Tuesday, November 1, 2016

তায়াম্মুমের বয়ান


তাহারাত আসিল করার আসল মাধ্যম পানি যা আল্লাহ তায়ালা তাঁর বিশেষ মেহেরবানীতে বান্দাদের জন্যে প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করে রেখেছেন। তথাপি এমন অবস্থার সৃষ্টিও হতে পারে যে, কোন স্থানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না, অথবা পাওয়া গেলেও পানি দিয়ে তাহারাত আসিল করা মানুষের সাধ্যের বাইরে, অথবা পানি ব্যবহারে ভীষণ ক্ষতির আশংকা রয়েছে। এসব অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা অতিরিক্ত মেহেরবানী এই যে, তিনি মাটি দিয়ে তাহারাত হাসিল করার অনুমতি দিয়েছেন। তার পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন যাতে করে বান্দাহ দ্বীনের উপর আমল করতে কোন অসুবিধা বা সংকীর্ণতার সম্মুখীন না হয়।
কুরআনে আছে-
(আরবী*******************************১৩৯*************)
“আর তোমরা যদি পানি না পাও, তাহলে পাক মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তাতে হাত মেরে চেহারা এবং হাত দুটির উপর মুসেহ কর। আল্লাহ তোমাদেরকে সংকীর্ণতার মধ্যে ফেলতে চাননা। বরঞ্চ তিনি তোমাদেরকে পাক করতে চান এবং চান যে তোমাদের উপর তাঁর নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিবেন যাতে তোমরা শোকরগোযার হতে পার“। (মায়েদাহ: ৬)

তায়াম্মুমের অর্থ

অভিধানে তায়াম্মুম শব্দের অর্থ হচ্ছে ধারণা ও ইচ্ছা করা। ফেকাহের পরিভাষায় এর অর্থ হলো মাটির দ্বারা নাজাসাতে হুকমী থেকে পাক হওয়ার এরাদা করা। তায়াম্মুম অযু এবং গোসল উভয়ের পরিবর্তে করা যায়। অর্থাৎ তার দ্বারা হাদাসে আসগার এবং হাদাসে আকবার উভয় থেকেই পাক হওয়া যায়। তায়াম্মুমের এ অনুমতি নবী পাক (সা) এর উম্মতের উপর এক বিশিষ্ট দান। যে উম্মতের কাজের পরিধি ও পরিসর গোটা দুনিয়ার মানবতা এবং যার সময়কাল কেয়ামত পর্যন্ত, তার এ সুবিধা (concession) লাভ করার অধিকার ন্যায়সঙ্গতভাবেই রয়েছে যাতে করে যে কোন যুগে যে কোন অবস্থায় এবং দুনিয়ার যে কোন প্রান্তে দ্বীনি আহকামের উপর আমল করার ব্যাপারে উম্মাকে কোন সংকীর্ণতা বা অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।

কি কি অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয

১. এমন এক স্থানে অবস্থান যেখানে পানি পাওয়ার কোন আশা নেই। কারো কাছে জানারও উপায় নেই এবং এমন কোন নিদর্শনও পাওয়া যায়না যে, এখানে পানি পাওয়া যেতে পারে। অথবা পানি এক মাইল অথবা আরও দূরবর্তী স্থানে আছে এবং সেখানে যেতে বা সেখান থেকে পানি আনতে ভয়ানক কষ্ট হবার কথা। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।
২. পানি আছে তবে তার পাশে শত্রু আছে অথবা হিংস্র পশু বা প্রাণী আছে, অথবা ঘরের বাইরে পানি আছে কিন্তু চোর-ডাকাতের ভয় আছে, অথবা কুয়া আছে কিন্তু পানি উঠাবার কিছু নেই, অথবা কোন মেয়ে মানুষের জন্যে বাইরে থেকে পানি আনা তার ইযযাত আবরুর জন্যে ক্ষতিকারক। এমন সব অবস্থাতে তায়াম্মু জায়েয।
৩. পানি নিজের কাছেই রয়েছে। কিন্তু পরিমাণে এতো কম যে, যদি তা দিয়ে দিয়ে অযু বা গোসল করা হয় তাহলে পিপসায় কষ্ট হবে অথবা খানা পাকনো যাবেনা, তাহলে তায়াম্মুম জায়েয হবে।
৪. পানি আছে কিন্তু ব্যবহারে রোগ বৃদ্ধির আশংকা আছে, অথবা স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে অবশ্য কোন কুসংস্কারবশে নয়, যেমন ধরুন, কোন ব্যক্তি শীতের দিনে গরম পানি দিয়ে অযু গোসল করতে অভ্যস্ত, তার অযু বা গোসলের প্রয়োজন হলে এবং পানিও আছে কিন্তু তা ঠাণ্ডা পানি। তার অভিজ্ঞাতা আছে যে, ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করলে তার অসুখ হয় অথবা স্বাস্থ্যের হানি হয়। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয। গরম পানির অপেক্ষায় নাপাক থাকা অথবা নামায কাযা করা ঠিক নয়, বরঞ্চ তায়াম্মুম করে পাক হবে এবং নামায ইত্যাদি আদায় করবে।
৫. পানি পাওয়া যায় কিন্তু পানিওয়ালা ভয়ানক চড়া দাম চায়, অথবা পানির দাম ন্যায়সংগত কিন্তু অভাবগ্রস্ত লোকের সে দাম দেয়ার সংগতি নেই, অথবা দাম দেয়ার মতো পয়সা আছে কিন্তু পথ খরচের অতিরিক্ত নেই এবং তা দিয়ে পানি কিনলে অসুবিধায় পড়ার আশংকা আছে এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।
৬. পানি আছে কিন্তু এতো শীত যে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারে প্রাণ যেতে পারে অথবা পক্ষাঘাত রোগ হতে পারে অথবা কোন রোগ যেমন নিউমুনিয়া প্রভৃতির আশংকা আছে, পানি গরম করার সুযোগও নেই এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।
৭. অযু বা গোসল করলে এমন নামায চলে যাওয়ার আশংকা আছে যার কাযা নেই, যেমন জানাযা, ঈদের নামায, কসুফ ও খসুফের নামায, তাহলে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে।
৮. পানি ঘরেই আছে কিন্তু এতো দুর্বল যে উঠে পানি নেয়ার ক্ষমতা নেই, অথবা টিউবওয়েল চালাতে পারবে না। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।
৯. কেউ রেল, জাহায অথবা বাসে সফর করছে। যানবাহন ক্রমাগত চলতেই আছে এবং যানবাহনে পানি নেই, অথবা পানি আছে কিন্তু এতো ভিড় যে তাতে অযু করা সম্ভব নয়, অথবা যানবাহন কোথাও থামলে এবং নীচে নামাই গেল না এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।
১০. শরীরের অধিকাংশ স্থানে যখম অথবা বসন্ত হয়েছে তাহলে তায়াম্মুম জায়েয।
১১. সফরে পানি সংগে আছে। কিন্তু সামনে কোথাও পানি পাওয়া না যেতে পারে যার ফলে পিপাসায় কষ্ট হবে। অথবা প্রাণ যাওয়ারই আশংকা আছে এমন অবস্থায় পানি সংরক্ষণ করে তায়াম্মুম করা জায়েয।

তায়াম্মুমের মসনুন তরীকা

বিসমিল্লহির রাহমানির রাহীম‘  বলে তায়াম্মুমের নিয়ত করবে তারপর দুহাতের তালু একটু প্রসারিত করে ধীরে পাক মাটির উপর মারবে। বেশী ধূলাবালি হাতে লেগে গেলে ঝেড়ে নিয়ে অথবা মুখ দিয়ে ফুঁক দিয়ে তা ফেলে দেবে। তারপর দুহাত এভাবে সমস্ত মুখমণ্ডলের উপর মৃদু মর্দন করবে যাতে চুল পরিমাণ স্থান বাদ পড়ে না যায়। দাঁড়িতে খেলালও করতে হবে। তারপর দ্বিতীয় বার এভাবে মাটির উপর হাত মেরে এবং হাত ঝেড়ে নিয়ে প্রথমে বাম হাতের চার আংগুলের মাথায় নিম্নভাগ দিয়ে ডান হাতের আংগুলের উপর থেকে কনুই পর্যন্ত নিয়ে যাবে। তারপর বাম হাতের তালু কনুইয়ের উপরের অংশের উপর মর্দন করে হাতের পিঠের উপর দিয়ে ডান হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত নিয়ে যাবে এবং আঙ্গুলগুলোর খেলালও করবে। এভাবে ডান হাত দিয়ে বাম হাত মর্দন করবে। হাতে কোন ঘড়ি বা আংটি থাকলে তা সরিয়ে তার নীচেও মর্দন করা জরুরী।

তায়াম্মুমের ফরযগুলো

তায়াম্মুমের তিন ফরয :
১. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে পাক হওয়ার নিয়ত করা।
২. দুহাত মাটির উপর মৃদু আঘাত করে সমস্ত চেহারার উপর মর্দন করা।
৩. তারপর দু‘হাত পাটির উপর মৃদু আঘাত করে বা মেরে নিয়ে কনুই পর্য়ন্ত দুহাত মর্দন করা।

তায়াম্মুমের সুন্নাত

১. তায়াম্মুমের প্রথমে বিসমিল্লাহ বলা।
২. মসনূন তরীকায় তায়াম্মুম করা। অর্থাৎ প্রথমে চেহারা মুসেহ করা এবং তারপর দুহাত কনুই পর্যন্ত মুসেহ করা।
৩. পাক মাটির উপর হাতের ভেতর দিক মারতে হবে, পিঠের দিক না।
৪. হাত মাটিতে মারার পর মাটি ঝেড়ে ফেলা।
৫. মাটিতে হাত মারার সময় আংগুলগুলো প্রসারিত রাখা যাতে ভেতরে ধূলা পৌছে যায়।
৬. অন্ততপক্ষে তিন আঙ্গুল দিয়ে চেহেরা ও হাত মুসেহ করা।
৭. প্রথম ডান হাত পরে বাম হাত মুসেহ করা।
৮. চেহেরা মুসেহ করার পর দাড়ি খেলাল করা।

যেসব বন্তু দ্বারা তায়াম্মুম জায়েয না নাজায়েয হয়

১. পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয তো বটে, উপরন্তু মাটির ধরনের সকল বন্তু দিয়েই জায়েয। যে সব বস্তু আগুনে জ্বালালে ছাই হয়ে যায়না নরম হয়ে যায়না, মাটির মতই, যেমন সুরমা, চুন, ইট, পাথর, বাল কংকর মরমর পাথর অথবা আকীকা, ফিরোজা, প্রভৃতি এ সব দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয।
২. ঐ সব জিনিস দিয়ে তায়াম্মুম নাজায়েয যা মাটির ধরণের নয়, যা আগুনে দিলে জ্বলে ছাই হয়ে যায় অথবা গলে যায়। যেমন কাঠ, লোহা, সোনা, চাঁদি, তামা, পিতল, কাঁচ, রং, এবং সকল প্রকার ধাতব দ্রব্যাদি, কয়লা, খাদ্য শস্য, কাপড়, কাগজ, নাইলন, প্লাষ্টিক, ছাই এ সব দিয়ে তায়াম্মুম নাজায়েয।
৩. যেসব জিনিস তায়াম্মুম নাজায়েয তার উপর যদি এতোটা ধুলোবালি জমে যায় যে, হাত মারলে উড়ে যায়, অথবা হাত রেখে টানলে দাগ পড়ে, তাহলে তা দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয হবে। যেমন কাপড়ের থানের উপর ধূলা পড়েছে চেয়ার টেবিলে ধূলা পড়েছে, অথবা কোন মানুষের গায়ে ধুলা পড়েছে।
৪. যেসব জিনিস দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয, যেমন মাটি, ইট, পাথর, মাটির পাত্র প্রভৃতি, এসব যদি একেবারে ধোয়া হয় তার উপর কোনরূপ ধূলাবালি না থাকে, তথাপি তা দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয হবে।

যেসব জিনিসে তায়াম্মুম নষ্ট হয়

১. যেসব জিনিসে অযু নষ্ট হয় ঐসব দিয়ে তায়াম্মুম নষ্ট হবে। যেসব কারণে গোসল ওয়াজেব হয়, সে করণে অযুর বদলে তায়াম্মুম এবং গোসলের বদলে তায়াম্মুম উভয়ই নষ্ট হয়ে যায়।
২. অযু ও গোসল উভয়ের জন্যে একই তায়াম্মুম করলে যদি অযু নষ্ট হয় তাহলে অযুর তায়াম্মুম নষ্ট হবে কিন্তু গোসলের তায়াম্মুম নষ্ট হবে না। তবে গোসল ওয়াজেব হয় এমন কোন কারণ ঘটলে গোসলের তায়াম্মুমও নষ্ট হবে।
৩. যদি নিছক পানি না পাওয়ার কারনে তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে তাহলে পানি পাওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম নষ্ট হবে।
৪. কোন ওযর অথবা রোগের কারণে যদি তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে তারপর ওযর অথবা রোগ রইলো না, তাখন তায়াম্মুম নষ্ট হবে। যেমন কেউ ভয়ানক ঠাণ্ডার জন্যে অযু না করে তায়াম্মুম করলো, তারপর গরম পানির ব্যবস্থা হলো, তখনই তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে।
৫. পানির নিকটে কোন হিংস্র জন্তু, সাপ অথবা শত্রু থাকার কারণে অযুর বদলে তায়াম্মুম করা হয়েছে। এখন যেই মাত্র এ আশংকা দূরীভূত হবে, তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে।
৬. কেউ যদি রেল, জাহায অথবা বাসে ভ্রমনকালে পানির অভাবে তায়াম্মুম করে, অতপর পথ অতিক্রম করার সময় পথে নদীনালা, পুকুর, ঝর্ণা প্রভৃতি দেখতে পায়। কিন্তু যেহেতু চলন্ত গাড়ী বা জাহাযে পানির ব্যবহার করার কোনই সুযোগ নেই, সে জন্যে তার তায়াম্মুম নষ্ট হবেনা।
৭. কোন ব্যক্তি কোন একটি ওযরের কারণে তায়াম্মুম করলো, শেষে ওযর শেষ হলো কিন্তু দ্বিতীয় একটি ওযর সৃষ্টি হলো। তথাপি প্রথম ওযর শেষ হওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে গেল। যেমন ধরুন, পানি না পাওয়ার জন্যে কেউ তায়াম্মুম করলো। কিন্তু পরে পানি পাওয়ার সাথে সাথেই সে এমন অসুস্থ হয়ে পড়লো যে পানি ব্যবহার তার পক্ষে সম্ভব নয়। তথাপি তার প্রথম তায়াম্মুম শেষ হয়ে যাবে যা পানি না পাওয়ার করণে হয়েছিল।
৮. কেউ অযুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করেছিল। তারপর অযু করার পরিমাণ পানি পেয়ে গেল। তখন তার তায়াম্মুম চলে গেল। কেউ যদি গোসলের পরিবর্তে অর্থাৎ হাদাসে আকবার থেকে পাক হওয়ার জন্যে তায়াম্মুম করলো তারপর এতটুকু পানি পেলো যে তার দ্বারা শুধু অযু হতে পারে কিন্তু গোসল হবেনা। তাহলে গোসলের তায়াম্মুম নষ্ট হবেনা।

তায়াম্মুমের বিভিন্ন মাসয়ালা

১. কেউ পানির অভাবে তায়াম্মুম করলো এবং নামায পড়লো। নামায শেষে পানি পেয়ে গেল। এ পানি ওয়াক্তের মধ্যে পেয়ে গেলেও নামায দ্বিতীয় বার পড়তে হবেনা।
২. পানির অভাবে অথবা কোন রোগ বা অক্ষমতার কারণে যখন মানুষ তায়াম্মুমের প্রয়োজন বোধ করে, নিশ্চিত মনে তায়াম্মুম করে দ্বীনি ফারায়েয আদায় করবে। এ ধরনের কোন প্ররোচনা যেন তাকে পেরেশান না করে যে, শুধু পানির দ্বারাইতো পাক হওয়া যায়, তায়াম্মুমের দ্বারা কি হবে। পাক নাপাকের ব্যাপারে পানি বা মাটির উপর নির্ভর করেনা, আল্লাহর হুকুমের উপর নির্ভর করে। আর আল্লাহর শরীয়ত যখন মাটি দ্বারা পাক হয়ে নামাযের অনুমতি দিয়েছে, তখন বুঝতে হবে যে, তায়াম্মুমের দ্বারাও তেমন তাহারাত হাসিল করা যায় যেমন অযু গোসলের দ্বারাও করা যায়।
৩. কেউ যদি মাঠে ময়দানে পানির তালাশ করে তায়াম্মুম করে নামায পড়লো। তারপর জানা গেল যে, নিকটেই পানি ছিল। তথাপি তায়াম্মুম এবং নামায উভয়ই দুরস্ত হবে। অযু করে নামায দুহরাবার দরকার নেই।
৪. সফরে যদি অন্য কারো নিকটে পানি থাকে এবং মনে হয় যে, চাইলে পাওয়া যাবে, তাহলে চেয়ে নিয়ে অযুই করা উচিত। আর যদি মনে হয় যে, চাইলে পাওয়া যাবেনা, তাহলে তায়াম্মুম করাই ঠিক হবে।
৫. অযু এবং গোসল উভয়ের পরিবর্তে তায়াম্মুম দুরস্ত আছে। অর্থাৎ হাদাসে আসগার এবং এবং হাদাসে আকবার উভয় থেকে পাক হওয়ার জন্যে তায়াম্মুম করা দুরস্ত আছে এবং তায়াম্মুমের পদ্ধতি ঐ যা উপরে বয়ান করা হয়েছে। দুইয়ের জন্যে আলাদা আলাদা তায়াম্মুমেরও দরকার নেই। একই তায়াম্মুম উভয়ের জন্যে যথেষ্ট। যেমন, এক ব্যক্তির উপর গোসল ফরয হয়েছে। সে তায়াম্মুম করলো। এখন এ তায়াম্মুমে সে নামাযও পড়তে পারবে। অযুর জন্যে আলাদা তায়াম্মুমের দরকার নেই।
৬. তায়াম্মুমে এ বাধ্যবাধকতা নেই যে, এক তায়াম্মুমে একই ওয়াক্তের নামায পড়তে হবে। বরঞ্চ যতোক্ষণ তা নষ্ট না হয়, ততোক্ষণ কয়েক ওয়াক্তের নামায পড়তে পারবে। এভাবে ফরয নামাযের জন্যে যে তায়াম্মুম করা হবে তা দিয়ে ফরয, সুন্নাত, নফল, জানাযা, সিজদায়ে তেলাওয়াত। কিন্তু শুধু কুরআন পাক স্পর্শ করার জন্যে, মসজিদে প্রবেশ করার জন্যে, কুরআন তেলাওয়াতের জন্যে অথবা কবরস্থানে যাওয়ার জন্যে যে তায়াম্মুম করা হয় তার দ্বারা নামায প্রভৃতি পড়া দুরস্ত হবেনা।
৭. পানি আছে কিন্তু অযু বা গোসল করতে গেলে নামাযে জানাযা, ঈদের নামায, কুসুফ ও খসুফের নামায প্রভৃতি পাওয়া যাবেনা তাহলে এ অবস্থায় তায়াম্মুম করে নামাযে শরীক হওয়া জায়েয। কারণ অন্য সময়ে এ সব নামাযের কাযা হয়না।
৮. কেউ যদি অক্ষম হয় এবং নিজ হাতে তায়াম্মুম করতে না পারে তাহলে অন্য কেউ তাকে মাসনূন তরীকায় তায়াম্মুম করিয়ে দেবে। অর্থাৎ তার হাত মাটিতে মেরে প্রথমে চেহেরা পরে হাত ঠিকমতো মুছে দেবে।
৯. কারো নিকট দুটি পাত্রে পানি আছে, একটিতে পাক পানি অন্যটিতে নাপাক পানি। এখন তার জানা নাই কোনটিতে পাক আর কোনটিতে নাপাক পানি। এ অবস্থায় তায়াম্মুম করা উচিত।
১০. মাটির একটা ঢিলে একই জন কয়েকবার তায়াম্মুম করতে পারে। ঐ একটি ঢিলে কয়েক জনের তায়াম্মুমও জায়েয। যে পটিতে তায়াম্মুম করা হয় তার হুকুম মায়ে মুস্তা‘মালের (ব্যবহৃত পানির) মতো নয়।

0 comments:

Post a Comment