জামায়াতে নামাযের বর্ণনা
কুরআন ও সুন্নায় জামায়াতের সাথে নামাযের
যে তাকীদ এবং ফযীলত বয়ান করা হয়েছে, তার থেকে এ সত্য পরিষ্ফুট হয় যে, ফরয
নামায তো জামায়াতে পড়ারই জিনিস এবং ইসলামী সমাজে জামায়াত ব্যতীত ফরয নামায
পড়ার কোন ধারণাই করা যেতে পারে না। অবশ্য যদি প্রকুত ওযর থাকে তো ভিন্ন
কথা।
কুরআনের নির্দেশ (আরবী***************)
এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর- (বাকারাহ: ৪৩)
মুফাসসিরগণ সাধারণত এ আয়াত থেকে প্রমাণ
করেছেন যে, নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা উচিত- (মায়ালেমুত্তানযীল, খাযেন,
তাফসীর, কাবীর প্রভৃতি)।
দ্বীনের মধ্যে জামায়াতসহ নামাযের অসাধারণ
গুরুত্ব ও তাকীদের অনুমান এর থেকে করুন যে, লড়াইযেল ময়দানে যখন প্রতি
মুহূর্তে দুশমনের সাথের রক্তাক্ত সংঘর্ষের আশংকা হয়, তখনও এ তাকীদ করা
হয়েছে যে, আলাদা, আলাদা নামায না পড়ে বরঞ্চ জামায়াতের সাথেই পড়তে হবে।
তারপর কুরআনে শুধু এ নির্দেশই নেই যে, নামায জামায়াতসহ পড়তে হবে- বরঞ্চ
নামাযের নিয়ম পদ্ধতিও বলে দেয়া হয়েছে-
(আরবী*****************)
-এবং (হে নবী) যখন তুমি মুসলমানদের মধ্যে
থাকবে এবং (লড়াইয়ের অবস্থায়) তাদেরকে নামায পড়াবার জন্যে দাঁড়াবে, তখন উচিত
যে একদল তোমার সাথে দাঁড়াবে, এবং অস্ত্র নিয়ে থাকবে। তারপর যখন তারা সিজদা
আদায় করবে তখন পেছনে চলে যাবে এবং দ্বিতীয় দল যারা এখনও নামায পড়েনি তারা
এসে তোমার সাথে নামায পড়বে। তারাও সতর্ক থাকবে এবং অস্ত্র নিয়ে থাকবে।
(নিসা: ১০২)।
জামায়াতের তাকীদ ও ফযিলত সম্পর্কে নবী পাক
(স) অনেক কিছু বলেছেন। তার গুরুত্ব ও বরকত উল্লেখ করে তিনি তার প্রেরণা
দিয়েছেন এবং জামায়াত পরিত্যাগকারীদের জন্যে কঠিন সতর্ক বাণী উচ্চারণ
করেছেন। তিনি বলেন-
** মুনাফিকদের নিকটে ফযর এবং এশার নাযাম
থেকে বেশী কঠিন কোন নামায নয়। তারা যদি জানতো যে, এ দু’ নামাযের কতখানি
সওয়াব তাহলে তারা সব সময়ে এ দু’ নামাযের জন্যে হাযির হতো। (এমন কি) হাটু
উপর বর করে হামাগুড়ি দিয়ে আসতো।
তারপর তিনি বলেন-
আমার মন বলেছে যে, কোন মুয়াযযিনকে হুকুম
দিই যে, জামায়াতের একামত দিক এবং আমি কাউকে হুকুম দিই যে, সে আমার স্থানে
ইমামতী করুক এবং আমি স্বয়ং আগুনের কুণ্ডলি নিয়ে তাদের ঘরে লাগিয়ে দেই এবং
তাদেরকে জ্বালিয়ে মারি যারা আযান শুনার পরও ঘর থেকে বের হয় না- (বুখারী,
মুসিলম)।
** নামায জামায়াতসহ পড়া একাকী পড়া থেকে সাতাশ গুণ বেশী ফযিলত রাখে –(বুখারী, মুসলম)।
** হযরত আনাস (রা) বলেন, নবী (স) বলেছেন-
যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রত্যেক
নামায নিয়মিতভাবে জামায়তের সাথে আদায় করবে এমনভাবে যে, তাকবীরে উলাও তার
ছটে যাবে না, তাহলে তার জন্যে দু’টি জিনিস থেকে অব্যহতির ফয়সালা করা হয়।
(অর্থাৎ দুটি জিনিস থেকে তার হেফাজত এবং নাজাতের ফায়সালা আল্লাহর তায়ালা
করেন।) একটি জাহান্নামের আগুন থেকে অব্যাহতি এবং দ্বিতীয়টি মুনাফেকী থেকে
অব্যাহতি ও হেফাযত- (তিরমিযী)।
** হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) বলেন, নবী (স) বলেছেন-
হে মুসলমানগণ, আল্লাহ তোমাদের জন্যে
‘সুনানে হুদা’ নির্ধারিত করে দিয়েছেন। অর্থাৎ এমন পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন যা
অবলম্বন করেই উম্মত হেদায়েতের উপর কায়েম থাকতে পারবে। আর এ পাঞ্জেগানা
নামায জামায়াতের সাথে মসজিদে পড়াই হলো ‘সুনানে হুদা’। তোমরা যদি তোমাদের
ঘরে নামায পড়া শুরু কর, যেমন অমুক ব্যক্তির প্রতি ইংগিত করা হয়েছে) তাহলে
তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দেবে। যদি তোমরা নবীর সুন্নাত ছেড়ে দাও
তাহেল হেদায়াতের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে- (মুসিলম)।
** হযরত উবাই বিন কা’বা (রা) –এর বর্ণনা নবী (স) বলেন-
যদি লোক জামায়াতে নামাযের সওয়াব ও
প্রতিদান জানতে পারতো তাহলে তারা যে অবস্থায়ই থাক না কেন দৌড়ে এসে জামায়াতে
শামিল হতো। জামায়াতের প্রথম কাতার এমন, যেন ফেরেশতাদের কাতার। একা নামায
পড়ার চেয়ে দু’জনে নামায পড়া ভালো। তারপর মানুষ যতো বেশী ***১ হবে, ততোই
আল্লাহর নিকটে সে জামায়াত বেশী পছন্দনীয় ও প্রিয় হবে। ***২
** নবী (স) আরও বলেন-
যারা অন্ধকার রাতে জামায়তের নামাযের জন্যে
মসজিদে যায়, তাদেরকে এ সুসংবাদ জানিয়ে দাও যে, কেয়ামতের দিনে তারা
পরিপূর্ণ আলো লাভ করবে- (তিরমিযী)।
**হযরত উসমান (রা) বলেন, নবী (স) এরশাদ করেন-
যে ব্যক্তি এশার নামায জামায়াতে আদায় করে
সে অর্ধেক রাত এবাদত করার সওয়াব পাবে এবং যে ফজরের নামায জামায়াতে পড়বে সে
গোটা রাতের এবাদতের সওয়াব পাবে- (তিরমিযী)।
***১ তাওরাতে আছে যে, উম্মতে মুহাম্মদীর
জামায়াতের নামাযে যতো বেশী মানুষ হবে প্রত্যেক লোকের জন্যে ততোটা সওয়াব
হবে। অর্থাৎ যদি এক হাজার লোক হয়, তাহলে প্রত্যেক এক হাজার নামাযের সওয়াব
পাবে। (ইলমুল ফেকাহ)।
**২ আবু দাওদ।
**হযরত ইবনে আব্বাস (রা)বলেন, নবী (স)
বলেছেন- যে ব্যক্তি আযান শুনার পর জামায়াতে নামায পড়তে আসে না এবং তার না
আসার কোন ওযর ও নেই, তাহলে তার সে নামায কবুল হবে না, যা সে একাকী পড়ে।
জনৈক সাহাবী (রা) জিজ্ঞাসা করেন-ওযর বলতি কি বুঝায়। তার উত্তরে নবী (স) বলেন ‘ভয় অথবা অসুস্থতা’- (আবু দাউদ)।
হযরত আসওয়াদ (রা) বলেন, একদিন আমরা হযরত
আয়েশা (রা)-এর খেদমতে হাযির ছিলাম এমন সময় নামাযের পাবন্দী এবং ফযিলত
সম্পর্কে কথা উঠলো। তখন হযরত আয়েশা (রা) নবী পাক (রা) –এর মৃত্যুশয্যার
বর্ণনা করে বলেন-
একদিন নামাযের ওয়াক্ত হলে নবী (স) বলেন,
আবু বকর (রা) কে বল নামায পড়িযে দিক। আমরা বললাম, আবু বকর নরম দিল লোক।
আপনার জায়গায় দাঁড়ালে নিজেকে সামলাতে পারবে না এবং নামায পড়াতে পারবে না।
নবী পাক (স) আবার হুকুম দিলেন, আবু বকরকে
নামায পড়াতে বল। আমরা আবার ঐ কথাই বললাম। তখন হুযুর (স) বললেন, তোমরা আমার
সাথে এমনভাবে কথা বলছো যেমনভাবে মিসরের মহিলারা হযরত ইউসুফ (আ)-এর সাথে
বলেছিল? তোমরা আবু বকরকে বল নামায পড়িয়ে দিক।
যা হোক হযরত আবু বকর (রা) নামায পড়াবার
জন্যে সামনে এগিয়ে গেলেন। এমন সময়ে নবী পাক (সা)-এর একটু ভালো মনে হলো বলে
দু’জনের উপর ভর দিয়ে মসজিদের দিকে যেতে লাগলেন। সে চিত্র আমার চোখের সামনে
ভাসছে। নবী পাক (স)-এর কদম মুবারক মাটির উপর হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে চলছিল। তার
মানে তাঁর পায়ে এত শক্তি ছিল না যে, পা খাড়া করেন। আবু বকর (রা) মসজিদে
নামায শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি তখন পেছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু নবী পাক
(স) নিষেধ করলেন এবং তাঁর দ্বারাই নামায পড়িয়ে নিলেন- (সহীহ বুখারী)।
জামায়াতের হুকুম
১. পাঁচ ওয়াক্তের নামাযে জামায়ত ওয়াজেব।
কোন ওয়াক্ত মসজিদের বাইরে হলেও ওয়াজেব। যেমন ঘর অথবা ময়দানে। ঘরে জামায়াত
করা জায়েয বটে কিন্তু কোন ওযর ব্যতীত এমন করা ঠিক নয়। মসজিদই জামায়াতে
নামায পড়া উচিত।
২. জুমা এবং ঈদাইনের জন্যে জামায়ত শর্ত। অর্থাৎ জামায়াত ব্যতী না জুমার নামায পড়া যায়, আর না ঈদাইনের নামায।
৩. রমজানের তারাবীহ নামায জামায়াতের সাথে পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, যদিও পূল্ণ কুরআন পাক জামায়তের সাথে পড়া হয়ে থাকে।
৪. নামাযে কুসুফেও জামায়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
৫. রমযানের বেতেরর নামায জামায়াতে পড়া মুস্তাহাব।
৬. নামাযে খসুফে জামায়াত মাকরুহ তাহরীমী।
৭. সাধারণ নফল নামাযেও জামায়াত মাকরুহ যদি
ফরয নামাযের মতো ডেকে নেয়ার জন্যে আযান ও ইকামতের ব্যবস্থা করা হয়। তবে
কোন সময়ে কোন আয়োজন ব্যতিরেকে কিছু লোক একত্র হয়ে নফল নামায জামায়াতে আদায়
করলে কোন দোষ নেই।
জামায়াতে ওয়অজেব হওয়ার শর্ত
১. পুরুষ হওয়া। মেয়েদের জন্যে জামায়াতে নামায ওয়াজেব নয়।
২. বালেগ হওয়া। নাবালেগ বাচ্চাদের জন্যে জামায়াত করা ওয়াজেব নয়।
৩. জ্ঞান থাকা। বেহুশ, পাগল নেশাগ্রস্তদের জন্যে জামায়াত ওয়াজেব নয়।
৪. ঐসব ওযর না থাকা যার কারণে জামায়াত চেড়ে দেয়ার অনুমতি আছে।
জামায়াত ছেড়ে দেয়ার ওযর
যেসব ওযর থাকলে জামায়াত না করা যায় তা চার প্রকার। এসব কারণে জামায়ত তো ছাড়া যায়, কিন্তু যতদূর সম্ভব জামায়াতে যোগদান করা ভালো।
১. নামাযী মসজিদ পর্যন্ত যেতে অপরাগ। যেমন-
(ক) এত দুর্বল যে, চলতে পারে না।
(খ) এমন রোগ যে, চলাফেরা করা যায় না।
(গ) অন্ধ অথবা পংগু অথবা পা কাটা হলে। এমন অবস্থায় তাকে কেউ মসজিদে পৌঁছিয়ে দিলেও তার জন্যে জামায়াত ওয়াজে নয়।
২. মসজিদে যেতে খুব অসুবিধা হওয়া অথবা রোগ বৃদ্ধির আশংকা। যেমন-
(ক) মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।
(খ) ভয়ানক শীত এবং বাইরে বেরুলে অসুখ হওয়ার আশংকা।
(গ) ভয়ানক অন্ধকার, রাস্তা দেখা যায় না।
(ঘ) মসজিদের রাস্তায় কাদা-পানি থাকা।
(ঙ) যানবাহন ছেড়ে যাওয়অর আশংকা এবং পরবর্তী যানবাহনের অপেক্ষা করলে ক্ষতির আশংকা।
৩. জান ও মালের আশংকা হওয়া, যেমন-
(ক) মসজিদের রাস্তায় কোন অনিষ্টকর প্রাণী থাকা, সাপ অথবা হিংস্র পশু প্রভৃতি।
(খ) দুশমনের ওঁত পেতে বসে থাকা।
(গ) পথে চোর ডাকাতের ভয় অথবা বাড়ীতে চুরি হওয়ার আশংকা।
৪. এমন কোন মানবীয় প্রয়োজন যা পূরণ না করলে নামাযের মন না লাগার আশংকা। যেমন-
(ক্) ক্ষুধা লেগে গেছে এবং খানা হাযির।
(খ) পেশাব পায়খানার বেগ হওয়া।
কাতার সোজা করা
১. জামায়াতের জন্যে কাতার সোজহা করার পুরোপুরি ব্যবস্থা করা উচিত। নবী (স) এর নির্দেশ হচ্ছে-
নামাযে তোমাদের কাতার সোজা ও বরাবর রাখ। এরূপ করা নামাযের অংশ (বুখারী, মুসলিম)।
হযরত নো’মান বিন বশীর (রা) বলেন, নবী পাক
(স) আমাদের কাতার এমনভাবে সোজার করে দিতেন যেন তার দ্বার তিনি তীর সোজা
করছেন। এটা এ জন্যে যে, যাতে করে তাঁর ধারণা জন্মে যে আমরা তাঁর কথা
ভালভাবে বুঝতে পেরেছি। একবার তিনি বাইরে এসে নামায পড়াবার জন্যে দাঁড়ালেন
এবং তাকবীর বলতে যাবেন এমন সময় এক ব্যক্তির উপর তাঁর নযর পড়লো। যার বুক
কাতার থেকে একটু সামনে বেড়ে গিয়েছিল। তখন বনী পাক (স) বললেন-
“আল্লাহর বান্দাহ। তোমার কাতার সোজা এবং
সমান কর। এমন যেন না হয় যে, কাতার সোজা না কারর কারণে আল্লাহ তোমাদের মুখ
একে অপরের দিক থেকে ফিরিয়ে দেন।” –(মুসলিম)।
২. প্রথমে সামনের কাতারগুলো সোজা এবং সমান করতে হবে। তারপর কিছু ত্রুটি যদি থাকে তো পেছনের কাতারগুলো থাকবে।
৩. ইমামের পেছনে তাঁর নিকটে ঐসব লোক
থাকবেন যারা এলেম ও দুরদুর্শিতায় অগ্রসর। তারপর নিকটে ঐসব লোক হবে যারা
বুদ্ধি-বিবেচনার দিক দিয়ে তাদের নিকটবর্তী হবে।
৪. ইমামের পেছনে থাকবে প্রথম পুরুষের কাতার, তারপর বালকদের এবং সব শেষে মেয়েদের।
৫. মুক্তাদী ইমামের উভয় দিকে দাঁড়াবে যেন ইমাম মাঝখানে থাকেন, এমন যেন না হয় যে, ইমামের এক দিকে বেশী লোক এবং অন্যদিকে কম।
৬. যদি একজনই মুক্তাদী হয়, বালেগ পুরুষ
হোক অথবা না-বালেগ বালক ইমামের ডান দিকে একটু পেছনে তার দাঁড়ানো উচিত। একজন
মুক্তাদীর ইমামের পেছনে বা বাঁয়ে দাঁড়ানো মাকরুহ।
৭. একাদিখ মুক্তাদী হলে তাদেরকে ইমামের
পেছনে দাঁড়াতে হবে। যদি দু’জন মুক্তাদী হয় এবং তারা ইমামের ডানে বা দাঁড়ায়
তাহলে মাকরুহ তানযীহী হবে। দুয়ের বেশী হলে মাকরুহ তাহরীমী হবে। কেননা,
দু’য়ের বেশী মুক্তাদী হলে, ইমামেরই সামনে দাঁড়ানো ওয়াজেব হবে- (ইলমুল
ফেকাহ-দুররে মুখতার, শামী)
৮. প্রথমে যদি একজন মুক্তাদী থাকে এবং পরে
আরও মুক্তাদী এসে যায়, তাহলে ইমামের বরাবর দণ্ডায়মান মুক্তাদীকে পেছনে
কাতারে টেনে নিতে হবে অথবা ইমাম সামনে এগিযে দাঁড়াবেন যাতে মুক্তাদীগণ সকলে
মিলে ইমামের পেছনে একই কাতারে দাঁড়াতে পারে।
৯. আগের কাতার পুরা হয়ে গেলে পরে যে আসবে
সে একা পেছনের কাতারে দাঁড়াবে না। আগের কাতার থেকে কাউকে টেনে পেছনের
কাতারে আনতে হবে। তবে এ মাসয়ালা যার জানা নেই তাকে টানলে খারাপ মনে করবে।
১০. আগের কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও পেছনের কাতারে দাঁড়ানো মাকরুহ।
মহিলাদের জামায়াত
১. শুধু মহিলাদের জামায়াত- (অর্থাৎ ইমামও মহিলা এবং মুক্তাদীও মহিলা) জায়েয, মাকরুহ নয়।
হযরত উম্মে ওয়ারাকা (রা) বিনতে নওফেল বলেন
যে, নবী (স) তাঁর সাথে দেখা করার জন্যে তাঁর বাড়ী যেতেন। তিনি তাঁর জন্যে
একজন মুয়াযযিনও নিযুক্ত করে দিয়েছিলেন, যিনি তাঁদের নামাযের জন্যে আযান
দিতেন। উম্মে ওয়ারাকা তাঁর ঘরের মেয়েদের ইমামতী করতেন। (আবু দাউদ)
২. মহিলাদের ইমামতি করতে হলে ইমাম কাতারের মাঝখানে দাঁড়াবে, আগে দাঁড়াবে না তা মুক্তাদী একজন হোক বা একাধিক হোক।
৩. কোন পুরুষের শুধু মহিলাদের ইমামতী করা
জায়েয এ শর্তে যে এ জামায়াতে কোন একজন পুরুষ থাকবে অথবা মহিলাদের মধ্যে কোন
মুহাররাম মহিলা থাকবে যেমন মা, বোন অথবা স্ত্রী। তবে যদি কোন পুরুষ বা
মুহাররামা মহিলা জামায়াতে না থাকে তাহলে ইমামতী করা মাকরুহ তাহরীমী হবে।
৪. মুক্তাদী যদি মেয়েলোক হয়, সাবালিকা হোক
বা নাবালিকা তার উচিত ইমামের পিছনে দাঁড়ানো সে একাকী হোক কিংবা একাধিক
হোক। একজন হলেও ইমামের সাথে দাঁড়াবে না, বরঞ্চ পেছনে দাঁড়াবে।
সুতরা
১. যদি কেউ এমন স্থানে নামায পড়ে যার
সামনে দিয়ে লোক যাতায়াত করে, তাহলে তার সামনে এমন কিছু রাখা উচিত যা প্রায়
একগজ উঁচু হবে এবং অন্তত এক আঙ্গুল পরিমাণ মোটা হবে। এটা করা মুস্তাহাব।
২. নামাযীর সামনে দিয়ে যাওয়া গুনাহের কাজ।
কিন্তু সুতরা (উপরে বর্ণিত জিনিস) খাড়া করে রাখতেল সামনে দিয় যাতায়াত করলে
গুনাহ হবে না। কিন্তু সুতরা এবং নামাযীর মাঝখানে দিয়ে যাওয়া চলবে না।
৩. ইমাম যদি তার সামনে সুতরা খাড়া করে তাহলে তা সকল মুক্তাদীর জন্যে যথেষ্ট হবে। তখন জামায়াতের সামনে দিয়ে যাওয়া গুনাহ হবে না।
জামায়াত সম্পর্কে মাসয়ালা
১. যদি কেউ তার নিকস্থ মসজিদে এমন সময়
পৌঁছে দেখে যে, জামায়াত হয়ে গেছে, তাহলে তার অন্য কোন মসজিদে জামায়াত ধরার
জন্যে চেষ্টা করা মুস্তাহাব। ঘরে এসে ঘরের লোকদের সাথে জামায়াত করাও জায়েয।
২. জামায়াত সহীহ হওয়ার জন্যে প্রয়োজন এই
যে, ইমাম এবং মুক্তাদীর নামাযের স্থান যেন এক হয়, যেমন একই মসজিদে অথবা একই
ঘরে উভযের নামায পড়ছে, অথবা ইমাম মসজিদে মুক্তাদী বাইরে সড়কে কিংবা নিজের
বাড়ীতে দাঁড়ায় কিন্তু মাঝখানে ক্রমাগত কাতার দাঁড়িয়ে গেছে।
৩. যদি ইমাম মসজিদের ভিতরে এবং মুক্তাদী
মসজিদের ছাদে দাঁড়ায় অথবা কারো বাড়ী মসজিদের সাথে লাগানো এবং সে তার বাড়ীর
উপরে দাঁড়িয়েছে কিন্তু উভয়ের মাঝখানে এতটুকু যায়গা যেন খালি না থাকে যে
দুটি কাতার হতে পারে।
৪. কেউ একাকী ফরয নামায পড়ে নিয়েছে এবং
জামায়াতে ফরয নামায হচ্ছে তখন তার উচিত জামায়াতে শামিল হওয়া। তবে ফযর, আসর
এবং মাগরেবে শরীক হবে না। এ জন্যে যে, ফযর এবং আসরের পর নামায মাকরুহ।
মাগরেবে শরীক না হওয়ার কারণ এ দ্বিতীয় নামায নফল হবে। আর নফল নামায তিন
রাকায়াত হওয়া বর্ণিত নেই।
৫. কেউ ফরয নামায পড়ছে, তারপর সেই নামায
জামায়াতে হওয়া শুরু হলো, তখন তার উচিত তার নামায ছেড়ে দিযে জামায়াতে শরীক
হওয়া। তাতে ফজরের নামাযে যদি দ্বিতীয় রাকয়াতের সিজদা করে থাকে, তাহলে নামায
পুরা করবে। নামায পুরা করার পর যদি দেখে যে, জামায়াত শেষ হয়নি, তাহলে যোহর
এবং এশার নামায যদি হয় তাহলে জামায়াতে শরীক হবে।
৬. যদি কেউ নফল নামায শুরু করে থাকে এবং ফরযের জামায়তে দাঁড়ায় তাহলে সে দু’রাকায়াত পড়ে সালাম ফিরাবে।
৭. যদি কেউ যোহারের অথবা জুমার প্রথম চার
রাকায়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ শুরু করে থাকে এবং এমন সময় ইমাম ফরয নামাযের
জন্যে দাঁড়ালো, তখন তার উচিত দুরাকায়াত সুন্নাত পড়ে সালাম ফিরাবে। তারপর
ফরযের পর ঐ সুন্নাত পুরা করবে।
৮. যখন ইমাম ফরয নামায পড়ার জন্যে দাঁড়িযে
যাবে তখন সুন্নাত পড়া উচিত নয়। তবে যদি বিশ্বাস হয় যে, ফরযের কোন রাকয়াত
বাদ পড়বে না, তাহলে সুন্নাত পড়া যাবে। অবশ্যি ফযরের সুন্নাতের যেহেতু কুব
বেশী তাকী আছে, সে জন্যে জামায়াতে এক রাকায়াত পাওয়ারও যদি আশা থাকে তাহলে
সুন্নাত পড়বে। এক রাকায়াত পাওয়ার যদি আশা না থাকে তাহলে পড়বে না।
৯. যখন জামায়াতে ফরয নামায হচ্ছে তখন কেউ
সুন্নাত পড়তে চাইলে মসজিদ থেকে আলাদা জায়গায় পড়বে। তা সম্ভব না হলে
জামায়াতের কাতার থেকে আলাদগ হয়ে মসজিদের এক কোণে পড়বে। তাও সম্ভব না হলে
সুন্নাত পড়বে না। এ জন্যে যেখানে ফরয নামাযের জামায়াত হয় সেখানে অন্য কোন
নামায মাকরুহ তাহরীমী।
১০. যদি কোন সমযে বিলম্ব হয়ে যায় এবং তার
জন্যে পুরা জামায়াত পাওয়ার আশা না থাকে। তথাপি মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায
পড়া উচিত। জামায়াতের সওয়াব আশা করা যেতে পারে বরঞ্চ জামায়াত শেষ হয়ে গেলেও
আল্লাহর কাছে আশা করা যায় যে, জামায়াতের সওয়াব পাওয়া যাবে।
নবী (স) বলেন-
যে ব্যক্তি ভালভাবে অযু করলো, তারপর
জামায়াতের আশায় মসজিদে গেল। সেখানে গিয়ে দেখলো জামায়াত হয়ে গেছে। তাহলে
আল্লাহ তায়ালা তাঁর সে বান্দাহকে ঐ লোকদের মতো জামায়াতের সওয়াব দিবেন, যারা
জামায়াতে শরীক হয়ে নামায আদায় করেছে। এতে করে তাদের সওয়াব কোন কম করা হবে
না। -(আবু দাউদ)।
১১. যে ব্যক্তি ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হবে সে ঐ রাকায়াত পেয়েছে মনে করা হবে। কিন্তু রুকু না পেলে সে রাকয়াত পাওয়া যাবে না।
১২. ইমাম চাড়া একজন যদি নামাযে শরীক হয়
তাহলে সাধারণ নামাযগুলোতে জামায়াত হয়ে যাবে। কিন্তু জুমার জামায়াতের জন্যে
প্রয়োজন ইমাম ব্যতিরেকে অন্তত আরও দু’জন। নতুবা জুমার জামায়াত হবে না।
দ্বিতীয় জামায়াতের হুকুম
মসজিদে নিয়ম মাফিক প্রথম জামায়াত হয়ে
যাওয়ার পর যারা জামায়াত পায়নি, এমন কিছু লোক মিলে দ্বিতীয় জামায়াত করলে কোন
অবস্থায় এ দ্বিতীয় জামায়াত জায়েয এবং কোন অবস্থায় তা মাকরুহ হবে।
১. মসজিদে নিয়মিত জামায়াত হওয়ার পর কেউ তার ঘরে অথবা মাঠে দ্বিতীয় জামায়াত করলে তা জায়েয হবে। এতে কোন মতভেদ নেই।
২. সাধারণ চলাফেরার স্থানে যে, মসজিদ যার
না ইমাম নির্দিষ্ট আছে আর না মুয়াযযিন এবং না নামাযের কোন নির্ধারিত সময়।
তাতে দ্বিতীয় জামায়াত জায়েয।
৩. প্রথম জামায়াত যদি উঁচু গলায় আযান দিয়ে একামতসহ পুরাপুরি ব্যবস্থা মতো না হয়ে থাকে, তাহলে এ অবস্থায় দ্বিতয় জামায়াত জায়েয হবে।
৪. প্রথম জামায়াত করে এমন লোক পড়লো যারা
মহল্লার লোক নয়, আর না মসজিদের ব্যাপারে তাদের কোন কিছু করার আছে, তাহলে
এখানে দ্বিতীয় জামায়াত জায়েয।
৫. যদি দ্বিতীয় জামায়াতের ধরন বদলে দেয়া
যায় তাহলে বিনা দ্বিধায় জামায়াত জায়েয হবে। ধরন বদলানোর অর্থ এই যে, প্রথম
জামায়অত ইমাম যে স্থানে দাঁড়িয়েছিল, দ্বিতীয় জামায়াতে ইমাম সেখান থেকে সরে
অন্য স্থানে দাঁড়াবে।[ইলমুল ফেকাহ ২য় খণ্ডে দররুল মুখতারের বরাত দিয়ে বলা
হয়েছে যে, ইমাম আবু ইউসুফের মতে জামায়াতের রূপ ও ধরন বদলে দিলে দ্বিতীয়
জামায়াত মাকরুহ হবে না এবং এর উপরেই ফতোয়া।
তিরমিযী এবং আবু দাউদে আছে, নবী (স)
একজনকে দেখলেন যে, সে একাই নামায পড়ছে। নবী (স) বললেন, কে আছে যে তাকে
সাহায্য করবে? তখন একজন দাঁড়ালো এবং তাঁর সাথে নামায পড়লো। কিন্তু মসজিদে
এমন অবস্থা হওয়া উচিত নয় যে, সেখানে নিয়মিত দ্বিতীয় জামায়াত চলতে থাকবে।]
৬. উপরের শর্তগুলো পাওয়া না গেলে এবং ঐরূপ
অবস্থা না হলে দ্বিতীয় জামায়াত মাকরুহ হবে। অর্থাৎ কোন মহল্লার মসজিদে
মহল্লাবাসী রীতিমতো ব্যবস্থাপনার সাথে উচ্চ গলায় আযান দিয়ে এবং একামতসহ
জামায়াত কর নামায পড়লো। তারপর সেমসজিদে জামায়াতের পর কিছু লোক পৌঁছলো এবং
এমনভাবে জামায়াত করে নামায পড়লো যে জামায়াতে ধরন বদলালো না, এমন অবস্থায়
জামায়াত মাকরুহ তাহরীমী হবে।
0 comments:
Post a Comment