নামায পড়ার বিস্তারিত নিয়ম পদ্ধতি
যখন কেউ নামায পড়ার এরাদা করবে তখন তাকে এ
ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে হবে যে, নামাযের শর্তগুলোর মধ্যে কোনটা বাদ যায় নি
তো। তারপর একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করে ধারণা করতে হবে যে,
সে আল্লাহর সামনে দাঁড়িযে আছেন। তারপর একনিষ্ঠ হয়ে পূর্ণ অনুভূতির সাথে
নিম্নের দোয়া পড়ে নেবে।
(আরবী***************)
আমি পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে আমার মুখ সেই
সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি আসান ও যমীন পয়দা করেছেন এবং আমি তাদের
মধ্যে নই যারা তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে। বস্তুত আমার নামায, আমার
কুরবানী, আমার জীবন ও মৃত্যু একমাত্র আল্লাহরই জন্যে যিনি সমগ্র বিশ্বজগতের
মালিক প্রভু। তাঁর কোন শরীক নেই আমার উপরে তাঁরই হুকুম হয়েছে এবং অনুগতদের
মধ্যে আমিই সকলের প্রথম অনুগত। (আল-আনয়াম)
অতপর নামাযী সোজা হয়ে দাঁড়িযে নামাযের
নিয়ত করবে। অ্থাৎ মনে এ এরাদা করবে যে, সে অমুক ওয়াক্তের এতো রাকয়াত নামায
পড়ছে। নিয়ত আসলে মনের এরাদার নাম। আর এটারই প্রয়োজন। (তবে এ এরাদাকে শব্দের
দ্বারা মুখে উচ্চারণ করা ভালো)। যেমন “আমি মাগরেবের তিন রাকয়াত ফরয নামায
পড়ছি।” আর যদি ইমামের পেছনে নামায পড়া হয় তাহলে এ নিয়তও করতে হবে যে,“এ
ইমামের পেছনে নামায পড়ছি।”[মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে নিয়ত করা ভালো। কিন্তু তার
জন্যে এতটুকু বলাই যথেষ্ট “আমি অমুক ওয়াক্তের এত রাকয়াত নামায পড়ছি।” যেমন
“যোহরের চার রাকয়াত ফরয পড়ছি” সুন্নাত অথবা নফল যদি হয় তাহলে বলবে,
“যোহরের দু’রাকয়অত সুনআত বা নফল পড়ছি।”। এছাড়া সাধারণত নিয়তের যে লম্বা
লম্বা কথাগুলো বলা হয় তা অনাবশ্যক। বরঞ্চ তাতে নামাযের বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
যেমন কেউ শুরু থেকেই ইমামের পেছনে রয়েছে। একামত শেষ হতেই ইমাম তাকবীর
তাহরীমা বলে নামায শুরু করলেন আর এ ব্যক্তি নিয়তের লম্বা চওড়া বাক্যগুলো
বলতে থাকলো। ফলে সে ইমামের সাথে তাকবীরে উলাতে শরীক হওয়া থেকে বঞ্চিত হলো।
অথবা মনে করুন, ইমাম রুকুতে রয়েছে, মুক্তাদী তাকবীর তাহরীমা বলে রুকুতে
শরীক হতে পারতো, কিন্তু সে দাঁড়িয়ে মুখ দিয়ে লম্বা লম্বা নিয়তিই আওড়াচ্ছে। এ
দিকে ইমাম রুকু থেকে উঠে পড়েছেন। মুক্তাদীর সে রাকয়াত আর পাওয়া হলো না। এ
জন্যে এটিই মুনাসেব যে নিয়তের সংক্ষিপ্ত জরুরী কথাগুলো বললেই যথেষ্ট হবে।
অযথা অপ্রয়োজনীয় কথা বাড়াতে গিয়ে নিজেকেপেরেশান করা ঠিক নয়।]
তাকবীর
দেহকে স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে সোজা হয়ে
দাঁড়ান। দু’ পায়ের মাঝখানে অন্ততঃ চার আংগুল ফাঁক যেন অবশ্যই থাকে।
দৃষ্টি সিজদার স্থানের উপর রাখুন এবং নিয়তের সাথে সাথে ‘আল্লাহু আকবার’
বলে দু’ হাত কানের গোড়া পর্যন্ত উঠান, যেন হাতুলি কেবলার দিকে থাকে এবং
আংগুলগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় খোলা থাকে। তারপর দু’হাত নাভির নীচে এমনভাবে
বাঁধুন যেন ডান হাতের হাতুলি বাম হাতের পিঠের উপর থাকে। ডান হাতের বুড়ো
আংগুল ও ছোটো আংগুল দিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরুন। ডান হাতের বাকী আংগুলগুলো
বাম হাতের উপর ছড়িযে রাখুন। [আহলে হাদীসের নিয়ম এই যে, নারী পুরুষ উভয়েই
বুকের উপর হাত বাঁধবে। তাঁরা আরও বলেন, নারী-পুরুষ উভয়ই কাঁধ পর্যন্ত হাত
উঠাবে।]
তারপর নিম্নের দোয়া বা সানা পড়ুন:- (আরবী***************)
তুমি পাক ও পবিত্র, হে আল্লাহ! তুমিই
প্রশংসার উপযুক্ত। তুমি বরকতদানকারী এবং মহান। তোমার নাম ও মর্যাদা বহু
উচ্চে। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। [আহলে হাদীসগণ নিম্নের দোয়া পড়েন।
(আরবী****************)]
সানার পর আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পুরা পড়ুন।
সূরা ফাতেহা ও কুরআন পাঠ
তারপর সূরায়ে ফাতেহা পড়ে আমীন বলুন। আর
যদি আপনি মুক্তাদি হন তাহলে সানা পড়ার পর চুপচাপ ইমামের কেরায়াত
শুনুন।[আহলে হাদীসগণ ইমামের পেছনে আস্তে আস্তে সূরা ফাতেহা পড়েন।] ইমাম
সূরায়ে ফাতেহা শেষ করলে আস্তে আমীম বলুন। [যেসব নামায কেরায়াত উচ্চস্বরে
পড়াহয় তাতে আহলে হাদীসগণ ইমামের পেছনে উচ্চস্বরে আমীন বলেন।] তারপর কুরআনের
কোনো সূরা বা কয়েকটি আয়াত পড়ৃন অন্ত ছোট ছোট তিনটি আয়াত। আপনি মুক্তাদি
হলে চুপ থাকতে হবে।
রুকু
কেরায়াত করার পর ‘আল্লাহ আকবার’ বলে
রুকুতে যান।[আহলে হাদীসগণ রুকুতে যাবার সময় রুকু থেকে উঠার সময় দু’রাকয়াত
পরে তৃতীয় রাকায়াতের জন্যে উঠার সময় ‘রফে ইয়াদাইন’ করেন। অর্থ্যাৎ কাঁধ
পর্যন্ত হাত উঠান।] রুকুতে হাত হাঁটুর উপর রেখে আঙ্গুল দিয়ে হাঁটু ধরুন।
দু’হাত সটান সোজা রাখুন। রুকুর সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, মাথা যেন কোমর থেকে
বেশী নীচে নেমে না যায় অথবা উঁচু না হয়। বরঞ্চ কোমর এবং মাথা একেবারে
বরাবর থাকবে। তারপর তিনবার নিম্ন তাসবীহ পড়বেন।
রুকুর তাসবীহ
(******) সমস্ত দোষত্রুটি থেকে পাক আমার
মহান প্রভু।[আহলে হাদীসগণ পড়েন (আরব*ি*******) পাক ও মহান তুমি আয় আল্লাহ।
আমার প্রভুর প্রশংসার অধিকারী। হে আমার প্রভু আমাকে মাফ করে দাও।]
এ তাসবীহ (*******) তিনবারের বেশী পাঁচ,
সাত নয় অথবা আরও বেশ বার বলতে পারেন। যদি আপনি ইমাম হন তাহলে মুক্তাদীদের
প্রতি খেয়াল রাখবেন। এতো বেশী পড়বেন না যাতে তাঁরা পেরেশানী বোধ করেন। তবে
যতোবারই পড়ৃন বেজোর পড়বেন।
কাওমা
কাওমা রুকুর পরে (আরবী***********)
(আল্লাহ তার কথা শুনেছেন, যে তাঁর তারীফ করেছেন) বলে বিলকুল সোজা হয়ে
দাঁড়ান এবং বলুন (*******) (হে আমাদের রব, সমস্ত প্রশংসা তোমারই)। যদি আপনি
মুক্তাদি হন তাহলে দ্বিতীয়টি পড়বেন। আর ইমাম হলে প্রথমটি পড়বেন[ এ অবস্থায়
আহলে হাদীস বলেন (আরবী********)]
সিজদা
তারপর তাকবীর বলে সিজদায় যান সিজদা এভাবে
করুন যেন প্রথমে দু’হাঁটু যমীনে রাখেন, তারপর দু’হাত, তারপর নাক এবং তারপর
কপালে। চেহারা দু’হাতের মাঝখানে থাকবে। বুড়ো আংগুল কানের বরাবর থাকবে।
হাতের আংগুল মেলানো থাকবে এবং সব কেবলামুখী থাকবে। দু’কনুই যমীন থেকে উপরে
থাকবে এবং হাঁটুও রান থেকে আলাদ থাকবে এবং পেটও রান ধেতে আলাদা থাকবে। কনুই
যমীন থেকে এতটা উঁচুতে থাকবে যেন একটা ছোট ছাগল ছানা ভেতর দিয়ে বেরিয়ে
যেতে পারে। দু’পা আংগুলের উপর ভর করে মাটিতে লেগে থাকবে এবং আংগুলগুলো
কেবলামুখী থাকবে।
সিজদায় অন্ততপক্ষে তিনবার থেমে থেমে (*****) পড়ুন।
জালসা
তারপর তাকবীর বলে প্রথমে কপাল তারপর তাহ
উঠিয়ে নিশ্চিন্ত মনে বসুন। বসার পদ্ধতি এই যে, ডান পা খাড়া থাকবে এবং বাম
পা বিছিয়ে তার উপর দু’জানু হয়ে বসুন। তারপর দু’হাত দু’জানুর উপর এমনভাবে
রাখন যেন আংগুলগুলো হাটুর উপর থাকে। [জালসায় পড়ার জন্যে দোয়া হাদীসে বর্ণিত
আছে। আহলে হাদীস এ দোয়া পড়ার তাকীদ করেন। (আরবী*********)
(হে আল্লাহ! আমায় মাফ কর, আমার উপর রহম কর, আমাকে পথ দেখাও, আমাকে সচ্ছলতা দান কর এবং আমাকে রুজি দান কর( আবুদ দাউদ)।]
তারপর তাকবীর বলে দ্বিতীয় সিজদায় যান।
প্রথম সিজদার মতো এ সিজদা করুন। দু’সিজদা
করার পর তাকবীর বলে দ্বিতীয় রাকয়াতের জন্যে দাঁড়ান। [আহলে হাদীসের মতে,
প্রথম এবং তৃতীয় রাকায়াতের সিজদা করার পর একটু বসে তারপর দাঁড়ানো উচিত।
সিজদা থেকে সরাসরি উঠা ঠিক নয়।]তারপর বিসমিল্লাহ, সূরা ফাতেহা এবং কেরায়াত
করে দ্বিতীয় রাকায়াত পুরা করুন।
কা’দা(***)
তারপর প্রথম রাকয়াতের মতো রুকু, কাওমা,
সিজদা ও জালসা করুন এবং দ্বিতীয় সিজদা থেকে উঠে কা’দায় বসে যান। কা’দায়
বসার ঐ একই পদ্ধতি যা, জলসায় বসার বয়ান করা হয়েছে। তারপর নিশ্চিন্ত মনে
থেমে থেমে তাশাহ্হুদ পড়ুন।
তাশাহহুদ
(আরবী*****************)
সমস্ত প্রশংসা এবাদত ও সমস্ত পবিত্রতা
আল্লাহর জন্যৌ। হে নবী (স) আপনার উপর সালাম। তাঁর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক
আপনার উপর। সালামতি (শান্তি) হোক আমাদের উপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের
উপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড় ইলাহ নেই এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ
(স) তাঁর বান্দাহ ও রসূল।
লা ইলাহা বলবার সময় ডান হাতের বুড়ো আংগুল
এবং মধ্যমা আংগুল দিয়ে চক্র বানিয়ে অন্যান্য আংগুলগুলো বন্ধ করে শাহাদাত
আংগুল আসমানের দিকে তুলে ইশারা করুন এবং ইল্লাল্লাহ বলার সময় আংগুল নামিয়ে
নিন। সালাম ফেরা পর্যন্ত আংগুল গুলো ঐভাবে রাখুন।
যদি চার রাকায়াতওয়ালা নামায হয় তাহলে
তাশাহুদ পড়ার পর তাকবীর বলে তৃতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়ান। তারপর ঐভাবে
বিসমিল্লাহ ও সূরা ফাতেহা পড়ুন। যদি সুন্নাত বা নফল নামায হয় তাহলে তৃতীয়
এবং চতুর্থ রাকায়াতে সূরা ফাতেহার পর কোন সূরা বা কয়েকটি আয়াত পড়ুন। যদি
ফরয নামায হয় তাহলে তৃতীয় এবয় চতুর্থ রাকায়াতে সূরা ফাতেহার পর কুরআনের কোন
অংশ পড়বেন না। শুধু সূরা ফাতেহা পড়ে রুকুতে চলে যান।
চতুর্থ রাকয়াতের উভয় সিজদা করার পর ‘আত্তাহিয়্যাতু’ পড়ুন। তারপর নিম্ন দরুদ শরীফ পড়ুন
(আরবী*****************)
হে আল্লাহ! সালাম ও রহমত বর্ষণ কর
মুহাম্মদ (স) ও তাঁর পরিবারের উপর যেমন তুমি রহমত নাযিল করেছ ইবরাহীম (আ) ও
তাঁর পরিবারের উপর। হে আল্লাহ! বরকত নাযিল কর মুহাম্মদ (স) ও তাঁর
পরিবারের উপর যেমন তুমি বরকত নাযিল করেছ হযরত ইবরাহীম (আ) ও তাঁর পরিবারের
উপর।
দুরূদের পর দোয়া
দুরুদের পর নিম্নের দোয়া পড়ুন (আরবী****************)
আয় আল্লাহ! আমি আমার উপরে বড় যুলুম করেছি
এবং তুমি ছাড় এমন কেউ নেই, যে গুনাহ মাফ করতে পারে। অতএব তুমি আমাকে তোমার
খাস মাগফেরাত দান কর এবং আমার উপর রহম কর। অবশ্যই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়াশীল।
অথবা নিম্নের দোয়া পড়ুন কিংবা উভয়টি পড়ুন। (আরবী********************)
আয় আল্লাহ্! আমি তোমার পানাহ (আশ্রয়) চাই
জাহান্নামের আযাব থেকে এবং কবরের আযাব থেকে, পানাহ চাই মাসীহ দাজ্জালের
ফেৎনা থেকে, পানাহ চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে। হে আল্লাহ! আমি পানাহ
চাই গুনাহ থেকে এবং প্রাণান্তকর ঋণ থেকে।
সালাম
এ দোয়া পড়ার পর নামায খতম করার জন্যে
প্রথম ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে বলুন ‘আসসালামু আলাইকুম ও য়া রাহমাতুল্লাহ’
তারপর বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে বলুন ‘আসসালামু আলাকিুম ওয়া রাহমাতুল্লা’। এ
কথাগুলো বলার সময় মনে করতে হবে যে, আপনার এ সালামতি ও রহমতের দোয়া নামাযের
অংশগ্রহণকারী সকল নামাযীদের এবং ফেরেশতাদের জন্যে। নামায শেষ করে যে কোনো
জায়েয দোয়া করতে পারেন। নবী (স) থেকে বহু দোয়া যিকির বর্ণিত আছে। এসব দোয়া ও
যিকিরের অবশ্যই অভ্যাস করবেন। কিছু দোয়া নিম্নে দেয়া হলো-
নামাযের পরে দোয়া
(আরবী**************)
আমি আল্লাহর কাছে মাফ চাই। হে আল্লাহ!
তুমিই শান্তির প্রতীক, শান্তিধারা তোমার থেকেই প্রবাহিত হয়। তুমি নেহায়েত
মঙ্গল ও বরকত ওয়ালা, হে দয়া ও অনুগ্রহের মালিক- (মুসলিম)।
২. এতে দিন নবী (স) হযরত মাআয (রা)-এর হাত
ধরে বলেন, মাআয! আমি তোমাকে ভালোবাসি। তারপর বলেন, আমি তোমাকে অসিয়ত করছি,
তুমি কোন নামাযের পর এ দোয়াটি যেন করতে ভুলো না। প্রত্যেক নামাযের পর
অবশ্যই পড়বে-
(আরবী**************)
আয় আল্লাহ! তুমি আমার মদদ কর যেন আমি তোমার শোকর আদায় করতে পারি এবং ভালভাবে তোমার বন্দেগী করতে পারি।
(আরবী***************)
আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই। তিনি এক ও একক,
তাঁর শরীক নেই। কৃর্তৃত্ব প্রভূত্ব বাদশাহ একমাত্র তাঁরই এবং প্রশংসা ও
কৃতজ্ঞতা লাভের একমাত্র অধিকারী। তিনি প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। হে
আল্লাহ! তুমি যা দান কর তা কেউ ঠেকাতে পারে না। যা তুমি দাও না, তা আর কেু
দিতে পারে না। কোন মহান ব্যক্তির মহত্ব তোমার মুকাবিলায় কোনই কজে আসে না-
(বুখারী ও মুসিলম)
৪. সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার এবং একবার (আরবী********)
আল্লাহ পাক ও পবিত্র, সব প্রশংসা আল্লাহর,
আল্লাহ সকলের বড়ো, আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই। তিনি এক এবং তাঁ কোন শরীক নেই।
বাদশাহী তাঁর এবং প্রশংসা বলতে একমাত্র তাঁই। এবং তিনি সব কিছুর উপর
ক্ষমতাবান- (সহীহ মুসলিম –আবু হুরায়রাহ হতে)।
নারীদের নামাযের পদ্ধতি
নামাযের অধিকাংশ আরকান আদায় করার পদ্ধতি
নারীদের জন্যেও তাই যা পুরুষের জন্যে। তবে নারীদের নামাযের ছ’টি জিনিস
আদায়ের ব্যাপারে কিছু পার্থক্র রয়েছে। এ পার্থক্যের বুনিয়াদী কারণ হলো এ
ধরণা যে, নামাযের মধ্যে নারীদেরকে সতর এবং পর্দার বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।
যে ছ’টি জিনিস সমাধা করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে তা হলো-
১. তাকবীর তাহরীমায় হাত উঠানো
শীত হোক গ্রীস্ম হোক সর্বদা নারীরেদ চাদর
অথবা দোপাট্টা প্রভৃতির ভেতর থেকে তাকবীর তাহরীমার জন্যে হাতত উঠাতে হবে।
চাদর বা দোপাট্টর বাইরে হাত বের করা উচিত নয় এবং তাহ শুধু কাঁধ পর্যন্ত
উঠাবে। কান পর্যন্ত উঠাবে না।
২. হাত বাঁধা
মেয়েলোকদের হামেশা বুকের উপর হাত বাঁধতে
হবে। বুকের নীচে নাভীর উপর বাঁধা উচিত হবে না। ডান হাতের বুড়ো এবং ছোটো
আঙুল দিয়ে বাম হাতির কব্জি ধরার পরিবর্তে শুধু ডান হাতের হাতুলি বাম হাতের
হাতুলির পিঠের উপর রাখবে।
৩. রুকু
মেয়েদেরকে রুকুতে শুধু এতটুকু ঝুঁকে পড়তে
হবে যেন দু’হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌছে। হাঁটু আংগুল দিয়ে ধরার পরিবর্তে শুধু
মেলানো আংগুলগুলো হাঁটুর উপর রাখবে। উপরন্তু দু’হাতের কনুই-দু’পার্শ্বের
সাথে মিলিত থাকতে হবে।
৪. সিজদা
সিজদার মধ্যে মেয়েদের পেট উরুর সাথে এবং
বাহু বগলের সাথে মিলিত রাখতে হবে। কনুই পর্যন্ত হাত মাটিতে রাখতে হবে এবং
দু’পা খাড়া না রেখে বিছিয়ে রাখতে হবে।
৫. কা’দা এবং জালসা
কা’দা অথবা জালসায় দু’পা ডান দিকে করে বাম
পার্শ্বের উপর এমনভাবে বসবে যেন ডানদিকের রান বাম দিকের রানের সাথে এবং
ডান পায়ের মাংসপিন্ড বাম পায়ের উপর আসে।
৬. কেরায়াত
মেয়েদেরকে সর্বদা নিঃশব্দে কেরায়াত করতে হবে। কোন নামাযেই উচ্চ শব্দ করে কেরায়াত করার অনুমতি তাদের নেই।
বেতর নামায পড়ার নিয়ম
এশার নামাযের পর যে নামায পড়া হয় তাকে
বেতর বলে। তাকে বেতর বলার কারণ এই যে, তার রাকয়াতগুলো বেজোড়। বেতর নামায
ওয়াযেব। নবী (স) তার জন্যে বিশেষ তাকীদ করেছেন। তিনি বলেন-
যে ব্যক্তি বেতর পড়বে না আমাদের জামায়াতের
সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। [আবু দাওদ, হাকেম। এ তাকীদের কারণে ইমাম আবু
হানীফা (র) একে ওয়াজেব বলেন। অবশ্য আহলে হাদীস, ইমাম শাফেয়ী এবং কাযী আবু
ইউসুফের মতে বেতর নামায সুন্নাত।] বেতরের নামায মাগরেবের মত তিন রাকায়াত। ২
ইমাম শাফেয়ী এবং আহলে হাদীস এক রাকায়াত পড়ার পক্ষে। আহলে হাদীসের নিকটে
তিন, পাঁচ, সাত এবং নয় রাকয়াত পর্যন্ত পড়াও জায়েয। এ জন্যে যে, হাদীস থেকে
তা প্রমাণিত আছে। পড়ার নিয়ম এই যে, যদি কেউ তিন বা পাঁচ রাকায়াত এক সালামে
পড়তে চায় তাহলে মাঝখানে তাশহুদের জন্যে না বসে শেষ রাকয়াতে বসে তাশাহ্হুদ
দরুদ পড়ে সালাম ফেরাবে। সাত অথবা নয় রাকয়াত এক সালামে পড়তে হলে শেষ
রাকয়াতের আগে বসবে এবং শুধু ‘আত্তাহিয়্যাতৎ পড়ে দাঁড়াবে। তারপর এক রাকায়াত
পড়ে আত্তাহিয়াত, দুরুদ ও দোয়া পড়ে সালাম ফেরাবে। -[নামাযে মুহাম্মদী
মাওলানা মুহাম্মদ জুনাগড়ী (র)।] অধিকাংশ সাহাবী ফকীহ তিন রাকয়াত পড়তেন।
বেতর নামায পড়ার নিয়ম এই যে, ফরয নামাযের
মতো দু’রাকায়া নামায পড়ুন। তারপর তৃতীয় রাকয়াতে সূরা ফাতেহার পর কোন ছোটো
সূরা অথবা কয়ে আয়াত পড়ুন। তারপর তাকবর বলে দু’হাত কান পর্যন্ত এমনভাবে উঠান
যেমন তাকবীর তাহরীমায় উঠান। তারপর হাত বেঁধে আস্তে আস্তে দোয়া কুনুত পড়ুন।
[আহলে হাদীসের মতে রুকুর পর হাত বাঁধার পরিবর্তে আসমানের দিকে দু’হাত তুলে
দোয়া কুনুত পড়তে হবে।
(****) অর্থ : হে আল্লাহ আমাকে মাফ কর।
(*****) অর্থ পবিত্র ও মহান প্রকৃত বাদশাহ সকল ত্রুটি বিচ্যুতির উর্ধে।
(****) অর্থ: প্রভু ফেরেশতাদের এবং জিবরাইল আমীনের (আবুদ দাউদ, নাসায়ী)
কুনুতে নাযেলা
কুনুতে নাযেলা বলতে সেই দোয়া বুঝায় যা নবী
পাক (স) দুশমনদের ধ্বংসকারীতা থেকে রক্ষার জন্যে তাদের শক্তি চূর্ণ করে
তাদেরকে ধ্বংস করার জন্যে পড়েন। ***১ তাঁর পরে সাহাবায়ে কেরাম (রা) তা পড়ার
ব্যবস্থা করেছেন। ****২
আহলে ইসলাম যদি কোন সময়ে কঠিন অবস্থার
সম্মুখীন হয়, দিন রাত ব্যাপী দুশমনের পক্ষ থেকে আসন্ন বিপদে এবং তাদের ভয় ও
সন্ত্রাসে তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে, যদি চারদিকে দুশমনের শক্তিমত্তা
দেখা যায় তারা যদি মিল্লাতে ইসলামিয়াকে ধ্বংস করার জন্য এবং ইসলামের নূর
নিভিয়ে দেয়ার জন্যে আহলে ইসলামের উপর অমানুষিক যুলুম করতে থাকে, এমন
নৈরাশ্যজনক অবস্থা থেকে বাঁচর জন্যে দুশমনের শক্তি চূর্ণ করতে তাদেরকে
ধ্বংস করতে আল্লাহর কাছে দরখাস্ত করার জন্যে কুনুতে নাযেলা পড়া মসনূন।
কুনুতে নাযেলার মাসয়ালা]
দোয়ায়ে কুনুত
(আরবী*************)
হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য প্রার্থী
এবং তোমার কাছেই ক্ষমাপ্রার্থী। তোমার উপর আমরা ঈমান এনেছি এবং তোমারই উপর
ভরসা করি, তোমার ভালো ভলো প্রশংসা করি তোমার শোকর আদায় করি, তোমার না শোকরি
করি না (কৃতঘ্নতা করি না), যারা তোমার নাফরমানী করে তাদের পরিত্যাগ করছি ও
তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করছি। আয় আল্লাহ! আমরা তোমারই এবাদত করি, তোমারই
জন্যে নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদা করি, তোমার দিকেই দ্রুত ধাবিত হই,
তোমারই হুকুম মানার জন্যে প্রস্তুত থাকি, তোমার রহমতের আশা রাখি, তোমার
আযাবকে ডরাই। তোমার আযাব অবশ্যই কাফেরদেরকে পেয়ে বসবে।
যদি তার সাথে নিম্নের দোয়া পড়া হয় তো ভালো হয়:
(আরবী**********)
আয় আল্লাহ! তুমি আমাকে হেদায়াত দান করে
হেদায়াত প্রাপ্ত লোকদের মধ্যে শামিল কর। তুমি আমাকে সচ্ছলতা দান করে সচ্ছল
ব্যক্তিদের শামিল কর, তুমি আমার অভিভাকত্ব গ্রহণ করে তাদের মধ্যে শামিল কর
যাদের তুমি অভিভাবক হয়েছ। তুমি আমাকে যা দিয়েছ তার মধ্যে বরকত দাও, তুমি
আমাকে ঐ অনিষ্ট থেকে রক্ষা কর যার তুমি ফায়সালা করেছ। কারণ তুমিই
ফায়সালাকারী এবং তোমার উপর অন্য কারো ফায়সালা কার্যকর হয় না। তুমি যার
অভিভাবকত্ব কর তাকে কেহ হীন লাঞ্ছিত করতে পারে না এবং সে কখনো সম্মান পেতে
পারে না যাকে তুমিতোমার দুশমন বানিয়েছ। তুমি খুবই বরকতওয়ালা, হে আমার রব,
সুউচ্চ ও সুমহান, দরুদ ও সালাম হোক পিয়ারা নবীর উপর, তাঁর বংশধরদের উপর।
আহলে হাদীসের লোক বেতরে এ দোয়া পড়েন।
দোয়া কুনুত যদি মুখস্ত না থাকে, তাহলে যত
শীঘ্র সম্ভব মুখস্ত করতে হবে। যতদিন মুখস্ত না হবে ততদিন দোয়া কুনুতের
স্থলে নিম্নের দোয়া পড়তে হবে।
(আরবী*************)
হে আল্লা! তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল
দাও। এবং আখেরাতে মঙ্গল দাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।যদি এটাও মনে
না থাকে তাহেল (***) তিনবার পড়বেন। বেতর নামাযের সালাম ফেরার পর এ দোয়া
পড়া মুস্তাহাব (****) এ দোয়া তিনবার পড়তে গিয়ে তৃতীয়বার উচ্চ শব্দ করে
পড়বেন *****।
বেতর নামাযে সূরা ফাতেহার পর যে কোন সূরা
পড়তে পারবেন। তবে প্রথম রাকায়াতে (****) দ্বিতীয় রাকয়াতে (****) এবং তৃতীয়
রাকায়াতে (*(****) পড়া ভালো।
আবু উবাইদ বিন কা’ব বলেন, নবী (স) বেত এ তিন সূরা পড়তেন।
১. উচ্চশব্দে পড়া সকল নামাযে কুনুতে নাযেলা পড়া জায়েয। ****৩ বিশেষ করে ফজরের নামাযে পড়র ব্যবস্থা করা উচিত।
****১ হযরত আবু হুরায়রায়হ (রা) বলেন, নবী
(স) মুসলমান কায়েদীদের উদ্ধার এবং কাফেরদের ধ্বংসের জন্যে অনবরত একমাস
পর্যন্ত এশার নামাযে এ কুনুত পড়তেন। আবু হুরায়রা (রা) বলেন, একদিন নবী (স) এ
দোয়া পড়লেন না। তখন আমি নবী (স) কে না পড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি
বললেন, তুমি কি দেখছ ন যে, মুসলমান কয়েদীরা খালাস হয়ে এসেছে? –(আবু দাউদ)
****২ হযরত আবু বকর (রা) সম্পর্কে বর্ণিত
আছে যে, তিনি মুসায়লাম কায্যাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় এ কুনুতে নাযেলা
পড়েন। এমনি হযরত ওমর (রা), হযরত আলী (রা) এবং আমীর মুয়াবিয়া (রা) যুদ্ধের
সময় কুনুতে নাযেলা পড়েন। (গানিয়াতুল মাস্তামলী)।
****৩ আল্লামা তাহাবী শুধু পযর নামাযে কুনুতে নাযেলা পড়ার উল্লেখ করেছেন। শামী কেতাবের লেখক এ উক্তিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
২. যদি মুক্তাদীদের দোয়া কুনুতে নাযেলা
মনে থাকে, তাহলে ইমামও আস্তে আস্তে পড়বে এবং সকল মুক্তাদীও আস্তে আস্তে
পড়বে। কিন্তু আজকাল যেহেতু সাধারণ মুক্তাদীদের দোয়া মনে থাকে না সে জন্যে
উত্তম এই যে, ইমাম উচ্চশব্দে ***১ থেমে থেমে পড়বে এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন
বলতে থাকবে।
৩. শেষ রাকায়াতে রুকু থেকে উঠার পর ইমাম
এবং মুক্তাদী সকলে হাত বাঁধবে ***২ ইমাম কুনুত পড়বে এবং মুক্তাদী আস্তে
আস্তে আমীন বলছে। ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম আবু ইউসুফের নিকট হাত বেঁধে
কুনুতে নাযেলা পড়া মসনূন।
৪. একাকী নামায পাঠকারীও কুনুত পড়তে পারে। নারীগণও তাদের নামাযে পড়তে পারে।
কুনুতে নাযেলার দোয়া
(আরবী***************)
আয়নী, শরহে হেদায়া উচ্চশব্দে পড়া সকল নামাযে পড়ার বিশ্লেষণ করেছেন। আয়নী শরহে হেদায়ার শব্দগুলো হচ্ছে
(আরবী*********)
যদি মুসলমানদের উপর কখনো বিপদ এসে পড়ে,
তাহলে ইমাম উচ্চশব্দে পড়া নামাযগুলো কুনুত পড়বে। অধিকাংশ ওলামা এবং ইমাম
আহম বিন হাম্বলেরও এই মত। দেখুন কুনুতে নাযেলা এবং তৎসংশ্লিষ্ট
মাসায়ালাসমূহ মুফতী মুহাম্মদ কেফায়েতুল্লাহ মরহুম।
***১ আবু হুরুয়রা (রা) বলেন, নবী (স) কুনুতে নাযেলা উচ্চস্বরে পড়তেন। (বুখারী)।
***২ যদি কেউ হাত বাঁধার পরিবর্তে হাত
তুলে দোয়া করে অথবা হাত ছেড়ে দিযে পড়ে যেমন ইমাম মুহাম্মদের উক্তি রয়েছে তা
হলে হাদীসের আলোকে তা করার অবকাশ এছ। এই জন্যে যে, এসব বিষয়ে তর্কবিতর্ক ও
ঝগড়া ফাসাদ করা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে হেদায়েত দান করে
তাদের মধ্যে শামিল কর যাদেরকে তুমি হেদায়েত দান করেছ। তুমি আমাদের সচ্ছলতা
দান করে তাদের মধ্যে শামিল কর যাদেরকে তুমি সচ্ছলতা দান করেছ। আমাদের
অভিভাকত্ব করে তাদের মধ্যে শামিল কর যাদের তুমি অভিভাবক হয়েছ। তুমি
আমাদেরকে যা দান করেছ তাতে বরকত দাও। আমাদেরকে তুমি সেই অনিষ্ট থেকে রক্ষা
কর যার ফয়সালা তুমি করেছ-কারণ ফয়সালা তুমিই করে থাক এবং তোমার উপর কারো
ফয়সালা কার্যকর হয় না। তুমি যার অভিভাবক্ত কর সে কখনো হীন লাঞ্ছিত হতে পারে
না। তুমি যাকে দুশমন বলে আখ্যায়িত কর সে কখনো সম্মান পেতে পারে না। তুমি
বড়ো বরকতওয়ালা। হে আমাদের রব! সুউচ্চ ও সুমহান, আমরা তোমার কাছে মাগফেরাত
চাচ্ছি তোমার কাছে তওবা করছি। আল্লাহর রহমত হোক নবী (স)-এর উপর।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে মাফ কর। মুমেন
নারবী-পুরুষ এবং মুসলিম নারী-পুরুষকে মাফ কর, তাদের অন্তরকে পরস্পর মিলিত
করে দাও, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করে দাও, তোমার এবং তাদের দুশমরে
মুকাবিলায় আমাদের মদদ কর।
আয় আল্লা! তুমি ঐ সব কাফিরদের উপর লানত কর
যারা মানুষকে তোমার পথ থেকে বিভ্রান্ত করে সরিয়ে দেয়, যারা তোমার
রসূলগণকে মিথ্যা মনে করে, যারা তোমার প্রিয় লোকদের মতানৈক্য সৃষ্টি করে
দাও, তাদেরকে ভীত প্রকম্পিত করে দাও এবং তাদের উপর তোমার এমন আযাব নাযিল কর
যা তুমি তোমার পাপদের জন্যে রহিত কর না।
নফল নামাযের বিবরণ
পাঁচ ওয়াক্তের নামাযের সাথে নবী (স) যেসব
আমল করেছেন, উপরে পাঞ্জেগানা নামায প্রসংগে তার বিস্তারিত উল্লেখ করা
হযেছে। এসব ছাড়াও নবী পাক (সা) বিভিন্ন সময়ে বহু নফল নামায পড়তেন।
হাদীসগুলোতে এসব নামাযের অনেক ফযিলত বয়ান করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে বেশী
বেশী নফল এবাদতের মাধ্যমেই বান্দাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং বিরাট
মর্যাদার অধিকারী হয়। মাকরুহ সময়গুলো ছাড়া যখনই কেউ নফল নামায পড়তে চায় এবং
যত বেশী পড়তে চায় তা পড়লে তার জন্যে মঙ্গল ও বরকতেরই কারণ হয়। অবশ্যি কিছু
বিশিষ্ট নফল নামায নবী (স) বিশেষ বিশেষ সময়ে পড়েছেন এবং সে সবের আলাদা
ফযিলতও বয়ান করেছেন। নিম্নে সে সব বিশিষ্ট নফল নামাযের উল্লে করা হচ্ছে।
তাহাজ্জুদের নামায
তাহাজ্জুদ নামায সুন্নাত। নবী (স)
হরহামেশা এ নামায নিয়মিতভাবে পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা) কে নিয়মিত
আদায় করার জন্যে উদ্বুদ্ধ করতেন। কুরআন পাকে তাহাজ্জুদ নামাযের জন্যে
বিশেষভাবে তাকীদ করা হয়েছে। যেহেতু উম্মতকে নবীর পায়রবি করার হুকুম করা
হয়েছে সে জন্যে তাহাজ্জুদের এ তাকীদ পরোক্ষভাবে গোটা উম্মতের জন্যে করা
হয়েছে।
(আরবী*************)
এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়তে থাক। এ
তোমার জন্যে আল্লাহর অতিরিক্ত ফযল ও করম। শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে উভয় জগতে
বাঞ্ছিত মর্যাদায় ভূষিত করবেন- (বনি ইসরাঈল: ৭)।
যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের আমল করে কুরআন
তাদেরকে মুহসেন এবং মুত্তাকী নামে অভিহিত করে তাদেরকে আল্লাহর রহমত এবং
আখেরাত চিরন্তন সুখ সম্পদের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করেছে।
(আরবী************)
নিশ্চয়ই মুত্তাকী লোক বাগ-বাগিচায় এবং
ঝর্ণার আনন্দ উপভোগ করতে থাকবে এবং যে যে নিয়মিত তাদের প্রভু পরোয়ারদেগার
তাদেরকে দিতে থাকবেন সেগুলো তারা গ্রহণ করবে। (কারণ) নিঃসন্দেহে তারা এর
পূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) মুহসেনীন (বড় নেক্কার) ছিল। তারা রাতের খুব অল্প
অংশেই ঘুমাতো এবং শেষ রাতে ইস্তেগফার করতো। (কেঁদে কেঁদে আল্লাহর মাগফেরাত
চাইতো) (যারিয়াত : ১৫-১৮)
প্রকৃতপক্ষে তাহাজ্জুদ নামায মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করার এবং সত্য পথে অবিচল থাকার জন্যে অপরিহার্য ও কার্যকর পন্থা।
(আরবী*****************)
বস্তুতঃ রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দামিত
করার জন্যে খুব বেশী কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা যিকির একেবারে
যথার্থ। (মুয্যাম্মিল-৬)।
এসব বান্দাহদেরকে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাহ বলেছেন এবং নেকী ও ঈমানদারীর সাক্ষ্য দিয়েছেন। (সুবহানাল্লাহ)
(আরবী**************)
আল্লাহর পিয়ারা বান্দাহ তারা….. যারা তাদের পরোয়ারদেগারের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়। -(ফুরকান: ৬৩-৬৪)।
মুমেনদের এ বিশিষ্ট গুণ তাদেরকে কুফরের
প্রবল আক্রমণের মুকাবিলায় অটল রাখতো এবং বিজয় মালায় ভূষিত করতো। বদরের
ময়দানে হকের আওয়ায বুলন্দকারী নিরস্ত্র মুজাহিদগণের অতুলনীয় বিজয়ের
বুনিয়াদী কারণগুলোর মধ্যে এটিও ছিল একটি যে, তাঁরা রাতের শেষ সময়ে আল্লাহর
সামনে চোখের পানি ফেলে কাঁদতেন এবং গুনাফ মাফ চাইতেন।
(আরবী*************)
এসব লোক অগ্নি পরীক্ষায় অচল অটল, সত্যের
অুসারী, পরম অনুগত, আল্লাহর পথে মাল উৎসর্দকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে
আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির জন্যে ক্ষমা প্রার্থী- (আলে ইমরান : ১৭)।
স্বয়ং নবী করীম (স) তাহাজ্জুদের ফযিলত
সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রা) বলেন, নবী (স)
যখন মদীনায় তাশরীফ আনেন তখন প্রথমযে কথাগুলো তাঁর পাক যবান থেকে শুনি তা
হলো:
“হে লোকগণ। ইসলামের প্রচার ও প্রসার কর,
মানুষকে আহার দান কর, আত্মীয়তা অটুট রাখ, আর যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকবে তখন
তোরা রাতে নামায পড়তে থাকবে। তাহলে তোমরা নিরাপদে বেহেশতে যাবে- (হাকেম,
ইবনে মাহাজ, তিরমিযী)।”
হযরত সালমান ফারসী (রা) বলেন, নবী (স) বলেছেন-
“তাহাজ্জুদ নামাযের ব্যবস্থাপনা কর, এ
হচ্ছে নেক লোকের স্বভাব এ তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট করে দেবে, গুনাহগুলো
মিটিয়ে দেবে, গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং শরীর থেকে রোগ দূর করবে।”
আর এক সময় তিনি বলেন-
ফরয নামাযগুলোর পরে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নামায হলো রাতে পড়া তাহাজ্জুদ নামায- (সহী মুসলিম-আহমদ)।
নবী (স) আরও বলেন-
রাতের শেষ সময়ে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার
দিকে নাযিল হন এবং বলেন, “ডাকার জন্যে কেউ আছে কি যার ডাক আমি শনব, চওয়ার
জন্যে কেউ আছে কি যাকে আমি দেব, গুনাফ মাফ চাওয়ার কেউ আছে কি যার গুনাহ আমি
মাফ করব?। (সীহ বুখারী)।
তাহাজ্জুদ নামাযের ওয়াক্ত
তাহাজ্জুদের অর্থ হলো ঘুম থেকে উঠা।
কুরআনে রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের যে তাকী করা হয়েছে তার মর্ম এই যে,
রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর উঠে নামায পড়া। তাহাজ্জুদের মসূন সময় এই যে
এশার নামায পর লোক ঘুমাবে তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে নামায পড়বে।
নবী (স) কখনো মধ্য রাতে, কখনো তার কিছু
আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে-ইমরানের শেষ
রুকুর কয়েক আয়অত পড়তেন। তারডপর মেসওয়াক ও অযু করে নামায পড়তেন। ঘুম থেকে
উঠার পর তিনি নিম্ন আয়াতগুলো পড়তেন- (আরবী***************)
বস্তুত আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং রাত ও
দিনের আবর্তনের মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে ঐসব জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্যে যারা
দাঁড়ানো, বসে থাকা এবং শুয়ে থাকা অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও
যমীনের সৃষ্টি নৈপূণ্যের উপর চিন্তা গবেষণা করে। অতপর তারা আপনা-আপনি বলতে
থাকে, হে আমাদের রব। এসব কিছু তুমি অযথা পয়দা করনি। বেহুদা কাজ থেকে তুমি
পাক, পবিত্র ও মহান। অতএব হে আমাদের রব, আমাদেরকে দোযখের আগুন থেকে
বাঁচাও। তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ কর তাকে প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত লাঞ্ছনার
মধ্যেই ফেল। তারপর এসব যালেমদের আর কোন সাহায্যকারী থাকবে না। হে প্রভু!
আমরা একজন আহবানকারী শুনলা, যে ঈমানের দিকে আহবান করে নিজেদের রবকে মেনে
নিতে বলে। আমরা তার দাওয়াত কবুল করলাম। হে আমার প্রবু। আমাদের গুনাফ মাফ
করে দাও। আমাদের মধ্যে যেসব মন্দ কাজ আছে তা তুমি দূর করে দাও। এবং আমাদের
শেষ পরিণতি নেক লোকদের সাথে কর। হে আল্লাহ! তুমি যেসব ওয়াদা তোমার রসূলদের
মাধ্যমে করেছ, তা পূরণ কর এবং কিয়ামতের দিনে লাঞ্ছনায় ফেলো না। নিশ্চয় তুমি
ওয়াদা বরখেলাপ কর না। (আলে ইমরান)
তাহাজ্জুদের রাকায়াতসমূহ
তাহাজ্জুদের রাকয়াত সংখ্যা অন্তত পক্ষে
দুই এবং উর্ধতম সংখ্যা আট। নবী পাক (স)-এর অভ্যাস ছিল দুই দুই করে আট
রাকায়াত পড়া। সে জন্যে আট রাকায়াত পড়াই ভালো। তবে তা জরুরী নয়। অবস্থা ও
সুযোগের প্রেক্ষিতে যতটা পড়া সম্ভব তাই পড়লেই চলবে।
তারাবীহর নামায
তারাবীহর নামায নারী পুরুষ উভয়ের জন্যে
সুন্নাতে মুয়াক্তাদা। পুরুষের জন্যে তারাবীহ জামায়াত করে পড়া সুন্নাত।
তারাবীহ বিশ রাকায়াত ****১
হযরত ওমর (রা) বিশ রাকয়াত তারাবীহ নামায পড়ার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীকালে খোলাফায়ে রাশেদীনও বিশ রাকায়াত পড়েন।
তারাবীহ পড়ার পদ্ধতি এই যে, দু’রাকায়াত
তারাবীহ সুন্নাতের নিয়ত করে এইভাবে পড়ুন যেমন অন্যান্য সুন্নাত ও নফল পড়েন।
প্রত্যেক চার রাকয়াত পর এতটুকু সময় বসুন যে সময়ে চার রাকায়াত পড়া যায়।
বসাকালে কিছু তাসবীহ ও যিকির করা ভালো। চুপচাপ করে বসাও যায়।
তারাবীর ওয়াক্ত এশার নামাযের পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত।
হাদীসগুলোতে তারাবীহ নামাযের অনেক ফযিলত বয়ান করা হয়েছে নবী পাক (র) এরশাদ করেন-
“যে ব্যক্তি ঈমানের অনুভূতিসহ আখেরাতের
প্রতিদানের উদ্দেশ্যে রমযানের রাতগুলোতে তারাবীহ পড়বে আল্লাহ তায়ালা তার
কৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন।” (বুখারী মুসলিম)।
তারাবীহ নামাযের বিস্তারিত বিবরণ রোযার অধ্যায়ে দ্রষ্টব্য।
১. আহলে হাদীসের নিকটে তারাবীহ আট রাকয়াত।
চাশতের নামায
চাশতের নামায মুস্তাহাব। যখন সূর্য
ভালোভাবে বেরিয়ে আসবে এবং আলো ছড়িয়ে পড়বে তখন চাশতের ওয়াক্ত শুরু হয়। এবং
বেলা গড়ার আগে পর্যন্ত থাকে। এ সময়ে কেউ ইচ্ছা করলে চার রাকায়াত অথবা তার
বেশী নফল নামায আদায় করতে পারে। নবী (স) চার রাকায়াতও পড়েছেন আবার চারের
বেশীও পড়েছেন। চাশত নামাযের নিয়ত এভাবে করবেন-
নবীর সুন্নাত চার রাকায়াত চাশত নামাযের নিয়ত করছি।
তাহিয়্যাতুল মসজিদ
তাহিয়্যাতুল মসজিদের অর্থ হলো এমন নামায
যা মসজিদে প্রবেশকারীদের জন্যে পড়া মসনূন। নবীর (স) এরশাদ হচ্ছে- তোমাদের
মধ্যে যদি কেউ মসজিদে যায়, এ দু’রাকায়াত পড়ার আগে বসবে না। (বুখারী,
মুসলিম)।
মসজিদ যেহেতু আল্লাহর এবাদতের জন্যে তৈরী
করা হয়, এ জন্যে তার সম্মানের জন্যে প্রবেশ করার পরই আল্লাহর দরবারে
মানুষের সিজদারত হওয়া উচিতি। যদি কেউ মসজিদে প্রবেশ করার পর ফরয নামায অথবা
কোন ওয়াজেব, সুন্নাত ইত্যদি পড়ে তাহলে- তাই তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় হবে।
তাহিয়্যাতুল মসজিদ দু’রাকয়াতও পড়া যায় অথবা তার বেশী।
তাহিয়্যাতুল অযু
অযু শেষ করার পর অযুর পানি শুকাবার আগে
দু’রাকায়াত নামায পড়া মুস্তাহাব। তাকে তাহিয়্যাতুল অযু বলে। চার রাকয়অত
পড়লেও দোষ নেই। তাহিয়্যাতুল অযুরও ফজিলত হাদীসে বয়ান করা হয়েছে। নবী (স)
বলেন-
“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে দু’রাকায়াত নামায পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে পড়বে তার জন্যে বেহেশত ওয়াজেব হয়ে যায়” –(সহীহ মুসলিম)।
গোসলের পরেও এ দু’রাকায়াত পড়া মুস্তাহাব এ জন্যে যে, গোসলের সাথে অযুও হয়ে যায়।
সফরে নফল
সফরে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে দু’রাকায়াত
নামায পড়া মুস্তাহাব এবং সফর থেকে বাড়ী ফেরার পর দু’রাকায়াত নামায মসজিদে
আদায় করে বাড়ীতে প্রবেশ করা উচিত। নবী (স) যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন। প্রথমে
মসজিদে পৌঁছে দু’রাকায়াত নামায পড়তেন (সহীহ মুসলিম)। তিনি বলেন, সফরের সময়
দু’রাকায়াত নামায ঘরে পড়া হয়, তার চেয়ে কোন ভাল জিনিস লোক ঘরে ফেলে যায়
না- (তাবারানী)।
সফরকালে যদি কেউ কোথাও অবস্থান করতে চায়
তাহলে সেখানে প্রথম দু’রাকায়াত নামায আদায় করা মুস্তাহাব হবে( শামী প্রভৃত
গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)।
সালাতুল আওয়াবীন
সালাতুল আওয়াবীন মাগরেব বাদ পড়া হয়। নবী
(স) তার বিরাট ফযিলত বয়ান করেছেন এবং পড়ার জন্যে প্রেরণা দিয়েছেন। আওয়াবীন
মাগরেব বাদ দু’রাকায়াত করে ছ’ রাকয়াত পড়তে হয়। এ নামায মুস্তাহাব।
সালাতুত তাসবীহ
এ নামাযকে সালাতুত তাসবীহ এ জন্যে বলা হয় যে, এর প্রত্যেক রাকয়াতে পঁচাত্তার বার এ তাসবীহ পড়া হয়-
(আরবী***********)
সালাতুত তাসবীহ মুস্তাহাব। হাদীসে তার
অনেক সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। নবী (স) চার রাকায়াত এ নামায পড়েছেন। এ জন্যে
একই সালামে চার রাকয়াত পড়া ভালো। তবে দু’রাকায়াত পড়লেও দুরস্ত হবে।
সালাতুত তাসবীহ পড়ার নিয়ম এই যে, চার রাকায়াত সালাতুত তাসবীহর নিয়ত করে হাত বাঁধুন। তারপর সানা পড়ার পর ১৫ বার এ তাবীহ পড়বেন।
তারপর আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতেহা পড়ুন এবং কুরআনের কিছু অংশ। তারপর দশবার তাবীহ পড়ুন।
রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহর পর এ তাসবীহ
দশবার, রুকু থেকে উঠে কাওমার সময় এ তাসবহী দশবার, সিজদায় ‘সুবহানা
রাব্বিয়াল আ’লার’ পর দশবার, সিজদা থেকে উঠে জালসায় দশবার। দ্বিতীয় সিজদায়
এভাবে দশবার পড়ুন।
অতপর দ্বিতীয় রাকয়াতে ঐভাবে সানার পর ১৫
বার, কেরায়াতের পর ১০বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে উঠে দশবার, দু’সিজদায়
দশ-দশবার দু’সিজদার মাঝে ১০ বার পড়ুন।
অতপর ঠিক এমনি তৃতীয় ও চতুর্থ রাকয়াত
পড়ৃন। অর্থাৎ প্রত্যেক রাকয়াতের ৭৫ বার এবং মোট ৩০০ বার তাসবীহ পড়ুন।
তাসবীহ গণনার হিসাব রাখার জন্যে আংগুলের আঁকে গুণবেন না। বরঞ্চ আংগুলের উপর
চাপ দিয়ে সংখ্যা হিসাব করুন। কোনখানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে অন্য স্থানে
তা পূরণ করুন। যেমন ধরুন, জালসায় তাসবীহ ভুলে গেলে সিজদায় গিয়ে পূরণ করুন।
সিজদায় তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে জালসায় তা পূরণ করবেন না। এ জন্যে যে সিজদা
থেকে জালসা দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়। সে জন্যে অন্য সিজদায় তা পূরণ করবেন।
সালাতে তওবা
প্রত্যেক মানুষ ভুল করে, গুনা করে। যখন
কোন গুনাহের কাজ হয়ে যায়, তখন লজ্জিত-অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে কেঁদে
কেটে গুনাহ মাফের জন্যে দু’রাকায়াত পড়া মুস্তাহাব।
হযরত আবু বরক (রা) বলেন, নবী পাক (স) এরশাদ করেছেন-
কোন মুসলমানের পক্ষ থেকে কোন গুনাহ হয়ে
গেলে তার উচিত পাক সাফ হয়ে দু’রাকায়াত নফল নামায পড়া এবং আবল্লাহর কাছে
গুনাহ মাফ চাওয়া। তাহলে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেবেন। তারপর তিনি এ আয়াত
তেলাওয়াত করেন।
(আরবী*************)
এবং তাদের অবস্থা এই যে, যদি কখনও তাদের
দ্বারা কোন অশ্লীল কাজ হয়ে যায় অথবা তারা কোন গুনাহ করে নিজেদের উপর যুলুম
করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ তাদের আল্লাহর ইয়াদ হয় এবং তাঁর কাছে গুনাহ মাফ চায়।
কারণ আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে গুনাহ মাফ করতে পারে? এবং তারা তারেদ কৃত
অপরাধের জন্যে জ্ঞাতসারে জিদ ধরে না। (আলে-ইমরান ১৩৫)
সালাতে কসূফ ও খসূফ ***১
কসূফ এবং খসূফের সময় দু’রাকায়াত করে নামায
পড়া সুন্নাত। তবে তার জন্যে আযান একামতের প্রয়োজন নেই। মানুষ জমায়েত করতে
হলে অন্যভাবে করবে।
নামাযে সূরা বাকারা অথবা আলে-ইমরানের মতো
লম্বা সূরা এবং লম্বা লম্বা রুকু জিদা করা সুন্নাত। ****২ নামাযের পর ইমাম
দোয়ায় মশগুল হবেন। এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলতে থাকবেন। তারপর গ্রহণ শেষ
হওয়ার সাথে সাথে দোয়াও শেষ হবে। তবে গ্রহণ শেষ হবার আগে যদি কোন নামাযের
ওয়াক্ত এসে যায় তাহলে দোয়া করা ছেড়ে দিয়ে সে ওয়াক্তের নামায পড়তে হবে।
খসূফে জামায়ত সুন্নাত নয়। প্রত্যেকে একাকী দু’রাকায়াত নামায পড়বে। নবী (স) এরশাদ করেন-
সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর দুটি নিদর্শন।
কারে জন্ম অথবা মৃত্যুতে তাদের গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা দেখবে যে, সূর্য বা
চন্দ্রে গ্রহণ লেগেছে, তখন তোমরা আল্লাহকে ডাক, তার কাছে দোয়া কর এবং নামায
পড় যতোক্ষণ না গ্রহণ ছেড়ে গিয়ে সূর্য বা চন্দ্র পরিষ্কার হয়। ****৩
যেসব সময়ে নামায নিষিদ্, যেমন সূর্য উঠার
সময়ে, ডুবার সময় এবং দুপুর বেলা, তখন যদি সূর্যগ্রহণ হয় তাহলে নামায পড়া
যাবে না। তবে এসব নিষিদ্ধ সময় অতীত হওয়ার পরও যদি গ্রহণ থাকে তাহলে নামায
পড়া যেতে পারে।
কসূফের নামাযে জোরে জোরে কেরায়াত পড়া সুন্নাত। এমনিভাবে ভয়-ভীতির সময়ে, বিপদ-মুসিবদ দুঃখ কষ্টের সময়ে নফল নামায পড়া সুন্নত।
***১ সূর্য গ্রহণকে কসুফ এবং চন্দ্র গ্রহণকে খসূফ বলে।
***২ প্রথম রাকয়াতে সূরা আনকাবুত এবং দ্বিতীয় রাকয়অতে সূরা রু পড়া ভালো। তবে তা পড়া জরুরী নয়
****৩ বুখারী, মুসলিম।
যেমন ধরুন ভয়ানক ঝড়-তুফান এলো, অবিরাম
মুষলধারে বৃষ্টি পড়তে থাকলো, ভূমিকম্প এলো, আকা থেকে বিদ্যুত পড়া শুরু হলো,
মহামারী শুরু হলো, দুশমনের ভয় হলো, বিশৃংখলা ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু
হলো- মোট কথা সকল বিপদের সময়ে নামায পড়া সুন্নত। এ নামায নিজ সুবিধা মতো
একাকী পড়া উচিত।
সালাতে হাজাত
যখন বান্দা কোন বিশেষ প্রয়োজনের সম্মুখীন
হবে তা সে প্রয়োজনের সম্পর্ক আল্লাহর সাথে হোক যেমন পরীক্ষায় পাস করা কাম্য
অথবা কোন বাড়ী বা দোকানের প্রয়োজন অথবা সে প্রয়োজনের সম্পর্ক অন্য কোন
মানুষের সাথে হোক, যেমন কোন ইসলাম প্রিয় মেয়ের বিবাহ কাম্য, অথবা কারো
অধীনে কোন চাকরির প্রয়োজন তখন তার জন্যে মুস্তাহাব এই যে, সে সালাতুল
হাজাতের নিয়তে দুরাকায়াত নামায আদায় করবে। তারপর নিম্নের দোয়া পড়বে-
(আরবী*************)
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি বড়ো
ত্রুটি বিচ্যুতি উপেক্ষাকারী ও বড়োই করুণাশীল। তিনি ত্রুটি-বিচ্যুটি তেক
েপাক, বিরাট আরশের মালিক, প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর যিনি বিশ্ব জগতের
মালিক-প্রতিপালক। হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে ঐসব জিনিস ভিক্ষা চাচ্ছি যার
জন্যে তোমার রহম অপরিহার্য এবং যা তোমার বখশিশ ও মাগফিরাতের কারণ হয়। আমি
প্রত্যেক মংগলের অংশীদার হওয়ার কামনা করি এবং প্রত্যেক পাপ থেকে নিরাপদ
থাকার ইচ্ছা পোষণ করি। (আয় আল্লাহ) তুমি আমার গুনাহ মাফ করা ব্যতীত এবং
আমার দুঃখ দৈন্য দূর করা ব্যতীত ক্ষান্ত হইও না এবং আমার যেসব প্রয়োজন
তোমার পসন্দনীয় তা পূরণ না করে ছেড়ো না- হে অনুগ্রকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো
অনুগ্রহকারী।
এ দোয়ার পর যা চাওয়ার তা চাইবেন। এ নামায প্রয়োজন পূরণের জন্য পরীক্ষিত।
একবার এক অন্থ নবী (স) –এর খেদমতে হাযির
হলো। সে আরয করে বললো, হে আল্লাহর রসূল। আমার দৃষ্টিশক্তির জন্যে আল্লাহর
কাছে দোয়া করুন। নবী (স) বললেন, তুমি ধৈর্য ধারণ করলে অনেক অনেক প্রতিদান
পাবে। আর যদি বল তো দোয়া করি।
সে দোয়া করার জন্যে ইচ্ছ প্রকারশ করলে নবী (স) তাকে এ নামায শিক্ষা দেন- (ইলমুল ফেকাহ৯, ২য় খণ্ড)।
এস্তেখারার নামায
এস্তেখারা শব্দের অর্থ মঙ্গল কামনা করা।
যদি এমন কোন অবস্থার সৃষ্টি হয়, যেমন কোন বিযের ব্যাপারে পয়গাম এসেছে। এখন
তা কবুল করা হবে, না প্রত্যাখ্যান করা হবে, যেমন কোন সফর যাওয়ার ব্যাপারে
যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্ন জাগলো, কোন কারবার মরু করার ব্যাপারে, অন্য কারো
সাথে কোন ব্যাপারে জড়িত হওয়ার সম্পর্কে, কোন দোকান, বাড়ী বা জমি কেনা বেচার
ব্যাপারে, অথবা কোন চাকরি করা বা ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে, অর্থাৎ যে কোন
ব্যাপারে কোন সমস্যা দেখা দিলে এসব ব্যাপারে মনস্থির করার জন্যে দু’রাকায়াত
নফল নামায এবং এস্তেখারায় মসনূন দোয়া পড়া মুস্তাহব। এস্তেখারার পর যেদিকে
মনে ঝোঁক প্রবণতা অনুভব করা যাবে তা অবলম্বন করলে আল্লাহর ফযলে সাফল্য লাভ
করা যাবে।
নবী (স) বলেন, এস্তেখারাকারী কখনো
ব্যর্থকাম হয় না, পরামর্শকারী কখনো অনুতপ্ত হয় না এবং মিতব্যয়ী কখনো অপরের
মুখাপেক্ষী হয় না- (তাবারানী)।
হযরত সা’দ বিন আবি ওক্কাস (রা) বলেন, নবী
(স) বলেছেন, আল্লাহর কাছে এস্তেখারা করা আদম সন্তানদের সৌভাগ্যের বিষয়।
আল্লাহর মর্জির উপর রাজী থাকাও আদম সন্তানদের জন্যে সৌভাগ্। আদম সন্তানদের
দুর্ভাগ্য এই যে, তারা আল্লাহর কাছে এস্তেখারা করে না এবং আল্লাহর ফায়সালার
উপর অসন্তোষ প্রকাশ করে- (মুসনাদে আহমদ)।
এস্তেখারা করার নিয়ম পদ্ধতি
এস্তেখারা করার নিয়ম এই যে, নিষিদ্ধ
সময়গুলো ব্যতীত সুযোগমত যে কোন সময়ে সাধারণ নফল নামাযের মতো দু’রাকায়াত
এস্তেখারার নামায পড়ুন। তারপর আল্লাহর হামদ ও সানা এবং দুরুদ শরীফ পড়ুন।
তারপর নবীর শেখানো এস্তেখারার দোয়া পড়ে কেবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এমনি
সাত বার করা ভাল। তার পর মনের ঝোঁক প্রবণতা যেদিকে বুঝা যাবে তা আল্লাহর
মর্জি মনে করে অবলম্বন করুন।
কোন কারণে যদি নামাযের সুযোগ না হয়, যেমন,
কোন মেয়েলোক হায়েয বা নেফাসের অবস্থায় আছে, তাহলে শুধু দোয়া পড়াই যথেষ্ট
হবে। তারপর মন যেদকে যায় তদনুযায়ী কাজ করা উচিত।
এস্তেখারার দোয়া
হযরত জাবের (রা) বলেন, নবী (স) যেভাবে আমাদেরকে কুরআন পাক শিক্ষা দিতেন, তেমনভাবে এস্তেখারর দোয়াও শিক্ষা দিতেন।
তিনি বলতেন-
তোমাদের কেউ যদি কোন সময়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড় তাহলে দু’রাকায়াত নফল নামায পড়ে এ দোয়া কর-
(আরবী*************)
আয় আল্লাহ! আমি তোমার এলেমের ভিত্তিতে
তোমার নিকটে মংগল কামনা করছি এবং তোমার কুদরতের দ্বারা তোমার বিরাট ফযল ও
করম ভিক্ষা চাচ্ছি। কারণ তুমি কুদরতের মালিক এবং আমি শক্তিহীন। তুমি সব
জান, আমি জানি না এবং তুমি গায়েবের কথাও ভালভাবে জান।
আয় আল্লাহ! তোমার জ্ঞান মতে এ কাজ যদি
আমার জন্যে, আমার দ্বীন ও দুনিয়ার জন্যে এবং শেষ পরিণামের দিক দিয়ে মংগলকর
হয়, তাহলে তা আমার ভাগ্যে লিখে দাও। আমার জন্যে তা সহজ করে দাও এবং তা আমার
জন্যে বরকতপূর্ণ করে দাও। আর যদি এ কাজ আমার জন্যে, আমার দ্বীন ও দুনিয়ার
জন্যে এবং পরিণামের দিক দিয়ে অমংগলকর হয় তাহলে তা আমা থেকে দূরে রাখ েএবং
আমাকে তার থেকে বাঁচাও এবং আমার ভাগ্যে মংগল লিখে দাও যেখানেই তা হোক এবং
তারপর প্রতি আমাকে সন্তুষ্ট এবং অবিচল থাকার তাওফীক দাও।
মসজিদের বিবরণ
মদীনা শরীফে হিজরত করার পর নবী পাক (স)-এর
সবচেয় বড় চিন্তা এই হলো যে, আল্লাহর এবাদতের জন্যে মসজিদ তৈরী করতে হবে।
তাঁর বাসস্থানের নিকটে সাহল ও সুহাইল নামে দুই এতীম শিশুর কিছু জমি ছিল।
নবী (স) তাদেরকে ডেকে নিয়ে তাদের কাছ থেকে সে জমি খরিদ করে নেন। তারপর
মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা)-এর সাথে স্বয়ং নবী (স)
তাঁর মুবারক হাত দিয়ে কাজ করতেন এবং ইট পাথর বয়ে আনতেন। তা দেখে একজন
সাহাবী বলে উঠলেন।
(আরবী***********)
আমরা যদি চুপচাপ বসে থাকি এবং নবী (স) স্বহস্তে কাজ করেন, তাহলে আমাদের এ আচরণ আমাদেরকে গোমরাহ করে দেবে।
সাহাবায়ে কেরাম আগ্রহ ও আনন্দ সহকারে কাজ করছিলেন এবং কবিতা সুর করে গাইছিলেন-
(আরবী***********)
হে আল্লাহ! সত্যিকার যিন্দেগী তো হচ্ছে আখেরাতের যিন্দেগী। অতএব তুমি আনসার ও মুহাজেরীনের উপর রহম কর।
আসলে মসজিদ ইসলামী যিন্দেগীর এমন এক
কেন্দ্রবিন্দু যার চার ধারেই মুসলমানের গোটা জীবন আবর্তিত হতে থাকে। এছাড়া
কোন ইসলামী জনপদের ধারণাই করা যায় না। এ করণেই নবী (স) মদীনা পৌছার পরেই এই
মসজিদ তৈরীর ব্যবস্থা করেন এবং নিজ হাতে ইট পাথর বয়ে নিয়ে মসজিদ তৈরী
করেন।
মুসলমানদের মধ্যে দ্বীনী প্রাণ শক্তি
উজ্জীবিত রাখার জন্যে, তাদের মধ্যে মিল্লাতের অস্তিত্ব সম্পর্কে সাত্যিকার
অনুভূতি পয়দা করার এবং তাদের বিচ্ছিন্ন অংশগুলোকে একত্রীভূত করার মাধ্যমেই
হচ্ছে এই যে, মসজিদকে ইসলামী যিন্দেগীর কেন্দ্রবিন্দু বানাতে হবে এবং তার
মধ্যে জামায়াতের সাথে নামায প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে। এ উদ্দেশ্যেই
হযরত মূসা (আ) এবং হযরত হারুন (আ) কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল মিসরে কিছু
ঘরবাড়ী নির্দিষ্ট করে নিয়ে সেখানে জামায়তসহ নামায কায়েম করার। এভাবে এ
বাড়ী-ঘরগুলোকে মুসলমানদের যিন্দেগীর কেন্দ্র বিন্দু বানিয়ে বিচ্ছিন্ন
শক্তিগুলোকে একত্র করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
(আরবী***********)
আমরা মূসা (আ) এবং তার ভাইকে এই বলে
নির্দেশ দিলাম মিসরে তোমাদের কওমের জন্যে কিছু ঘর দোর সংগ্রহ কর এবং কেবলা
করে নামায কায়েম কর (ইনুনুস : ৮৭)।
আল্লাহর রসূল (স) মসজিদ তৈরী করতে এবং তা চালু রাখার জন্যে বিভিন্ন রকমের প্রেরণা দিয়েছেন। তাঁর এরশাদ হচ্ছে-
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে মসজিদ তৈরী করে, তার জন্যে আল্লাহ জান্নাতে ঘর তৈরী করেন – (তিরমিযী, বুখারী)।
মসজিদ নির্মাণ করার অর্থ মসজিদের ঘর তৈরী
করা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মসজিদ প্রতিষ্ঠার অর্থ হলো তার মধ্যে আল্লাহর
এবাদত করা, জামায়াতসহ নামায কায়েমের ব্যবস্থা করা। নতুবা এ কথা ঠিক যে, যদি
এ উদ্দেশ্য পূরণ করা না হয় তাহলে মসজিদ অন্যান্য বাড়ী-ঘরের মতো একটি ঘর
মাত্র হবে।
নবী (স) বলেন, সে ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়ার নীচে হবে যার মন সর্বদা মসজিদে লেগে থাকে- (বুখারী)।
অর্থাৎ কোন সময়ই মসজিদের চিন্তা তার মন থেকে দূর হয় না। এক ওয়াক্ত নামায আদায় করার পর অধীর হয়ে দ্বিতীয় ওয়াক্তের অপেক্ষা করে।
মুসলমানদের দ্বীনী যিন্দেগী জীবিত ও
জাগ্রত রাখার জন্যে মসজিদের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের অনুমান করুন যে, নবী
(স) মৃত্যু শয্যায় কষ্ট পাচ্ছেন তথাপি ঐ অবস্থায় বিছানা ছেড়ে উঠেছেন এবং
দু’জন লোকের উপর ভর দিয়ে পা মুবারকদ্বয় মাটিতে টেনে হেঁচড়ে মসজিদে পৌছেছেন।
তারপর জামায়াতে নামায আদায় করেন- (বুখারী)।
আল্লাহর কাছে এ গোটা দুনিয়ার মধ্যে শুধু ঐ
অংশটুকু সবচেয়ে বেশী প্রিয় যেখানে আল্লাহর মসজিদ প্রতিষ্ঠিত আছে। অতপর
এটা কি করে হতে পারে যে, মুমেনদের মসজিদের সাথে অসাধারণ সম্পর্ক হবে না?
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেন-
আল্লাহর নিকটে ঐসব জনপদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় স্থান তাঁর মসজিদ এবং সবচেয়ে ঘৃণিত স্থান সে বস্তিগুলোর বাজার (মুসলিম)।
এক সময়ে নবী (স) মসজিদের সাথে ঘনিষ্ঠ
সম্পর্ককে ঈমানের সুস্পষ্ট আলামত বলে বর্ণনা করেন। তারপর নির্দেশ দেন যে,
মুসলমান সমাজে যারা মসজিদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক রাখে এবং মসজিদের খেদমত
করা তাদের প্রিয় কাজ হয়, তারা সত্যিকার ঈমানদার এবং তোমরা তাদের ঈমানের
সাক্ষী থাক। এটা ঠিক যে, মুসলিম সমাজে এ সব লোকই শ্রদ্ধার পাত্র। তাদের
অনুসরণ করা দ্বীন ও দুনিয়ার সৌভাগ্য।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, নবী (স) এরশাদ করেছেন-
যখন তোমরা কাউকে দেখবে যে, সে মজিদের সাথে
ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখে এবং মসজিদ দেখাশুনা করে তাহলে তোমরা সাক্ষী থাক যে,
সে ঈমানদার। এ জন্যে যে, আল্লাহ বলেন- (আরবী*************)
আল্লাহর মসজিদ তারাই আবাদ রাখে যারা আল্লাহ এবং আখেরাতের উপর ঈমান রাখে।
উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযী এবং ইবনে মাজাহ।
মসজিদের আদব ও শিষ্টাচার
১. মসজিদে প্রবেশ করার সময় প্রথমে ডান পা
রাখা উচিত। তারপর দরুদ শরীফ পড়ে- সেই দোয়া করা উচিত যা নবী (স) শিক্ষা
দিয়েছেন। নবী (স) বলেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ মসজিদে আসবে সে যেন নবীর উপর
দরুদ পাঠায় এবং এ দোয়া করে (আরবী*************)
আয় আল্লাহ তোমার রহমতের দুয়ার আমার জন্যে খুলে দাও। (সহীহ মুসলিম)
২. মসজিদে প্রবেশ করে সর্ব প্রথম
দু’রাকায়াত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নফল নামায পড়া উচিত। নবী (স) বলেন, তোমাদের
মধ্যে কেউ মসজিদে এলে দু’রাকায়াত নামায না পড়া পর্যন্ত যেন সে না বসে।
(বুখারী, মুসলিম)।
৩. মসজিদে নিশ্চিন্ত মনে বিনয়ের সাথে বসে
থাকা উচিত। যাতে করে আল্লাহর মহত্ব ও তাঁর ভয় মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
মসজিদে হৈ হল্লা করা, হাসি-ঠাট্টা এবং দুনিয়াবী কাজ-কর্মের আলেঅচনা করা,
বেচা কেনা করা এবং এ ধরনের অন্যান্য দুনিয়াদারী কাজ –কর্ম করা মসজিদের
মর্যাদার খেলাপ। নবী (স) এসব কাজ-কর্ম সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন। তিনি
বলেন-
এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ মসজিদের মধ্যে
নিরেট দুনিয়াবী কথাবার্তা বলবে। তোমরা যেন এসব লোকের কথাবার্তায় শরীক না
হও। আল্লাহ দ্বীন থেকে এ ধরনের উদাসীন লোকদের নামায কবুল করবেন না।
মসজিদের মহত্ব ও তার প্রতি শ্রদ্ধা এটাই
দাবী করে যে, মানুষ ভীত কম্পিত হয়ে সেখানে প্রবেশ করে এবং যেখানই জায়গা পায়
সেখানেই বিনীতভাবে বসে পড়ে। এটাতো মারাত্মক অন্যায় যে, মানুষ অন্যান্য
লোকের ঘাড়ের উপর দিয়ে মানুষ ঠেলে সামনে যাবে। এটাও অন্যায় যে, ইমামের সাথে
রুকু এবং রাকয়াত ধরার জন্যে মসজিদে হুড়মুড় করে দৌড়াবে। এভাবে দৌড়ানো
মসজিদের মর্যাদার খেলাপ। রাকয়াত ধরা যাক না যাক নেহায়েত ভদ্রতা ও শালীনতার
সাথে ধীর পায়ে মসজিদে চলা উচিত। নবী (স) বলেন, তোমাদের জন্যে জরুরী যে,
তোমরা শান্তশিষ্ট হয়ে শালীনতাসহ মসজিদে থাকবে।
৪. মসজিদে দুর্গন্ধ জিনিস নিয়ে বা খেয়ে
যাওয়া উচিত নয়। নবী (স) বলেন, রসুন-পিঁয়াজ খেয়ে যেন কেউ আমাদের মসজিদে না
আসে। এ জন্যে যে, যেসব জিনিসে মানুষের কষ্ট হয়, তাতে ফেরেশতাদেরও কষ্ট হয়
(বুখারী মুসিলম)।
৫. মসজিদে এমন ছোটো বাচ্চা নিয়ে যাওয়া
উচিত নয়, যে পেশাব পায়খানা চাপলে বলতে পারে না। কারণ আশংকা যে, কখন পেশাব
পায়খানা করে ফেলে কিংবা অন্যান্যভাবে মসজিদের সম্মান নষ্ট করে ফেলে।
পাগলদেরও মসজিদে আসদে দেয়া উচিত নয় যাদের পাক নাপাক জ্ঞান নেই।
৬. মসজিদের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করা ঠিক
নয়। মসজিদে ঢুকলেই তার হক হয়ে দাঁড়ায় যে, সেখানে প্রবেশকারী নামায পড়বে,
অথবা যিকির ও তেলাওয়াত করবে। এক দরজা দিয়ে ঢুকে অন্য দরজা দিয়ে এমনি এমনি
বের হয়ে যাওয়া মসজিদের বেইযযতি করা হয়। ভুলে কেউ ঢুকে পড়লে স্মরণ হওয়া
মাত্র বেরিয়ে আসা উচিত।
৭. কোন কিচু হারিয়ে গেলে মসজিদে জোরে জোরে
চিৎকার করে তার ঘোষণা করা ঠিক নয়্ এভাবে কেউ মসজিদে ঘোষণা করলে নবী (স)
তার উপর অসন্তুষ্ট হতেন এবং বলতেন- (আরবী**********)
আল্লাহ তোমার হারানো জিনিস ফিরিয়ে না দেন-(বুখারী)
৮. মসজিদের সাথে মনের গভীর সম্পর্ক রাখা উচিত। প্রত্যেক নামাযের সময় আনন্দ ও উৎসাহ সহকারে মসজিদে যাওয়া উচিত। নবী পাক (সা) বলেন-
কিয়ামতের ভয়ংকর দিনে যখন আল্লাহর আরশ
ব্যতীত কোথাও কোন ছায়া থাকবে না। সেদিন সাত প্রকার লোক আরশের ছায়ার নীচে
হবে। তাদের মধ্যে এক প্রকারে হবে যাদের দিল সিজদায় লেগে থাকতো।– (বুখারী)।
অর্থাৎ মসজিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হবে।
সর্বদা মসজিদে তার ধ্যানের বস্তু হয়। এক ওয়াক্ত নামায শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়
ওয়াক্তের জন্যে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে।
নবী (স) বলেন-
সকাল সন্ধায় মসজিদে যাতায়াতকারীদের জন্যে আল্লাহ তায়ালা তাদের মেহমানদারীর আয়োজন করেন। (বুখারী, মুসলিম)
নবী (স) আরও বলেন-
যে ব্যক্তি ঘরে অযু করে নামাযের জন্যে
যায়, তার মসজিদে পৌছার পর আল্লাহ এতোটা খুশী হন যেমন ধারা মুসাফির সফর শেষে
বাড়ী ফিরে এলে বাড়ীর লোকজন খুশী হয়- (ইবনে খুযায়মা)।
নবী (স) আরও বলেন-
সকালের অন্ধকারে যারা মসজিদে যায়, কেয়ামতের দিনে তার সাথে পরিপূর্ণ আলো থাকবে। (তাবারানী)।
হযরত সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব (রা) বলেন যে, নবী (স) বলেছেন-
যে ব্যক্তি ভালভাবে অযু করলো, তারপর ঘর
থেকে নামাযের জন্যে বেরুলো তার প্রতি ডান কদমের উপর একটি করে নেকী লেখা
হবে। আর বাম কদমের উপর একটি করে গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে। মসজিদ নিকটে হোক
অথবা দূরে। তারপর মসজিদে পৌছার পর যদি পুরা জামায়অতের সাথে নামায আদায় করে
তাহলে পুরা সওয়াব পাবে, কিছু নামায হওয় যাওয়ার পর শরীক হলে এবং সালামের পর
বাকী নামায পুরা করলে- তবুও পুরা সওয়াব পাবে। আর যদি মসজিদে পৌছতে পৌছতে
জামায়াত হয়ে যায় এবং সে একাকী মসজিদে নামায আদায় করে, তথাপিও পুরা সওয়াব
পাবে –(আবু দাউদ)।
৯. মসজিদে সুগন্ধি প্রভৃতির ব্যবস্থা করা,
মসজিদ পাক সাফ রাখা মসজিদের হক। আল্লাহর দৃষ্টিতে এ হচ্ছে জান্নাতবাসীদের
কাজ। নব (স) বলেন, মসজিদ পরিষ্কার করার ব্যবস্থা রাখা, পাক সাফ রাখা,
আবর্জনা বাহিরে ফেলা, মসজিদে সুগন্ধির ব্যবস্থা করা, বিশেষ করে জুমার দিনে
মসজিদ খোশবুতে ভরপুর করা প্রভৃতি যাবতীয় কাজ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে –
(ইবনে মাজাহ, তাবারনী)।
তিনি আরও বলেন-
মসজিদের আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজটা হলো বেহেশতের সুন্দরী হুরপরীর মোহার- (তাবারানী)।
অর্থাৎ যে ব্যক্তি মসজিদ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করে সে প্রকৃত সুন্দরী হুরের মোহর আদায় করে।
হযরত আবু হুরায়রাহ (রা) বলেন, একজন
মেয়েলোক মসজিদে নববীতে ঝাড়ু দেয়ার কাজ করতো। হঠাৎ সে মারা গেল। লোক তাকে
গুরুত্ব না দিযে দাফন করলো। নবী (স) কেও কোন খবর দিল না। নবী (স) যখন তার
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর জানতে পারলেন যে, সে মারা গেছে এবং সামান্য
ব্যাপার মনে করে দাফন করা হয়েছে, তখন নবী (স) বলেন-
তোমরা আমাকে জানালে না কেন?
তারপর তিনি তার কবরে গিয়ে দোয়া করে বলেন, এ
মেয়েলোকটির সবচেয়ে ভাল আমল এ ছিল যে, মসজিদ ঝাড়ু দেয়ার কাজ করতো। (বুখারী,
মুসলিম, ইবনে মাজাহ, প্রভুতি)।
১০. মসজিদের আঙ্গিনায় অযু করা, কুলি করা
অথবা অযু করে মসজিদে হাত ঝেড়ে পানি ছিঁটে ফেলা মাকরুহ। কিছু লোক অযু করার
পর চেহারা এবং হাত মুছে ব্যবহৃত পানি মসজিদের মধ্যে ফেলে। এমন করা মসজিদের
বেয়াদবী করা হয়। এভাবে কারো পায়ে অথবা কাপড়ে প্রবৃতিতে যে কাদামাটি লেগে
থাকে তা মসজিদের দেয়ালে, খামে অথবা পর্দায় মুছে ফেলা মাকরাহ।
১১. জানাবাত অথবা হায়েয নেফাস অবস্থায় মসজিদে না যাওয়া উচিত কোন অপরিহার্য কারণ ব্যতীত এরূপ অবস্থায় মসজিদ যাওয়া মাকরুহ তাহরীমি।
১২. মসজিদে ঘুমানো, অযথা শুয়ে শুয়ে অথবা
বসে বসে সময় কাটানো মাকরুহ। অবশ্যি মুসাফিরের জন্যে থাকা এবং ঘুমানোর
অনুমতি আছে। তারপর যারা এ’তেকাফ করেন তাদের মসজিদেই থাকতে এবং ঘুমাতে হবে।
১৩. সতর খোলা আছে এমন পোশাকে মসজিদে না
যাওয়া উচিৎ। যেমন ধরুন, নেকাপ পরে অথবা কাপড় উপরে উঠিয়ে না যাওয়া উচিত।
বরঞ্চ পোশাক আবৃত হয়ে আদবের সাথে যাওয়া উচিত।
১৪. মসজিদের দরজা বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ
যখন যার ইচ্ছা সে যেন নামায পড়তে পারে। অবশ্যি লট বহর জিনিসপত্র চুরি হওয়ার
ভয় থাকলে দরজা বন্ধ করা যেতে পারে। কিন্তু নামাযের সময় অবশ্যই দরজা খোলা
রাখতে হবে। সাধারণ অবস্থায় মসজিদের দরজা বন্ধ রাখা মাকরুহ।
১৫. মসজিদে দস্তুরমত আযানস ও জামায়াতের
ব্যবস্থা করা উচিত। এমন লোককে আযান দেয়ার জন্যে এবং ইমামতী করার জন্যে
নিযুক্ত করা উচিত, যে মসজিদে আগমনকারী সমস্ত নামাযীর কাছে সামগ্রিকভাবে
দ্বীন ও আখলাকের দিক দিয়ে উত্তম বলে বিবেচিত হয়। যতদূর সম্ভব এ বিষয়ে
চেষ্টা করা দরকার যাতে করে আযান-ইমামতের জন্যে এমন লোক পাওয়অ যায়, যে নিছক
আখেরাতের প্রতিদানের আশায় এ দায়িত্ব পালন করবে।
হযরত ওসমান ইবনে আবীল (আস (রা) বলেন, আমি নবী (স)-এর কাছে দরখাস্ত করে বললাম, আমাকে কওমের ইমাম বানিয়ে দিন।
নবী (স) বলেন-
তুমি তার ইমাম হও কিন্তু দুর্বল লোকদের
খেয়াল রাখবে এবং এমন মুয়াযযিন নিযুক্ত করবে যে আযান দেয়ার পারিশ্রমিক নেবে
না। (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী)।
১৬. মসজিদ চালু রাখার জন্যে পুরোপুরি
ব্যবস্থা করতে হবে। মসজিদ চালু রাখার অর্থ এই যে, তার মধ্যে আল্লাহর এবাদত
করতে হবে এবং লোত যেন যিতির-ফিকির, তেলাওয়াত. নফল নামায প্রভৃতিতে মশগুল
থাকে। আল্লাহ তায়ালার এরশাদ-
(আরবী**************)
এসব ঘরে যেগুলোকে আল্লাহ উচ্চ-উন্নত করতে এবং তার মধ্যে আল্লাহর নামের যিকির করতে অনুমতি দিয়েছেন। (নূর: ৩৬)
অর্থাৎ মসজিদের এ হক যে তার সম্ভ্রম
শ্রদ্ধা করা হোক, তার মধ্যে যিকির-ফিকির করা হোক এবং আল্লাহর ইবাদতের
ব্যবস্থা করা হোক এ মুমিনদের হক ও দায়িত্ব এবং তাদের ঈমানের সাক্ষ্য।
কুরআনে আছে- (আরবী************)
আল্লাহর মসজিদগুলোকে তো তারাই তৈরী করে সজীব ও আবাদ রাখে যারা আল্লাহ এবং আখেরাতের উপর ঈমান রাখে –(তওবা: ১৭)।
কিন্তু আজকাল সাধারণত মানুষ মসজিদগুলোকে
সুন্দ কারুকার্য সহকারে সাজিয়ে রঙিন আলো ঝলমল করে রাখার আশ্চর্য ধরনের
ব্যবস্থা করে। বরঞ্চ তার জন্যে চাঁদাও আদায় করে যা আরো খারাপ। কিন্তু তারা
মসজিদকে সজীব রাখার এবং আল্লাহর ইবাদতের সৌভাগ্যলাভ করার ব্যাপারে অত্যন্ত
উদাসীন থাকে। অথচ নবী পাক (স) এরশাদ করেন-
আমাকে মসজিদ সুউচ্চ ও জাঁকজমকপূর্ণ করে বানাতে আদেশ দেয়া হয়নি। -(আবু দাউদ)।
হযরত ইবনে আব্বাস এ হাদীস শুনানোর পর লোকদের সাবধান করে দিয়ে বলেন-
“তোমরা তোমাদের মসজিদগুলোকে এমনভাবে সাজাতে থাকবে যেমন ইহুদী-নাসারা তাদের ইবাদতখানাকে করে।”
মসজিদ থেকে বেরুবার সয় প্রথমে বাম পা রাখতে হবে এবং তারপর এ দোয়া পড়তে হবে- (আরবী********)
আয় আল্লাহ আমি তোমার ফযল ও করম ভিক্ষা চাই।
১৮. মসজিদের ছাদের উপর পেশাব পায়খানা করা
এবং যৌনকার্য করা মাকরুত তাহরীমি। যদি কেউ ঘরের মধ্যে মসজিদ বানিয়ে থাকে
তাহলে পুরা ঘরের উপর মসজিদের হুকুম কার্যকর করা হবে না। বরঞ্চ অতটুকু
মসজিদের হুকুমের মধ্যে আসবে যা নামাযের জন্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
এমনিভাবে ওসব স্থানও মসজিদের হুকুমের আওতায় আসবে না যা ঈদাইন অথবা জানাযার
জন্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
১৯. সাধারণত কোন পেশাজীবীর জন্যে এটা
জায়েয নয় যে, সে মসজিদে বসে আপন কাজ করবে। তবে যদি এমন লোক মসজিদের
হেফাযতের জন্যে মসজিদে বসে সাময়িকভাবে নিজের কাজ করে যেমন কোন দর্জি
সেলাইয়ের কাজ করে অথবা লেখক লেখার কাজ করে তাহলে তা জায়েয হবে।
0 comments:
Post a Comment