে গোসল করতে কেবলামুখী হওয়া চলবে না।
৬. সর্বদা পাক-সাফ জায়গায় গোসল করবে। গোসলের জায়গায় পেশাব প্রভৃতি করা থেকেও বিরত থাকবে হবে।
৭. যেসব জিনিস অযুতে মাকরূহ তা সবই গোসলে মাকরূহ। এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। গোসলের সময় অযুর দোয়া পড়া মাকরূহ।
গোসলের মসনুন তরীকা
সুন্নাত মুতাবিক গোসলের পদ্ধতি এই যে, ডান হাতে পানি নিয়ে দু‘হাত কব্জি পর্যন্ত ধুবে। তারপর এস্তেঞ্জা করবে তা এস্তেঞ্জারস্থানে কোন নাজাসাত থাক বা না থাক। তারপর শরীরে কোথাও নাজাসাত লেগে থাকলে তা সাফ করতে হবে। তারপর সাবান দিয়ে দু‘হাত ভালো করে ধুয়ে অযু করবে। কুল্লি করার সময় কণ্ঠদেশে এবং নাকের ভেতর ভালো করে পানি পৌছাতে হবে। গোসলের স্থানে পানি জমা হয়ে থাকলে গোসলের পর পা ধুবে। গোসল যদি ফরজ হয় তাহলে অযুতে বিসমিল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন দোয়া পড়বে না। অযুর পর মাথায় পানি ঢালবে, তারপর ডান কাঁধের উপর, তারপর বাম কাঁধের উপর। সমস্ত শরীর ভালোভাবে ঘষতে হবে। সাবান দিয়ে হোক বা খালি হাতে হোক, যেন কোন স্থান শুকনো না থাকে এবং শরীর ভালভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়।
তারপর দু‘বার এভাবে সমস্ত শরীর ভালভাবে পানি ঢালতে হবে যেন কোন স্থান শুকনো থাকার আশংকা না থাকে। অযুর সময় পা ধোয়া হয়ে না থাকলে, এখন পা ধুতে হবে। তারপর সমস্ত শরীর কোন কাপড় বা গামছা তোয়ালে দিয়ে ভাল করে মুছে ফেলতে হবে।

গোসলের ফরয

গোসলের মাত্র তিন ফরয
১. কুল্লি করা। কুল্লি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কণ্ঠদেশ পর্যন্ত সমস্ত মুখে পানি পৌছে।
২. নাকে পানি দেয়া।
৩. সমস্ত শরীরে পানি দেয়া যেন চুল পরিমাণ কোন স্থানে শুকনো না থাকে। চুলের গোড়েয় এবং নখের ভেতর পানি পৌছতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে এ তিনের নামই গোসল। এ তিনটির কোন একটি ছুটে গেলে গোসল হয় না।
চুলের খোঁপা এবং অলংকারের হুকুম
১. খোঁপা খোলা ব্যতীত চুলের গোড়ায় পানি পৌছলে, মেয়েদের জন্যে খোঁপা অথবা বেনী খোঁলার দরকার হবে না। তবে চুল যদি খুব ঘন হয় অথবা খোঁপা এমন শক্ত করে বাঁধা আছে যে, তা না খুললে পানি পৌছবে না, তাহলে খুলতেই হবে।
২. চুল যদি খোলা হয় তাহলে সব চুল ভিজানো এবং গোড়া পর্যন্ত ভালো করে পানি পৌছাতে হবে যেন একটিও শুকনো না থাকে।
৩. পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে এবং মেয়েদের মতো খোঁপা বাঁধে অথবা এমনি একত্রে বেঁধে রাখে, তাহলে খুলে প্রত্যেক চুল এবং তার গোড়ায় পানি পৌছাতে হবে।
৪. আট সাট অলংকার যেমন আংটি, গলাবন্দ প্রভৃতি এবং ঐসব অলংকার যা ছিদ্র করে পরা হয়, যেমন নাকের বালি, কানের রিং বা দুল প্রভৃতি, তাহলে সেসব নড়ায়ে চাড়ায়ে তার নীচে পানি পৌছাতে হবে।
গোসলের সুন্নাত
১. আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং সওয়াবের নিয়তে পবিত্রতা অর্জন করা।
২. সুন্নাতের ক্রমানুসারে গোসল করা এবং প্রথমে অযু করা।
৩. দু‘হাত কব্জা পর্যন্ত ধোয়া।
৪. শরীর থেকে নাপাক দূর করা এবং ঘষে ঘষে ধোয়া।
৫. মিসওয়াক করা।
৬. সারা শরীরে তিনবার পানি দেয়া।
গোসলের মুস্তাহাব
অর্থাৎ যেসব কাজ করা গোসলে মুস্তাহাব
১. এমন স্থানে গোসল করা যেন মানুষের নজরে না আসে। দাঁড়িয়ে গোসল করলে কাপড় পরা অবস্থায় করতে হবে।
২. ডান দিকে প্রথমে এবং বাম দিকে পরে ধোয়া।
৩. পাক জায়গায় গোসল করা।
৪. অপব্যয় হয় এমন বেশী পানি ব্যবহার না করা এবং এত কম পানি ব্যবহার না করা যাতে শরীর ভালোভাবে ভিজে।
৫. বসে গোসল করা।

গোসলের হুকুম

গোসলের প্রকার
গোসল তিন উদ্দেশ্যে করা হয়।
১. হাদাসে আকবার থেকে পাক হওয়ার জন্যে। এ গোসল ফরয।
২. সওয়াবের নিয়তে। এ গোসল সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
৩. শরীরকে ধুলাবালি ও ময়লা থেকে পরিস্কার করা। গরমের সময় আরাম লাভ করার জন্যে। এ গোসল মুবাহ।
গোসল ফরয হওয়ার অবস্থা
চার অবস্থায় গোসল ফরয হয়।
১. বীর্যপাত হলে।
২. পুরুষাংগের মাথা স্ত্রীর অংগে প্রবেশ করালে।
৩. হায়েয হলে।
৪. নেফাসের রক্ত বেরুলে।
গোসল ফরয হওয়ার প্রথম অবস্থা
কামভাবসহ পুরুষ বা নারীর বীর্যপাত হলে গোসল ফরয হয়। বীর্যপাত অনেক ভাবে হতে পারে, যেমন-
  • রাতে বা দিনে স্বপ্নদোষ হলে-স্বপ্নে কিছু দেখে হোক না দেখে হোক।
  • কোন পুরুষ, নারী অথবা কোন প্রাণীর সাথে সাহবাসে বীর্যপাত হলে।
  • চিন্তা ধারণার মাধ্যমে অথবা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী গল্প উপন্যাস পাঠ করে।
  • হস্ত মৈথুন বা অন্য কোন উপায়ে বীর্যপাত হলে।
মোট কথা যেমন করেই হোক কামভাব ও কামেচ্ছাসহ বীর্যপাত হলে গোসল ফরয হবে। [প্রকাশ থাকে যে এখানে যেহেতু গোসল ফরয হওয়ার ফেকাহর হুকুম বর্ণনা করা হচ্ছে সে জন্যে বীর্যপাতের বিভিন্ন অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। নতুবা আপন বিবির সাথে সহবাস এবং স্বপ্নদোষ (ইহতেলাম) ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে বীর্যপাত করা চরম অজ্ঞতা এবং গুনাহের কাজ।]
বীর্যপাত সম্পর্কে কিছু মাসয়ালা
১. কোন উপায়ে কিছুটা বীর্য বের হলো এবং সে ব্যক্তি গোসল করলো। তারপর আবার কিছুটা বীর্য বের হলো তার প্রথম গোসল বাতিল হবে, দ্বিতীয় বার গোসল করতে হবে।
২. এক ব্যক্তি ঘুমের ঘোরে স্বপ্নদোষে যৌন আস্বাদ উপভোদ করলো। কিন্তু ঘুম থেকে জাগার পর কাপড়ে বীর্যের কোন চিহ্ন দেখতে পেলো না। তার গোসল ফরয হবে না।
৩. ঘুম থেকে উঠার পর কেউ দেখলো তার কাপগে বীর্য লেগে আছে কিন্তু স্বপ্নদোষের (ইহতেলাম) কথা মনে পড়ে না। তার গোসল ওয়াজেব হবে।
৪. ঘুমের মধ্যে যৌন আস্বাদ পাওয়া গেছে কিন্তু কাপড়ে যে চিহ্ন বা আদ্রতা সে সম্পর্কে নিশ্চিত যে তা বীর্য নয়, মুযী বা অদী। তাহলে সকল অবস্থায় গোসল ফরয হবে।
৫. কারো খাতনা হয়নি এবং বীর্য বের হয়ে চামাড়ার মধ্যে রয়ে গেছে যা কেটে ফেলা হয়। তাহলেও গোসল ফরয হবে।
৬. কারো যে কোন উপায়ে যৌন আস্বাদ উপভোগ হয়েছে কিন্তু ঠিক বীর্যপাতের সময় লিংগ চেপে ধরে বীর্য বাইরে আসতে দেয়নি। তারপর চরম আনন্দ শেষ হওয়ার পর বীর্য বের হলো। (গোসল ফরয হবে)
গোসল ফরয হওয়ার দ্বিতীয় কারণ
পুরুষের পুংলিঙ্গ যদি কোন জীবিত মানুষের দেহে প্রবেশ করে তাহলে গোসল ফরয হবে এ জীবিত মানুষ নারী হোক, পুরুষ হোক, মুখান্নাস বা হিজড়া হোক, দেহের প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে হোক, বাহ্যদ্বার দিয়ে হোক, বীর্য বেরুক অথবা না বেরুক সকল অবস্থায় গোসল ফরয হবে।
কর্মকারী এবং যার উপর কর্ম করা হলো উভয়ে বালেগ ও সজ্ঞান হলে উভয়ের উপর গোসল ফরয হবে। নতুবা দু‘জনের মধ্যে যে বালেগ সজ্ঞান হবে শুধু তার উপর ফরয হবে।[এখানে যা কিছু বলা হচ্ছে গোসল ফরয হওয়ার হুকুম বলা হচ্ছে। নতুবা নিজের বিবির সামনের দ্বার ব্যতীত পেছন দ্বার (বাহ্যদ্বার) এবং অন্য মানুষের যে কোন দ্বারে নিজের লিংগ প্রবেশ করানো ভয়ানক গুনাহ।]
গোসল ফরয হওয়ার কতিপয় মাসয়ালা
১. কোন পুরুষ যদি তার পুরুষাংগ কোন অল্প বয়স্ক বালিকার অংগে প্রবেশ করায় এবং এ আশংকা না হয় যে, তার অগ্র পশ্চাৎ অংগ সে কারণে ফেটে একাকার হয়ে গেছে, তাহলে পুরুষের উপর গোসল ফরয হবে।
২. কোন মেয়ে লোক যদি কামরিপুর তাড়নায় অধীর হয়ে কোন কামহীন পুরুষের অথবা কোন পশুর বিশেষ অংগ অথবা কোন বন্তু প্রভৃতি তার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয় তাহলে তার বীর্যপাত হোক বা না হোক গোসল ফরয হবে।
৩. খাসি করা পুরুষের পুরুষাংগ যদি কোন নারী বা পুরুষের দেহে প্রবেশ করে তথাপি গোসল ফরয হবে। উভয়ে আকেল ও বালেগ হলে উভয়ের উপর, নতুবা যে আকেল ও বালেগ হবে তার উপর।
৪. কোন পুরুষ তার পুংলিঙ্গে কাপড়, রবার অথবা অন্য কিছু জড়িয়ে কারো দেহে প্রবেশ করালে গোসল ফরয হবে।
গোসল ফরয হওয়ার তৃতীয় কারণ
গোসল ফরয হওয়ার তৃতীয় কারণ বা অবস্থা হলো হায়েযের রক্ত। হায়েযের মুদ্দত কমপক্ষে তিন দিন তিন রাত। উর্ধপক্ষে ১০ দিন ১০ রাত। দু‘হায়েযের মধ্যে পাক থাকার মুদ্দত কমপক্ষে ১৫ দিন। অর্থাৎ তিন দিনের কম যদি রক্ত আসে তাহলে গোসল ফরয হবে না। এক হায়েয বন্ধ হওয়ার পর ১৫ দিনের পূর্বে এলে তাও হায়েয হবে না। সে জন্যে গোসল ফরয হবে না।
গোসল ফরয হওয়ার চতুর্থ কারণ
চতুর্থ কারণ হলো নেফাসের রক্ত। ঐ রক্তের উপর নেফাসের হুকুম হবে যা অর্ধেক বাচ্চা বের হওয়ার পর আসে। তার পূর্বে যে রক্ত আসবে তা নেফাসের নয়। তার জন্যে গোসল ফরয হবে না। নেফাসের মুদ্দত উর্ধপক্ষে ৪০ দিন ৪০ রাত। তারপর যে রক্ত আসবে তাতে গোসল ফরয হবে না। বাচ্চা পয়দা হওয়ার পর কোন মেয়েলোকের যদি মোটেই কোন রক্ত না আসে তাহলে গোসল ফরয হবে না। অবশ্য সাবধানতার জন্যে গোসল করা ভালো।
যে যে অবস্থায় গোসল ফরয হয় না
১. মুযী এবং অদী বের হলে এবং এস্তেহাযার রক্ত বেরুলে গোসল ফরয হবে না।
২. পুংলিঙ্গ তার মাথার কম পরিমাণ ভেতরে প্রবেশ করলে গোসল ফরয হবে না।
৩. স্ত্রী লিঙ্গে পুরুষের বীর্য সহবাস ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে প্রবেশ করলে গোসল ফরয হবে না।
৪. কারো নাভিতে পুরুষাংগ প্রবেশ করলে গোসল ফরয হবে না।
যে যে অবস্থায় গোসল সুন্নাত
১. জুমার দিন জুমার নামাযের জন্যে গোসল সুন্নাত।
২. দুই ঈদের নামাযের জন্যে গোসল সুন্নাত।
৩. হজ্ব অথবা ওমরার ইহরামের জন্যে গোসল সুন্নাত।
৪. হাজীদরে জন্যে আরাফাতের দিনে বেলা পড়ার পর গোসল সুন্নাত।
যে যে অবস্থায় গোসল মুস্তাহাব
১. ইসলাম গ্রহণের জন্যে গোসল করা মুস্তাহাব।
২.  মুর্দা গোসল দেয়ার পর গোসল করা মুস্তাহাব।
৩. মস্তিস্ক বিকৃতি ও সংজ্ঞাহীনতা দূর হওয়ার পর গোসল করা মুস্তাহাব।
৪. শাবানের ১৫ই রাতে গোসল মুস্তাহাব।
৫. মক্কা মুয়াযযামা ও মদীনা শরীফে প্রবেশের আগে গোসল মুস্তাহাব।
৬. সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহনের নামাযের জন্য গোসল মুস্তাহাব।
৭. মুযদালফায় অবস্থানের জন্যে ১০ তারিখের ফজর বাদে গোসল।
৮. পাথর মারার সময় গোসল।
৯. কোন গুনাহ থেকে তওবা করার জন্যে গোসল।
১০. কো দ্বীনি মাহফিল বা অনুষ্ঠানে যোগদানের পূর্বে এবং নতুন পোশাক পরার পূর্বে গোসল।
১১. সফর থেকে বাড়ী পৌছার পর গোসল।
যে যে অবস্থায় গোসল মুবাহ
ধুলাবালি ময়লা থেকে শরীর রক্ষা করার জন্যে, গরমের তাপ থেকে শরীর রক্ষা করে ঠান্ডা করার জন্যে শ্রান্তি ও ক্লান্তি দূর করার জন্যে গোসল করা মুবাহ।
গোসলের বিভিন্ন মাসয়ালা
১. কেউ যদি হাদাসে আকবারের অবস্থায় নদী-নালা বা পুকুরে ডুব দেয় অথবা বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে এবং তার সমস্ত শরীরে যদি পানি প্রবাহিত হয়ে যায় সে কুল্লিও করে, নাকে পানিও দেয় তাহলে তার গোসল আদায় হয়ে যাবে এবং হাদাসে আকবার থেকে পাক হয়ে যাবে।
২. কেউ যদি গোসলের পূর্বে অযু না করে তাহলে গোসলের পর আলাদা করে অযু করার দরকার নেই। কেননা, গোসলে ঐসব অংগই ধোয়া হয়েছে যা অযুতে ধোয়া ফরয ছিল। সে জন্যে গোসলের সাথে অযুও হয়েগেছে।
৩. গোসল করার সময় কুল্লি করা হয়নি তবে খুব মুখ ভরে পানি খেয়ে নিয়েছে যাতে সমস্ত মুখে পানি পৌছে গেছে। এমন অবস্থায় গোসল দুরস্ত হবে। কেননা, কুল্লি করার উদ্দেশ্যেই হলো মুখের সব স্থানে পানি পৌছানো এবং তা হয়ে গেছে।
৪. মাথায় খুব ভাল করে তেল মালিশ করা হয়েছে অথবা শরীরেও মালিশ করা হয়েছে। তারপর শরীরে পানি পড়ার পর পানি পিছলে পড়লো শরীরের লোম কুপে ঢুকলো না। তাতে কোন ক্ষতি নেই। গোসল দুরস্ত হবে।
৫. নখের মধ্যে আটা লেগে শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে অথবা অন্য কোন সৌন্দর্য সামগ্রী লাগানো হয়েছে। তা উঠিয়ে না ফেললে নীচ পর্যন্ত পানি পৌছে না। এমন অবস্থায় তা উঠিয়ে না ফেললে গোসল দুরস্ত হবে না।
৬. রোগের কারণে মাথায় পানি দেয়া ক্ষতিকর হলে মাথা ব্যতীত সমস্ত শরীরে পানি দিলে গোসল হয়ে যাবে। ক্ষতির আশংকা না থাকলে মাথায় পানি দিতে হবে।
হাদাসে আকবারের হুকুমাবলী
১. হাদাসে আকবার অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা হারাম। তবে অনিবার্য কারণে প্রবেশ করতে হলে তায়াম্মুম করে যাওয়ার অনুমতি আছে। যেমন কারো বাসস্থানের পথ মসজিদের ভেতর দিয়ে এবং বাইরে বেরুবার অন্য কোন পথ নেই এবং পানির ব্যবস্থাও মসজিদে। বাইরে কোন পানির কল, কুয়া বা পুকুর নেই। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম করে মসজিদে যাওয়া যায়। কিন্তু কাজ সেরে তত্ক্ষণাৎ বাইরে আসতে হবে।
২. হাদাসে আকবার অবস্থায় বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা হারাম।
৩. কুরআন পাক তেলাওয়াতও হারাম, এক আয়াতই হোক বা না কেন।
৪. কুরআন পাক স্পর্শ করাও হারাম। অবশ্যি যেসব শর্তে হাদাসে আসগার অবস্থায় স্পর্শ করা জায়েয, সেসব শর্তে জাযেয হবে।
৫. যেসব কাজ হাদাসে আসগার অবস্থায় নিষিদ্ধ তা হাদাসে আকবারেও নিষিদ্ধ। যেমন নামায পড়া, সিজদায়ে তেলওয়াত, সিজদায়ে শোকর প্রভৃতি।
৬. হাদাসে আকবার অবস্থায় ঈদগাহ যাওয়া দুরস্ত এবং দ্বীনি তালীমের স্থনে যাওয়াও জায়েয।
৭. কুরআন পাকের ঐসব আয়াত তেলাওয়াত করা জাযেয যার মধ্যে হামদ, তাসবীহ এবং দোআ আছে, যেমন-
(আরবী****************১৩৮*******)
৮. দোয়ার নিয়াতে সুরায়ে ফাতেহা এবং দোয়া কুনুত পড়া জায়েয।
৯. হায়েয ও নেফাস অবস্থায় রোযা রাখা হারাম।
১০. হায়েয ও নেফাসের সময় বিবির সাথে সহবাস হারাম। অবশ্য সহবাস ব্যতীত চুমো দেয়া, আদর করা, একত্রে শয়ন করা প্রভৃতি জায়েয, বরঞ্চ এ অবস্থায় বিবির সাথে মেলামেশা বন্ধ করা মাকরুহ।

0 comments:

Post a Comment