Tuesday, November 1, 2016

নামাযের বয়ান-২

নামায ফরয হওয়ার শর্ত

নামায ফরয হওয়ার শর্ত পাঁচটি। তার মধ্যে কোন একটি শর্ত পাওয়া না গেলে নামায ফরয হবে না।
১. ইসলাম। অর্থাৎ নামায মুসলমানদের উপর ফরয, কাফেরদের উপর নয়।
২. বালেগ হওয়া যতোক্ষণ না বালক বালিকা সাবালক হবে, ততোক্ষণ তাদের উপর নামায ফরয হবে না।
৩. হুশ জ্ঞান থাকা। যদি কেউ পাগল হয় অথবা বেহুশ হয় অথবা সব সময়ে নেশাগ্রস্ত বা বেহুশ থাকে। তার উপর নামায ফরয হবে না।
৪. মেয়ে লোকদের হায়েয ও নেফাস থেকে পাক হওয়া। হায়েয ও নেফাসের সময় নামায ফরয নয়।
৫. নামাযের ওয়াক্ত হওয়া। অর্থাৎ নামাযের এতোটা সময় পেতে হবে যেন পড়া যায় অথবা অন্ততপক্ষে এতটুকু সময় পেতে হবে যে, পাক সাফ হয়ে তাকবীর তাহরীমা বলা যায়। যদি উপরের চারটি শর্ত পাওয়া যায় কিন্তু নামাযের এতটুকু সময় পাওয়া না যায়, তাহলে সে ওয়াক্তের নামায ফরয হবে না।

নামাযের ফরয সমূহ

নামায সহীহ বা সঠিক হওয়ার জন্যে এমন চৌদ্দটি জিনিসের প্রয়োজন যার একটি ছুটে গেলে নামায হবে না। এ চৌদ্দটি জিনিসকে নামাযের ফারায়েয বা ফরযসমূহ বলে। এ সবের মধ্যে সাতটি নামাযের পূর্বে ফরয, (প্রয়োজনীয়) যাকে শর্তসমূহ বা শারায়েত বলে। বাকী সাতটি নামাযের ভেতরে ফরয বা জরুরী যাকে নামাযের আরকান বা স্তম্ভসমূহ বলে।
শারায়েতে নামায
শারায়েতে নামায সাতটি। যদ তার মধ্যে একটিও বাকী থাকে তাহলে নামায হবে না।
১. শরীর পাক হওয়া
অর্থাৎ শরীরের উপর যদি কোন হাকিকী নাজাসাত লেগে থাকে তা শরীয়তের হেদায়েত মুতাবিক দূর করতে হবে। যদি অযুর দরকার হয়, অযু করতে হবে। গোসরে দরকার হলে গোসল করতে হবে। শরীর যদি নাজাসাতে হাকিকী ও হুকমী থেকে পাক না হয়, নামায হবে না।
২. পোশাক পাক হওয়া
অর্থাৎ যে কাপড় পরিধান করে অথবা গায়ে দিয়ে নামায পড়া হবে তা পাক হওয়া জরুরী। জামা, পায়জামা, টুপি, পাগড়ি, কোট, শিরওয়ানি, চাদর, কম্বল, মুজা, দস্তানা, মোট কথা নামাযীর গায়ে যা কিছুই থাকবে তা পাক হওয়া জরুরী। নতুবা নামায হবে না।
৩. নামাযের স্থান পাক হওয়া
অর্থাৎ নামায পাঠকারী দু’পায়ের, হাটুর, হাত ও সিজদার স্থান পাক জরুরী। তা খালি যমীন হোক, অথবা যমীনের উপর বিছানা, মুসাল্লা প্রভৃতি যাই হোক। নামায সহী হওয়ার জন্যে যদিও এতটুকু স্থান পাক হওয়া জরুরী তথাপি এমন স্থানে নামায পড়া ঠিক নয় যার পাশেই মলমূত্র আছে এবং তার দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে।
৪. সতর ঢাকা
অর্থাৎ শরীরের এসব অংশ আবৃত রাখা, যা নারী পুরুষের জন্যে ফরয। পুরুষের জন্যে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরয। নারীর জন্যে হাতের তালু, পা এবং চেহারা ব্যতীত সমস্ত দেহ ঢেকে রাখা ফরয। [ এ এমন এক ফরয যা নামাযের ভেতরে এবং বাইরে সর্বদা মেনে চলা একান্ত জরুরী। ফরয হওয়া সত্ত্বেও নামাযের মধ্যে একে শর্তাবলীর মধ্যে শামিল করা হয়েছে যে, নামাযের অংগ নয়।] পা খোলার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, টাকনু যেন-বের হয়ে না পড়ে। কারণ নারীরেদ টাখনু ঢেকে রাখা জরুরী।
৫. নামাযের ওয়াক্ত হওয়া
অর্থাৎ যে সময়ে নামাযের যে সময়, সময়ের ভেতরেই নামায পড়তে হবে। ওয়াক্ত আসার পূর্বে যে নামায পড়া হবে তা হবে না এবং ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পরে পড়লে তা কাযা নামায হবে।
৬. কেবলামুখী হওয়া
অর্থাৎ কেবলার দিকে মুখ করে নামায পড়া কোন সত্যিকার কারণ অথবা অসুস্থতা ব্যতিরেকে কেবলা ব্যতী অন্য দিকে মুখ করে যদি কেউ নামায পড়ে, তবে সে নামায হবে না।
৭. নিয়ত করা
অর্থাৎ যে ফরয নামায পড়তে হবে, সেই নির্দিষ্ট নামাযের জন্যে মনে মনে এরাদা করা। যদি কোন ওয়াক্তের কাযা নামায পড়তে হয় তাহলে এই এরাদা করতে হবে যে, অমুক দিনের অমুক ওয়াক্তের কাযা নামায পড়ছি অবশ্যি নফল ও সুন্নাতের জন্যে নফল অথবা সুন্নাত নামায পড়ছি এতটুকুই বলাই যথেষ্ট হবে। মনের এরাদা বা ইচ্ছার প্রকাশের জন্যে মুখেও বলা ভাল কিন্তু জরুরী নয়। যদি ইমামের পেছনে নামায পড়তে হয় তাহলে তারও নিয়ত করা জরুরী।
নামযের আরকান

নামাযের ভেতরে যে সব জিনিস ফরয তাকে আরকান বলে। নামাযের আরকান সাতটি।

১. তাকবীর তাহরীমা
অর্থাৎ নামায শুরু করার সময় আল্লাহু আকবার বলা যার দ্বারা আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্ব প্রকাশ করা হয়। এ তাকবীরের পর চলাফেরা, খানাপিনা, কতাবার্তা সব কিছু হারাম হয়ে যায় বলে একে তাকবীর তাহরীমা বলা হয়।
২. কেয়াম
অর্থাৎ নামাযে সোজা হয়ে দাঁড়ানো। নামাযে এতটুকু সময় দাঁড়িয়ে থাকা ফরয যে সময়ে সেই পরিমাণ কুরআন পড়া যায় যা পড়া ফরয। উল্লেখ থাকে যে, এ ‘কেয়াম’ শুধু ফরয এবং ওয়াজেব নামাযে পরয। সুন্নাত-নফল নামাযে ‘কেয়াম’ ফরয নয়।
৩. কেরায়াত
অর্থাৎ নামাযে কমপক্ষে এক আয়াত পড়া, [অর্থাৎ কেউ কোন সময়ে ‍যদি একই আয়াত পড়ে নামায শেষ করে তাহলে নামায হয়ে যাবে নতুন করে পড়ার দরকার হবে না। কিন্তু একই আয়াত পড়ার অভ্যাস কিছুতেই সহীহ হবে না।] আয়াত বড়ো হাক বা ছোটো হোক। কিন্তু সে আয়াত অন্তত দুটি শব্দে গঠিত হতে হবে। যেমন: (*****) কিন্তু যদি আয়াতে একই শব্দ হয়, যেন (******) তাহলে ফরয আদায় হবে না। [এ হচ্ছে ইমাম আবু হানীফা (র) এর অীভমত। ইমাম মুহাম্মদ (র) এবং ইমাম আবু ইউসুফ ৯র)-এর অভিমত এই যে, ছোটো তিন আয়াত অথবা বড়ো এক আয়াত পড়া ফরয।]
ফরয নামাযগুলোতে শুধু দু’রাকায়াতে কেরায়াত ফরয তা প্রথম দু’রাকায়াতে হোক, শেষ দু’রাকয়াতে হোক, মাঝের দু’রাকয়াতের হোক অথবা প্রথম ও শেষ রাকয়াতে হোক সকল অবস্থায় ফরয আদায় হয়ে যাবে। বেতের, সুন্নাত এবং নফলের সকল রাকয়াতে কেরায়াত ফরয।
৪. রুকু
প্রত্যেক রাকয়াতে একবার রুকু’ করা ফরয। রুকু’র অর্থ হলো নামাযী এতটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে যেন তার দু’হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে।
৫. সিজদা
প্রতি রাকয়াতে ‍দু’সিজদা ফরয।
৬. কা’দায়ে আখেরাহ
অর্থাৎ নামাযের শেষ রাকয়াতে এতক্ষণ পর্যন্ত বসা যাতে (****) থেকে (****) পর্যন্ত পড়া যায়।
৭. ইচ্ছাকৃত কাজের দ্বারা নামায শেষ করা
অর্থাৎ নামাযের যাবতীয় আরকান সমাধা করার পর এমন কোন কাজ করা যা নামাযে নিষিদ্ধ এবং যার দ্বারা নামায শেষ হয়। [‘কেয়াম’ ব্যতী অন্যান্য সমস্ত আরকান প্রত্যেক নামাযে ফরয তা ফরয হোক ওয়াজেব হোক অথবা নফল। ‘কেয়াম’ শুধু ফরয এবং ওয়াজেব নামাযে ফরয।]

নামাযের ওয়াজেবসমূহ

নামাযের ওয়অজেব বলতে ঐসব জরুরী বিষয় বুঝায় যার মধ্যে কোন একটি ভুল বশত ছুটে গেলে সিজদায়ে সহু দ্বারা নামায দুরস্ত হয়। ভুলবশত কোন জিনিস ছুটে যাওয়ার পর যদি সিজদায়ে সহু করা না হয় অথবা ইচ্ছা করেই কোন জিনিস ছুটে যাওয়ার পর যদি সিজদায়ে সহু করা না হয় অথবা ইচ্ছা করে কোন জিনিস ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে পুনরায় নামায পড়া ওয়াজেব হয়ে যায়। নামাযের ওয়াজেব চৌদ্দটি।
১. ফরয নামাযের প্রথম দু’রাকয়াতে কেরায়াত করা।
২. ফরয নামাযের প্রথম দু’রাকয়াতে এবং বাকী নামাযগুলোর সমস্ত রাকয়াতে সূরায়ে ফাতেহা পড়া।
৩. সূরা ফাতেহা পড়ার পর ফরয নামাযের প্রথম দু’রাকয়াতে এবং ওয়াজেব সুন্নাত ও নফল নামাযের সকল রাকয়াতে অন্য কোন সূরা পড়া তা গোটা সূরা হোক, বড়ো এক আয়াত হোক অথবা ছোট তিন আয়াত হোক।
৪. সূরা ফাতেহা দ্বিতীয সূরার প্রথমে পড়া। যদি কেউ প্রথমে অন্য সূরা পড়ার পর সূরা ফাতেহা পড়ে তাহলে ওয়াজেব আদায় হবে না।
৫. কেরায়াত, রুকু’ সিজদা এবং আয়াতগুলোর মধ্যে ক্রম ঠিক রাখা।
৬. ‘কাওমা’ করা। অর্থাৎ রুকু’ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
৭. জলসা’ জরা। অর্থাৎ দু’সিজদার মাঝে নিশ্চিত মনে সোজা হয়ে বসা।
৮. তাদীলে আরকান। অর্থাৎ রুকু’ এবং সিজদা নিশ্চিত ও প্রশান্ত মনে ভালভাবে আদায় করা।
৯. কা’দায়ে উলা। অর্থাৎ তিন এবং চার রাকয়াত বিশিষ্ট নামাযে দু’রাকয়াতের পর (****) পড়ার পরিমাণ সময় বসা।
১০. উভয় কা’দায় একবার আত্তাহিয়্যাত পড়া।
১১. ফজরের উভয় রাকয়াতে, মাগরেব এবং এশার প্রথম দু’রাকয়অতে জুমা ও ঈদের নামাযে, তারাবীহ এবং রমযান মাসে বেতেরের নামাযে ইমামের উচ্চস্বরে কেরায়াত করা। যোহর ও আসর নামযে এবং মাগরেবে ও এশার শেষ রাকয়াতগুলোতে আস্তে কেরায়াত করা।
১২. নামায (****০ দ্বারা শেষ করা।
১৩. বেতের নামযে দোয়া কুনুতের জন্যে তাকবীর বলা এবং দোয়া কুনুত পড়া।
১৪. দুই ঈদের নামযে অতিরিক্ত তাকবীর বলা।

নামাযে সুন্নাতসমূহ

নবী (স) নামাযের মধ্যে ফরয এবং ওয়াজেব ছাড়াও অন্য কতকগুলো জিনিসও করেছেন কিন্তু সে সবের এমন কোন তাকীদ তিনি করেছেন বলে প্রাণিত নেই- যেমন ফরয এবং ওয়াজেবের বেলায় রয়েছে। এগুলোকে নামাযের সুন্নাত বলা হয়। যদিও এগুলো ছুটে গেলে নামায নষ্ট হয় না এবং সহু সিজদাও অপরিহার্য হয় না, তথাপি এগুলো মেনে চলা উচিত। কারণ নবী (স) এগুলোকে মেনে চলেছেন এবং প্রকৃতপক্ষে নামায তো তাই যা নবী (স)-এর নামযের সদৃশ।
নামাযের সুন্নাত একুশটি
১. তাকবীর তাহরীমা বলার আগে পুরুষের কানের নিম্নভাগ [নবী (স) শীতের কারণে চাদরের ভেতরে বুক পর্যন্ত হাত তুলেছেন।] পর্যন্ত এবং নারীর কাঁধ পর্যন্ত  দু’হাত উঠানো। ওজর বশতঃ পুরুষ কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত উঠালে সহীহ হবে।
২. তাকবীর তাহরীমা বলার সময় দু’হাতের আঙ্গুলগুলো খুলে রাখা এবং দুই হাতলি এবং আঙ্গুলগুলো কেবলামুখী করা।
৩. তাকবীর তাহরীমা বলার পরক্ষণেই পুরুষের নাভির ইমাম শাফেয়ী (র) এবং আহলে হাদীস ওলামার অভিমত হচ্ছে পুরুষেরও বাকে হাত বাঁধা সুন্নাত। অবশ্যি এ কথা বলা ঠিক নয় যে, নাভি পর্যন্ত হাত বাঁধা হাদীস থেকে প্রমাণিত নয়। ইবনে আবি শায়বা আল কাযার মাধ্যমে ওয়ায়ের বিন হুজারের একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি বী (স) কে নাভীল নীচে হাত বাঁধতে দেখেছেন। এ হাদীসের সকল রাবী নির্ভরযোগ্য হযরত আলকাম এবং ইবনে হুজারের সাক্ষাতও প্রামণিত। আল্লামা ফিরিংগী মহল্লী আল কাওলূল হাযেমে এ বিষেয়ের উপর বিশদ আলোচনা করেছেন।] উপরে এবং মেয়েদের বুকের উপরে হাত বাঁধা। হাত বাঁধার মসনূন তরিকা এই যে, ডান হাতের হাতুলি বাম হাতের হাতুলির পিঠের উপর রাখবে এবং ডান হাতের বুড়ো আংগুল এবং ছোট আংগুল দিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরবে। আর বাকী তিন আংগুল বাম হাতের উপর বিছিয়ে রাখবে। এ তরীকা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যে। অবশ্যি দুই আংগুল দিয়ে বা হাতের কব্জি ধরা নারীদের জন্যে সুন্নাত নয়।
৪. তাকবীর তাহরীমা বলার সময় মস্তক অবনত না করা।
৫. ইমামের জন্যে তাকবীর তাহরীমা এবং এক রুকন থেকে অন্য রুকনে যাবার সময় তাকবীর জোরে বলা।
৬. সানা পড়া। অর্থাৎ ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা’  শেষ পর্যন্ত পড়া।[নিম্নের দোয়অ পড়াও হাদীসে আছে:- (আরবী****************)
হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহগুলোর মধ্যে এমন দুরুত্ব সৃষ্টি করে  দাও যেমন দুরুত্ব পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ, তুমি আমাকে গুনাহ থেকে এমন পাক কর, যেমন সাদা কাপড় ময়লা আবর্জনা থেকে ধুয়ে সাফ হয়ে যায়। হে আল্লাহ, পানি ও বরফ দিয়ে আমার গুনাহগুলো ধুয়ে দাও। (বুখারী)
আবু ইউসুফ (র)-এর নিকটে নিম্নের দোয়া পড়া মুস্তাহাব: (আরবী**************)
আমি সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে একনিষ্ঠ হয়ে সেই পবিত্র সত্তার দিকে মুখ করছি যিনি আসমানসমূহ ও যমীন পয়দা করেছেন এবং আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। বস্তুত আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন এবং মৃত্যু আল্লাহরই জন্যে- যিনি সারা জাহানের রব এবং অনুগতদের মধ্যে আমি প্রথম অনুগত। (আল-আনয়াম)]
৭. (আরবী*************) পড়া।
৮. প্রত্যেক রাকয়াতে সূরা ফাতেহার পূর্বে (*****) পড়া।
৯. ফরয নামাযের তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকয়অতে শুধু মাত্র সূরা ফাতেহা পড়া।
১০. আমীন বলা। ইমামও আমীন বলবে একং একাকী নামায পাঠকারীও আমীন বলবে। যেসব নামাযে ইমাম উচ্চস্বরে কেরায়াত পড়তে তাতে সূরা ফাতেহা খতম হওয়ার পর সকল মুক্তাদী আমীন বলবে।
১১. সানা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ এবং আমীন আস্তে পড়বে [হানাফীদের মতে ‘আমীন’ আস্তে পড়তে হবে। এক রেওয়াতে ইমাম মালেকেরও এ উক্তি কথিত আছে। ইমাম শাফেয়ীর শেষ উক্তিও তাই অবশ্যি আস্তে এবং জোরে পড়া উভয়ই হাদীস থেকে প্রমাণিত আছে। এ জন্যে এটা কিছুতেই ঠিক নয় যে, এর ভিত্তিতে দলাদলি করতে হবে এবং এক দল অপর দলকে গালমন্দ করবে। যখন আওয়ায করে পড়া এবং আওয়ায না করে পড়া উভয়ই হাদীস থেকে প্রমাণিত আছে, তখন যে যে পন্থাকে নিজের বুঝ মোতাবেক সুন্নাত মনে করে পালন করছে তার কদর করা উচিত, গালমন্দ করা ঠিক নয়।]
১২. কেরায়অতে মসনূন তরীকা অনুসরণ করা। যে যে নামাযে যতখানি কুরআন পড়া সুন্নাত সেই মুতাবেক পড়া।
১৪. রুকুতে মাথা এবং কোমর সটান সোজা রাখা এবং দু’হাতের আংগুল দিয়ে উভয় হাঁটু ধরা
১৫. কাওমায় (রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো অবস্থায়) ইমামের (*****) বলা এবং মুক্তাদীর (****) বলা।
১৬. সিজদায় যাবার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর দুহাত, তারপর নাক এবং তারপর কপাল রাখা।
১৭. জলসা এবং ক’দায় বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা এবেং ডান পা এমনভাবে খাড়া রাখা যেন আঙ্গুল গুলোর মাথা কেবলার দিকে থাকে। দুহাত হাঁটুর উপর রাখা।
১৮. আত্তাহিয়্যাতে ‘লা-ইলাহা’ বলার সময় শাহাদাত আংগুলি দ্বারা এশারা করা।
১৯. শেষ কা’দায় আত্তাহিয়্যাতের পর দরুদ পড়া।
২০. দরুদের পর কোন মসনূন দোয়া পড়া।
২১. প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম ফেরা।

নামাযের মুস্তাহাবগুলো

নামাযে পাঁচটি মুস্তাহাব। তা মেনে চলা খুবই সওয়াবের কাজ এবং ছেড়ে দিলে গুনাহ হবে না।
১. পুরুষ যদি চাদর প্রভৃতি গায়ে দিয়ে থাকে, তাহলে তাকবীর তাহরীমার জন্যে হাত উঠাবার সময় চাদ থেকে বাইরে বের করা, মেয়েদের হাত বের না করে তাকবীর তাহরীমা বলা।
২. দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার স্থানের দিকে, রুকু অবস্থায় দু’পায়ের উপর, জলসা ও কা’দার সময় দু’হাটুর উপর এবং সালাম ফেরাবার সময় দু’কাঁধের উপর নযর রাখা।
৩. নামাযী একাকী নামায পড়লে রুকু এবং সিজদায় তিনবারের বেশী তাসবীহ পড়া।
৪. কাশি যতদূর সম্ভব ঠেকিয়ে রাখা।
৫. হাই এলে মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করা, মুখ খুলে গেলে দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাত দিয়ে এবং অন্যান্য অবস্থায় বাম হাতের পিঠ দিয়ে মযখ ঢাকা।

যে সব কারণে নাময নষ্ট হয়

যে সব কারণে নামায নষ্ট হয় তা চৌদ্দটি। নামায রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে তা স্মরণ রাখা জরুরী।
১. নামাযে কথা বলা। অল্প হোক বা বেশী হোক নামায নষ্ট হবে এবং পুনরায় পড়তে হবে। কথা বলার পাঁচটি অবস্থা হতে পারে:-
** প্রথম অবস্থা এই যে, কোন লোকের সাথে স্বয়ং কথা বলা অথবা কারো কথার জবাব দেয়া। নিজের ভাষায় হোক, অন্য ভাষায় অথবা স্বয়ং কুরআনের ভাষায় হোক সকল অবস্থায় নামায নষ্ট হবে। যেমন ধরুন ইয়াহ্‌ইয়া নামক কোন ব্যক্তিকে কেউ কুরআনের ভাষায় বললো (***) অথবা মরিয়ম নামের কোন মেয়েকে বললো- (*****) অথবা পথিককে জিজ্ঞাসা করলো- (******) অথবা কাউকে হুকুম করলো  (*******)অথবা কোন দুঃসংবাদ শুনে বললো (******) অথবা কারো হাঁচি শুনে বললো (******) অথবা কোন আজব কথা শুনে বললো (******) অথবা কোন খুশীর খবর শুনে বললো (******) অথবা কারো উপর নযর পড়লো এবং দেখলো যে সে আজেবাজে ও বেহুদা কথা বলছে। তখন বললো- (*****) অথবা কাউকে সালাম করলো কিংবা সালামের জবাব দিল, অথবা নামাযের বাইরে কেউ দোয়া করলো এবং নামাযী আমীন বললো, অথবা ‘ইয়া আল্লাহ’ শুনে (****) বললো, অথবা নবী (স)-এর নাম শুনে দরুদ পড়লো, অথবা কোন নারী বাচ্চাকে পড়ে যেতে দেখ কিছু বললো-মোট কথা কোন প্রকারেই যদি কোন লোকের সাথে কেউ কথা বলে কিংবা কোন কিছুর জবাবে কিছু বলে তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
** দ্বিতীয় অবস্থা। কোন পশুর দিকে দৃষ্টি দিয়ে কিছু বলা। যেমন নামায পড়ার সময় নযর পড়লো যে মুরগী অথবা বিড়াল খাবার জিনিসের উপর মুখ দিচ্ছে এবং তাকে তাড়াবার জন্যে কিছু কথা বলা, এ অবস্থায় নামায নষ্ট হবে।
** তৃতীয় অবস্থা। স্বগতঃ নিজের থেকে কিছু কথা বলা তা নিজ ভাষায় হোক বা আরবী ভাষায় তাতে নামায নষ্ট হবে। হাঁ যদি কোন এন কথা যা ‍কুরআনে আছে তাহলে নামায নষ্ট হবে না। যদি সে কথা তার মুদ্রাদোষ হয় তাহলে তা কুরআনের শব্দ হলেও নামায নষ্ট হবে। যেমন ‘হাঁ’ (***) কারো মুদ্রাদোষ হয় যদিও তা কুরআনে আছে, তথাপি নামায নষ্ট হবে।
** চতুর্থ অবস্থা। দোয়া ও যিকির করা। দোয়া নিজের ভাষায় হোক অথবা আরবী ভাষায় নামায নষ্ট হবে। আর যদি কুরআন ও হাদীসের দোয়া এবং যিকিরের মধ্যে থেকে কোনটা হঠাৎ মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তাহলে নামায নষ্ট হবে না। তার অর্থ এই যে, হঠাৎ ঘটনাক্রমে যদি এমন ভুল হয়ে যায়, তাহলে নামায নষ্ট হবে না। কিন্তু ইচ্ছা করে যদি এমন করা হয় এবং অভ্যাস হয়ে পড়ে যে রুকু, সিজদা বা বৈঠকে যা খুশী তাই কিছুতেই বলা যাবে না। তারপর যা মানুষের কাছে চাওয়া যায় তা যদি নামাযের মধ্যে চাওয়া হয়, তা আরবী ভাষায় হোক না কেন, তাতে নামায নষ্ট হবে।
** পঞ্চম অবস্থা। কেউ নামায পড়া অবস্থায় দেখলো যে, আর একজন কুরআন ভুল পড়ছে, তখন লোকমা দিল, তা সে নামাযে ভুল পড়ুক অথবা নামাযের বাইরে পড়ুক, নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তবে ভুল পাঠকারী যদি ইমাম হয় তাহলে নাায নষ্ট হবে না। যদি মুক্তাদী কুরআন দেখে লোকমা দেয় অথবা অন্য কারো নিকটে সহীহ কুরআন শুনে আপন ইমামকে লোকমা দেয় তাহলে নাময নষ্ট হবে। আর ইমাম যদি তার লোকমা গ্রহণ করে তাহলে ইমামেরও নামায নষ্ট হবে।
২. নামাযে কুরআন দেখে পড়লেও নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
৩. নামাযের শর্তগুলোর মধ্যে কোন একটি যদি খতম হয়ে যায়, তা নামায সহীহ হওয়া শর্ত হোক অথবা ওয়াজেব হওয়ার শর্ত উভয় অবস্থায় নামায নষ্ট হবে। যেমন, তাহারাত রইলো না, অযু নষ্ট  হলো অথবা গোসলের দরকার হলো অথবা হায়েযের রক্ত এলা, কাপড় নাপাক হলো, জায়নামায নাপাক হলো, অথবা বিনা কারণে কেবলার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, অথবা সতর খুলে গেল এবং এতটা সময় পর্যন্ত খোলা রইলো যে সময়ে রুকু বা সিজদা করা যায়, অথবা অন্য কোন কারণে জ্ঞান হারিয়ে গেল অথবা পাগল হয়ে গেল, মোট কথা কোন একটি শর্ত খতম হলে নামায নষ্ট হবে।
৪. নামাযের ফরযসমূহের মধ্যে কোন একটি যদি ছুটে যায়, ভুল বশতঃ ছুটে যাক অথবা ইচ্ছা করে কোনটা ছেড়ে দেয়া হলে নামায নষ্ট হবে। যেমন, কেয়াম কেউ করলো না। অথবা রুকু সিজদা ছেড়ে দিল, অথবা কেরায়াত মোটেই পড়লো না, ভুল বশতঃ এমন হোক বা ইচ্ছা করে, নামায নষ্ট হবে।
৫. নামাযের ওয়অজেবগুলোর মধ্যে কোনটা অথবা সবগুলো ইচ্ছা করে ছেড়ে দিলে।
৬. নামাযের ওয়াজেব ভুলে ছুটে গেলে এবং সিজদা সহু না দিলে নামায পাল্টাতে হবে।
৭. বিনা ওজরে এবং ন্যায়সংগ প্রয়োজন ব্যতিরেকে কাশি দেয়া। তবে যদি রোগের কারণে আপনা আপনি কাশি আসে অথবা গলা সাফ করার জন্যে কাশি দেয় অথবা ইমামের ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্যে কাশি দেয় যাতে ইমাম বুঝতে পারে যে, সে নামায ভুল পড়ছে, তাহলে এসব কারণে নামায নষ্ট হবে না। এসব কারণ ব্যতীত বিনা কারণে কাশি দিলে নামায নষ্ট হবে।
৮. কোন দুঃখ কষ্ট, শোক বা কঠিন বিপদে পড়ে আঃ উঃ করলে অথবা কোন বেদনাদায়ক আওয়ায বা আর্তনাদ করলে নামায নষ্ট হবে। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি কখনো কোন শব্দ মুখ থেকে বেরিয়ে আসে অথবা আল্লাহর ভয়ে কেউ কেঁদে ফেলে অথবা তেলাওয়াতে অভিভূত হয়ে কাঁদে অথবা আঃ উঃ শব্দ বের হয়, তাহলে এসব অবস্থায় নামায নষ্ট হবে না।
৯. নামায অবস্থায় ইচ্ছ করে হোক কিংবা ভুলে যদি কেউ কিছু খেয়ে ফেলে অথবা পান করে, যেমন পকেটে কিছু খাবার জিনিস ছিল, বেখেয়ালে অথবা ইচ্ছ করে খেয়ে ফেললো তাহলে নামায নষ্ট হবে। হাঁ তবে যদি দাঁতের মধ্যে থেকে ছোলার পরিমাণ থেকে ছোটো কোন কিছু বের হলো এবং নামাযী তা খেয়ে ফেললো, তাহলে নামায নষ্ট হবে না। তবে ইচ্ছা করে এমন করাও ঠিক নয়। নামাযী ভালো করে মুখ সাফ করে নামাযে দাঁড়াবে।
১০. বিনা ওযরে নামাযে কয়েক কদম চলাফেরা করা। এতেও নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
১১. আমলে কাসীর করা। অর্থাৎ এমন কাজ করা যা দেখলে লোক মনে করবে যে, সে ব্যক্তি নামায পড়ছে না। যেমন কেউ দু’হাতে কাপড় ঠিক করছে অথব কোন মেয়েলোক নামাযের মধ্যে চুলের ঝুঁটি বাঁধছে অথবা নামায অবস্থায় বাচ্চা দুধ খাচ্ছে তাহলে এসব অবস্থায় নামায নষ্ট হবে।
১২. কুরআন পাক তেলাওয়াতে বড় রকমের ভুল করা যার দ্বার অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়, অথবা তাকবীরের মধ্যে আল্লাহর আলিফকে খুব টেনে পড়লো, তাহলে নাময নষ্ট হয়ে যাবে। [আলিফ টেনে পড়লে অর্থ হয়ে-আল্লাহ কি বড়ো?]
১৩. বালেগ মানুষের অট্টহাসি করা।
১৪. দেয়ালে কিছু লেখা ছিল অথবা পোস্টার ছিল, অথবা পত্রের উপর নযর পড়লো এবং তা পড়ে ফেললো তাহলে নামায নষ্ট হবে। কিন্তু  না পড়ে অর্থ বুঝে ফেললৈ নামায নষ্ট হবে না।
১৫. পুরুষের নিকটে মেয়েলোকের দাঁড়িযে থাকা এমন সময় পর্যন্ত যতোক্ষণে এক সিজদা অথবা রুকু করা যায় এমন অবস্থায় নামায নষ্ট হবে। তবে যদি কোন অল্প বয়স্ক বালিকা দাঁড়ায় যার প্রতি যৌন আকর্ষণ হবে না, অথব মেয়েলোকই দাঁড়ালো কিন্তু মাঝখানে পর্দা রইলো, তাহলে নামায নষ্ট হবে না।
যে সব কারণে নাময মাকরুহ হয়
এমন কতকগুলো কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত যে সবের দ্বারা নামায নষ্ট না হলেও মাকরুহ হয়ে যায়।
***২. [মসজিদের এমন স্থানে কিছু লেখা অথবা পোস্টার লাগানো ঠি নয় যার দিকে নামাযীর চোখ যায়।]

নামাযের মাকরুহ কাজগুলো আটাইশটি

১. প্রচলিত নিয়মের খেলাপ কাপড় পরিধান করা। যেমন কেউ মাথার উপর চাদর দিয়ে দু’ধারে এমনি ঝুলিয়ে রাখলো, -ঘাড়ের উপর দিল না, অথবা জামা অথবা শিরওয়ানীর অস্তিনে হাত না ঢুকিয়ে কাঁধের উপর রাখলে, অথবা মাফলার প্রভৃতি গলায় দিয়ে দু’দিকে ঝুলিয়ে রাখলো।
২. কাপড় ধূলাবালি থেকে বাঁচার জন্যে গুটিয়ে নেয়া, অথবা ধূলা ঝেড়ে ফেলা, অথবা সিজদার জায়গা থেকে পাথর কুচি প্রভৃতি সরিয়ে দেয়ার জন্যে বার বার ফুঁক দেয়া অথবা হাত ব্যবহার করা। [যদি একবার হাত দিয়ে পাথর কুচি সরিয়ে দেয়া হয় অথবা ফুঁক দিয়ে জায়গা সাফ করা হয় তাহলে কোন দোষ নেই।]
৩. পরনের কাপড়, দাড়ি, বোতাম, মাথার চুল অথবা অন্য কিছু দ্বারা খেলা করা অথবা মুখে আংগুল দেয়া অথবা দাঁড়ানো অবস্থায় হাতের উপর আংগুল বাজানো অথবা বিনা কারণে গা চুলকানো।  [অধিকাংশলোক এসব কাজ করে থাকে। বিশেষ মনোযোগ সহকারে এসব কাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। তারপর সঠিক পন্থা এই যে, পূর্ণ অনুভূতির সাথে নামায পড়তে হবে এবং মনের মধ্যে একাগ্রতা ও বিনয় নম্রভাব সৃষ্টি করতে হবে।]
৪. এমন মামুলি পোশাক পরিধান কর নামায পড়া যা পরিধান করে লোক হাট বাজার, কোন সভা সমিতিতে যাওয়া পছন্দ করে না। যেমন, কেউ বাচ্চাদের টুপি মাথায় দিয়ে নামায পড়ছে। মসজিদে তালের বা অন্য কোন কিছুর আজে বাজে টুপি রেখে দেয়া হয় তাই দিয়ে অনেকে নামায পড়ে। অথচ এসব মাথায় দিয়ে কেউ কোন মাহফিলে যোগদান করা পছন্দ করে না।
৫. অলসতাবশতঃ এবং বেপরোয়া হয়ে খালি মাথায় নামায পড়া মাকরুহ। তবে নিজ বাড়ীতে দীনহীনতার সাথে বিনা টুপিতে নামায পড়লে মাকরুহ হবে না। তবে মসজিদে ভাল পোশাকে নামায পড়া উত্তম।
৬. পেশাব পায়খানা অথবা বায়ু নিঃসরণের প্রয়োজনবোধ করলে তা পূরণ না করে নামায পড়া।
৭. পুরুষদের মাথার চুল বেঁধে নামায পড়া।
৮. হাতের আংগুল ফুটানো অথবা এক হাতের আংগুলগুলো অন্য হাতের মধ্যে ঢুকানো।
৯. নামাযের মধ্যে কোমরে হাত রাখা।
১০. কেলার দিকে মুখ ফিরিয়ে অথবা টেরা চোখে  বিনা করণে এদিক ওদিক তাকানো।
১১. সিজদায় দু’হাত কনুই পর্যন্ত মাটিতে বিছিয়ে দেয়া। এমন করা শুধু পুরুষের জন্যে মাকরুহ। মেয়ে লোকদের কনুই পর্যন্ত দু’হাত মাটিতে বিছিয়ে সিজদা করতে হবে।]
১২. এমন লোকের দিকে মুখ করে নামায পড়া যে নামাযীর দিকে মুখ করে আছে।
১৩. মেহরাবের বিলকুল ভেতরে ইমামের দাঁড়ানো। যদি পা মেহরাবের বাইরে হয় এবং সিজদা প্রভৃতি ভেতরে হয় তাহলে দোষ নেই।
১৪. হাইতোলা ঠেকাতে সক্ষম হলে তা না ঠেকানো এবং ইচ্ছা করে হাই তোলা।
১৫. এমন কাপড় পরে নামায পড়া যার মধ্যে কোন প্রাণীর ছবি থাকে অথবা এমন মুসল্লায় নামায পড়া যার মধ্যে সিজদার জায়গায় কোন প্রাণীর ছবি থাকে অথবা স্থানে নামায পড়া যেখানে মাথার উপর অথবা ডানে বামে ছবি থাকে।
১৬. আগের কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও পেছনে একাকী দাঁড়ানো।
১৭. হাত অথবা মাথার ইশারায় সালাম করা।
১৮. চোখ বন্ধ করে নাময পড়া। নামাযে মন লাগাবার জন্যে এবং বিনয় নম্রতা ও দীনহীনতার মনোভাব সৃষ্টি করার জন্যে চোখ বন্ধ করলে নাময মাকরূহ হবে না বরঞ্চ তা করা ভালো।
১৯. শুধু কপাল অথবা শুধু নাক মাটিতে ঠেকিয়ে সিজদা করা অথবা টুপির কেনারা দিয়ে অথবা পাগড়ির উপর সিজদা করা।
২০. বিনা করণে চারজানু হয়ে বসা এবং হাঁটুর সাথে পেট ও ‍বুক লাগিয়ে বসা।
২১. বিনা করণে শুধু ইমামের উঁচু জায়গায় দাঁড়ানো। যদি কিছু মুক্তাদিও সাথে থাকে তাহলে দোষ নেই। এমনি বিনা করণে মুক্তাদিদেরও উঁচু স্থানে দাঁড়ানো মাকরুহ।
২২. কেয়াম অবস্থায় কেরায়াত পুরা না করে ঝুঁকে পড়া এবং ঝুঁকে পড়া অবস্থায় কেরায়াত শেষ করা।
২৩. ফরয নামাযে কুরআনের ক্রমিক ধারা বজায় না রেখে কেরায়াত করা। যেমন প্রথম রাকয়াতে (****) পড়া এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে (****) পড়া। অথবা মাঝখানে কোন তিন আয়াত বিশিষ্ট সূরা বাদ দিয়ে তার পরের সূরা ‘কাফেরুন’ পড়া এবং মাঝখানের সূরা কাওসার ছেড়ে দেয়া যা তিন আয়াতের সূরা। এমনে এক সূরার কিছু আয়াত প্রথম রাকয়াতে পড়া এবং তারপর দু’ আয়াত বাদ দিয়ে সামনে থেকে কিছু আয়াত দ্বিতীয রাকয়াতে পড়াও মাকরু। এভাবে এক রাকয়াতের এমনভাবে দু’ সূরা পড়া মাকরুহ যে, তার মাঝখানে এক সূরা অথবা একাধিক ছোট কিংবা বড়ো সূরা বাদ থাকে। অথবা প্রথম রাকয়াত থেকে দ্বিতীয় রাকয়াতে লম্বা কেরায়াত করা অথবা নামাযে পড়ার জন্যে কোন সূরা নির্দিষ্ট করে নেয়া এবং হরহামেশা তা পড়া মাকরুহ। ভুলবশত, ক্রমের খেলাপ হলে দোষ নেই। উল্লেখ থাকে যে, শুধু ফরয নামাযই এসব মাকরুহ, তারাবীহ অথবা অন্যান্য নফল নামাযে মাকরুহ নয়।
২৪. নামাযের সুন্নাতের মধ্যে কোনটা বাদ দেয়া।
২৫. সিজদার সময় দু’পা মাটি থেকে উঠানো।
২৬. নামাযে আয়াত, সূরা অথবা তাসবী আংগুল দিয়ে গণনা করা।
২৭. নামাযের মধ্যে গা হামানো বা অলসতা প্রদর্শন করা।
২৮. মুখে কিছু রেখে নামায পড়া যাতে কেরায়াত করতে অসুবিধা হয়। অসুবিধা না হলে মাকরুহ হবে না।

যে সব অবস্থায় নামায ছেড়ে দেয়া যায়েয অথবা ওয়াজেব

১. নামায পড়তে পড়তে ট্রেরণ ছেড়ে দিল। ট্রেনে মালপত্র আছে, বাচ্চা কাচ্চা আছে। এমন অবস্থায় নামায ছেড়ে দেয়া যায়েয।
২. নামায পড়ার সময়ে সাপ এলো অথবা কিছু বোলতা অথবা অন্য কোন অনিষ্টকর পোকামাকড় কাপড়ের মধ্যে ঢুকলো। এমতাবস্থায় নামায ছেড়ে দিয়ে সে অনিষ্টকর প্রাণী মারা দুরস্ত হবে।
৩. মুরগী, কবুতর অথবা অন্য কোন গৃহপালিত পাখি ধরার জন্যে বিড়াল এলো এবং যদি আশংকা হয় যে, নামায ছেড়ে দিযে বিড়াল না তাড়ালে পাখীটা খেয়ে ফেলবে, তাহলে এ আশংকায় নামায ছেড়ে দেয়া জায়েয হবে।
৪. যদি নাময শেষ করতে গেলে আর্থিক ক্ষতির আশংকা হয় তাহরে নামায ছেড়ে দেয়া দুরস্ত হবে। যেমন কোন মেয়েলোক নামায পড়ছে। চুলার উপর পাতিল চড়ানো আছে পাতিলের জিসি পুড়ে যেতে পারে অথবা উঠলে পড়ে যেতে পারে, অথবা মসজিদে কেউ নামায পড়ছে এবং জুতা-ছাতা প্রভৃতি এমন স্থানে রাখা আছে যে, চুরি হওয়ার ভয় হচ্ছে, অথবা কোন মেয়েলোক ঘরেই নামায পড়ছে এবং ঘরের দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছে যার কারণে চুরি হওয়ার আশংকা আছে, অথবা বাড়ীর মধ্যে কুকুর, বিড়াল অথবা বানর ঢুকবে এবং আশংকা হচ্ছে যে তারা কিছু ক্ষতি করবে, মোট কথা যে সব অবস্থায় আর্থিক ক্ষতি হওয়ার আশংকা হয়ে সে সব অবস্থায় নামায ছেড়ে দেয়া জায়েয। আর যদি অতি সামান্য ক্ষতির আশংকা হয় তাহলে নামায পুরা করা ভালো।
৫. নামাযে পেশাপ পায়খানার বেগ হলে নাময ছেড়ে দিয়ে পেশাপ বায়খানা সেরে পুনরায় অযু করে নামায পড়া উচিত।
৬. কোন অন্থ পথ চলছে। সামনে কুয়া আছে অথবা নদীর তীর, পড়ে গেল ডুবে মরতে পারে। তাকে বাঁচাবার জন্যে নামায ছেড়ে দেয়া ফরয হবে। আল্লাহ না করুন, যদি সে মনে যায় তাহলে নামাযী গুনাহগার হবে।
৭. নামায পড়ার সময় কোন বাচ্চার গায়ে আগুন লাগলো অথবা কোন অবুঝ শিশু ছাদের কেনারায় পৌঁছলো, অথবা ঘরে বানর ঢুকলো এবং আশংকা হয় যে, সে দুধের শিশুকে ধরে নিয়ে যাবে, অথবা কোন ছোটো শিশু হাতে ছুরি বা ব্লেড তুলে নিয়েছে এবং আশংকা হয় যে, নিজের বা অপর কোন শিশুর হাত পা কেটে দেয় অথবা রেলগাড়ী বা মোটর গাড়ীতে কাউকে আহত করছে এ সকল অবস্থায় বিপদগ্রস্তকে ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচানোর জন্যে নামায ছেড়ে দেয়া ফরয হবে। না ছাড়লে শক্ত গুনাহগার হতে হবে।
৮. যদি মা, বাপ, দাদা-দাদী, নানা-নানী কোন বিপদে পড়ে ডাক দেয় তাহলে তাদের সাহায্যের জন্যে নামায ছেড়ে দেয়া ফরয হবে। যদি তাদের সাহায্যের জন্যে নিকটে আর কেউ থঅকে অথবা বিনা প্রয়োজনে ডাকছে তাহলে নামায ছেড়ে না দেয়া ভালো। যদি নফল অথবা সুন্নাত নামায পড়াকালে তারা বিনা প্রয়োজনে ডাকে এবং তাদের জানা নেই যে, যাকে ডাকছে সে নামায পড়ছে, তথাপি নামায ছেড়ে তাদের কথার জবাব দেয়া ওয়াজেব।

0 comments:

Post a Comment