
وَثِيَابَكَ فَطَهِّر )المدثر-4)
নিজেকে পাক পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন (মুদ্দাসসির-৪)।
ثياب শব্দটি ثوب শব্দের বহুবচন। যার
শাব্দিক অর্থ পোশাক। কিন্তু এখানে ثياب (সিয়াব) বলতে শুধুমাত্র
পোশাক-পরিচ্ছদ বুঝানো হয়নি। বরঞ্চ শরীর, পোশাক, মন-মস্তিস্ক মোট কথা সমগ্র
ব্যক্তিসত্তাকে বুঝানো হয়েছে। আরবী ভাষায় طاهر الثوب ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়
যে সকল ক্রটি-বিচ্যুতি ও মলিনতার উর্ধে। কুরআনের নির্দেশের মর্ম এই যে,
স্বীয় পোশাক, শরীর ও মন-মস্তিস্কের মলিনতার অর্থ শির্ক কুফরের ভ্রন্ত
মতবাদ ও চিন্তাধারা এবং চরিত্রের উপর তার প্রতিফলন। শরীর ও পোশাক পরিচ্ছদের
মলিনতার অর্থ এমন অপবিত্রতা ও অশুচিতা যা অনুভব করা যায় এবং রুচিপ্রকৃতির
কাছে ঘৃণ্য। অতপর শরীয়তও যার অপবিত্র (নাপাক) হওয়ার ঘোষণা করেছে।
পবিত্রতার এ গুরুত্বকে সামনে রেখে কুরআন
পাক স্থানে স্থনে এর জন্যে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। কুরআনের দু স্থনে
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন যে, যারা পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে তারা
তাঁর প্রিয়া বান্দাহ।
وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ
যারা পাকসাফ এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন- (তওবাঃ ১০৮)
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
যারা বার বার তওবা করে এবং পাক-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন (বাকারাঃ ২২২)।
নবী পাক (সা) স্বয়ং পবিত্রতা ও
পরিচ্ছন্নতার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত ছিলেন। উম্মতকে তিনি পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতার
জন্যে বিশেষভাবে তাগীদ করেছেন এবং বিভিন্নভাবে তার গুরুত্ব বর্ণনা করে
পাকসাফ থাকার জন্যে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি এরশাদ করেন,
পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক (الطهور شطر لايمان) । অতপর তিনি
বিস্তারিতভাবে ও সুস্পষ্টরূপে তার হুকুম-আহকাম ও পন্থা বলে দিয়েছেন। শুধু
তাই নয়, তিনি স্বয়ং তাঁর বাস্তব জীবনে তা কার্যকর করে তাঁর অনুসারীদেরকে
বুঝাবার এবং হৃদয়ংগম করার হক আদায় করেছেন। অতএব প্রতিটি মুসলমানের
অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে তাঁর সে সব মূল্যবান নির্দেশ মেনে নেয়া স্মরণ রাখা
এবং তদনুযায়ী নিজের যাহের ও বাতেনকে (বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দিক) পবিত্র ও
পরিচ্ছন্ন রাখা। মন ও মস্তিস্ককে ভ্রন্ত মতবাদ ও চিন্তধারা এবং শির্ক ও
কুফরের আকীদাহ-বিশ্বাস থেকে পবিত্র রাখা, নিজের শরীর, পোশাক ও তৎসংশ্লিষ্ট
অন্যান্য বিষয়গুলোকেও সকল প্রকার অপবিত্রতা ও মলিনতা থেকে পাক রাখাও
প্রত্যেকের অপরিহার্য কর্তব্য। শির্ক কুফরের আকীদাহ-বিশ্বাসসমূহ পূর্ববর্তী
অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে প্রকাশ্যে নাজাসাতগুলোর
(নাপাকীর) হুকুম বর্ণনা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে এ বিষয়টি ভালোভাবে মনে রাখতে
হবে যে, পাক-নাপাকের কষ্টিপাথর হলো আল্লাহর শরীয়ত। এ ব্যাপারে নিজের জ্ঞান
বিবেক অথবা রুচি অনুযায়ী কিছু কম-বেশী করার অধিকার কারো নেই। একমাত্র ওসব
বস্তুই পাক যাকে শরীয়ত পাক বলেছে এবং হক শুধু তাই যাকে শরীয়ত হক বলে ঘোষণা
করেছে। ঠিক তেমনি ওসব বস্তু অবশ্য অবশ্যই বাতিল এবং নাপাক যাকে শরীয়ত বাতিল
ও নাপাক বলেছে। অতপর শরীয়ত পাক করার ও পাক হওয়ার যেসব পন্থা পদ্ধতি বলে
দিয়েছে একমাত্র সেভাবেই পবিত্রতা অর্জন করা যায়। এ ব্যাপারে নিজস্ব কোন
রুচি ও ধ্যান-ধারণার বশবর্তী হয়ে পাক-নাপাকের কোন কষ্টিপাথর ঠিক করা এবং
অযথা কুসংস্কার ও সন্দেহের কারণে আল্লাহর সহজ সরল শরীয়তকে দুঃসাধ্য করে
ফেলা শুধু নিজেকেই বিরাট অসুবিধার মাধ্যে ঠেলে দেয়া নয়, বরঞ্চ একটা
সাংঘাতিক রকমের গোমরাহী এবং দ্বীনের সঠিক ধারণা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা। এ
ধরণের ভ্রান্ত ধারণা ও কর্যকলাপের ফলে অনেক সময় মারাত্মক কুফল দেখতে পাওয়া
যায় এবং লোকে শরীয়তকে নিজের জন্যে এক বিরাট মসীবত মনে করে দ্বীন ইসলাম থেকে
দূরে সরে যায়।
0 comments:
Post a Comment