হুজুর (স:) বলেন, যখন আমার উম্মত দুনিয়াকে বড় মনে করবে তখন ইসলামের মর্যাদা তাদের অন্তর থেকে উঠে যাবে ইং যখন তারা সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা ছেড়ে দিবে তখন ওহীর বরকত থেকে বন্চিত হয়ে যাবে। আর যখন তারা পরস্পর গালিগালাজ আরম্ভ করবে তখন আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি থেকে মাহরুম হয়ে যাবে। -(তিরমিজি) ইসলাম ও মুসলমানের উন্নতির জন্য সবাই সচেষ্ট। কিন্তু আমরা যে পন্থা অবলম্বন করেছি তা আমাদেরকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আপনারা যদি হুজুর (স:) কে আল্লাহর সত্য নবী বলে মনে করেন, তার শিক্ষাকে প্রকৃত শিক্ষা বলে স্বীকার করেন, তবে কেন তিনি যেটাকে রোগের কারন বলে উল্লেখ করেছেন সেটাকে আপনারা আরোগ্যের উপায় বলে গ্রহন করছেন। হুজুর (স:) বলেছেন, কোন ব্যক্তি ঐ পর্যন্ত প্রকৃত মুসলমান হতে পারবেনা যতক্ষন তার অন্তরে আমার আনীত ধর্মের প্রতি আগ্রহ না জন্মিবে। কিন্তু তোমাদের অভিমত এই যে, ধর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারলেই আমরাও অন্য জাতির মত উন্নতি করতে পারব। আল্লাহপাক বলেন- "যে ব্যক্তি আখিরাতের ফসল চায় আমি তার ফসল বৃদ্ধি করে দিব, আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসলের কামনা করে আমি তাকে কিন্চিত দুনিয়া দিব, কিন্তু আখিরাতে সে কিছুই পাবেনা।" হাদিস শরিফে আছে ,যে মুসলমান পরকালকে আপন লক্ষ্যবস্তু বানাবে আল্লাহপাক তার অন্তরকে চিন্তামুক্ত ও উদার করে দিবেন এবং দুনিয়া অপদস্ত হয়ে তার কাছে আসবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াকেই আপন লক্ষ্যবস্তু হিসাবে গ্রহন করে সে নানাবিধ পেরেশানিতে পরে এবং দুনিয়াতে তার ভাগ্যে যতটুকু লিখা আছে তার চেয়ে বেশি সে পায় না। অত:পর হুজুর (স:) বলেন, আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার এবাদতের জন্য ঝামেলা মুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে চিন্তামুক্ত করে দিব এবং তোমার অভাবকে দূর করে দিব। আর যদি না কর তবে তোমার অন্তরকে শত শত পেরেশানি দিয়ে পূর্ণ করে দেব এবং দরিদ্রতাও দূর করবনা। এটাই হল আল্লাহ ও তার রাসুলের ফরমান। আর তোমাদের অভিমত এই যে, মুসলমানদের উন্নতির পথে মৌলভি মৌলানারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠি করছেন। তোমরা নিজেরাই বিচার কর, যদি তোমাদের অবাস্তব ধারনা মতে আলেমদের রিজিক তোমাদের হাতে থেকে থাকে তবে তোমাদের উন্নতি তো তাদের আনন্দের কারন হত। কেননা এতে তারা তোমাদের কাছ থেকে আগের চেয়ে বেশি পাইত ও খেতে পারত। কিন্তু এসব স্বার্থপর আলেমরা নিশ্চয় কোন বড় স্বার্থের কারনে পার্থিব স্বার্থকে দুরে ঠেলে তোমাদের বিরোধিতা করছেন। আপনারা একটু চিন্তা করে দেখুন, যখন আলেমরা এমন কথা বলেন, যা পবিত্র কোরআনে পাকে পরিষ্কার উল্লেখ আছে , তবে শুধুমাত্র জিদ ও হিংসার বশবর্তী হয়ে তা হতে মুখ ফিরানো নিছক বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। কারন এসকল মৌলভি মৌলানারা যতই অনুপযুক্ত হোক না কেন, কিন্তু যখন আল্লাহ ও তার রাসুলের পরিষ্কার বাণী তোমাদের কাছে পৌছাচ্ছে তখন তার প্রতি আমল করা তোমাদের একান্ত কর্তব্য। সরকারী ঘোষনা কোন মেথর দ্বারা করানো হলে কোন গন্ডমূর্খও এই বলে তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে কি যে, ঘোষনাটি মেথর দিয়ে করানো হয়েছে? আলেমদের উপর এই অভিযোগ ও অবান্তর যে, তারা দ্বীনের কাজে সীমাবদ্ধ হওয়ার দাবি করা সত্বেও অপরের নিকট কেন সওয়াল করে থাকেন। কেননা আমার যতটুকু ধারনা প্রকৃত আলেম কখনো নিজের জন্য সওয়াল করেন না। বরং যে যতবেশী আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হন তত বেশি মানুষের হাদিয়া কবুল করতেও সংকোচ বোধ করেন। তবে ধর্মীয় কাজের জন্য সওয়াল করলে সে নিজের জন্য সওয়াল না করার চেয়ে বেশি সোয়াবের অধিকারী হবে। অনেকেই বলে থাকেন, ইসলামে বৈরাগ্য বা সংসারত্যাগী হওয়ার কোন শিক্ষা নাই। এতে দ্বীন ও দুনিয়া উভয়কে সমপর্যায়ে রাখা হয়েছে। কোরআনে পাকে বর্ণিত আছে, " হে পরওয়ারদেগার! তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতেও শান্তি দান করিও, আখিরাতেও শান্তি দান করিও এবং আমাদেরকে দোজখের শাস্তি থেকে রক্ষা করিও।" এই উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়। মনে হয় আমাদের জন্য পুরা কলামে পাকে এই একটি মাত্র আয়াত নাজিল হয়েছে। অথচ প্রথমত আয়াতটির অর্থ অভিজ্ঞ ওলামাদের কাছ থেকে জানা উচিত ছিল।আলেমদের মতে শুধুমাত্র শব্দের তর্জমা দেখেই নিজেকে কোরআনের পন্ডিত মনে করা সম্পুর্ন মুর্খতা।সাহাবা ও তাবেয়ীনদের কাছ থেকে উক্ত আয়াতের অর্থ যা বর্ণিত হেয়েছে তা নিম্নে দেয়া হল। হজরত কাতাদা (রা:) বলেন, দুনিয়ার শান্তি অর্থ স্বাস্থ্য ও প্রয়োজন পরিমানে রুজি। হজরত আলী (রা:) বলেন- উহার অর্থ নেক বিবি। হাসান বসরী (রহ:) বলেন- এর অর্থ এলেম ও ইবাদত। ছুদ্দী (রহ:) বলেন -এর অর্থ হালাল মাল। হজরত এবনে উমর (রা:) এর মতে হল নেক সন্তান ও মাখলুকের প্রশংসা। হজরত জাফর (রা:) বলেন এর অর্থ স্বাস্থ্য এবং যথেস্ট পরিমান রুজি, আল্লাহর কালামের অর্থ জানা, শত্রুর উপর জয় ও নেক লোকের সংসর্গ। যদি সবরকম পার্থিব উন্নতিই উদ্দেশ্য হয় যেমন আমার মন চায় তবুও এর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। দুনিয়া পাওয়ার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে বলা হয়নি বরং আল্লাহর কাছে চাওয়া, সেটা ছেড়া জুতা ঠিক করার জন্যই হোক না কেন, সেটাই তো ধর্মের অন্তর্ভুক্ত। দুনিয়া নয়। দুনিয়ার ধন দৌলত হাসিল করতে কে নিষেধ করে? আমাদের উদ্দেশ্য এই নয় যে, দুনিয়ার মত গনিমতের বস্তুকে তুমি ছেড়ে দাও বরং আমাদের উদ্দেশ্য এই যে, দুনিয়ার জন্য যতটুকু পরিশ্রম কর দ্বীনের জন্য তার চেয়ে বেশি না হোক কমপক্ষে তার সমপরিমাণ কর। কেননা তোমার কথামত উক্ত আয়াতে দ্বীন ও দুনিয়াকে সমপর্যায়ে রাখা হয়েছে। অতএব পবিত্র কোরআনে এর পূর্বে বর্ণিত আয়াতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ- "যারা ক্ষনস্থায়ী দুনিয়ার প্রত্যাশী, আমি দুনিয়াতেই তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এবং যতখানি ইচ্ছা দিয়া থাকি। অত:পর তার জন্য তৈরী জাহান্নামে সে পর্যুদস্ত ও অপদস্ত হয়ে প্রবেশ করবে। আর যারা আখেরাতের প্রত্যাশা করে এবং এর জন্য ঈমান সহকারে যথোপযুক্ত চেষ্টাও করে তাদের চেষ্টার মর্যাদা রক্ষা করা হবে।" ( আল কোরআন) এ বিষয়ে আরো আয়াতসমুহ: ১ . তোমাদের মধ্যে কেউ দুনিয়া চায়, আবার কেউ আখেরাত চায়, এটা দুনিয়ার জীবনের ভোগ সামগ্রী মাত্র এবং একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে শুভ পরিনাম। ( সুরা আল ইমরান ২য় রুকু) ২ . আপনি বলে দিন, দুনিয়ার সুখ স্বাচ্ছ্যন্দ অতি তুচ্ছ! আর যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে আখেরাতে শান্তি। ৩ . এবং দুনিয়ার জীবন খেলাধুলা ছাড়া আর কিছুই নয় আর পরহেযগারদের জন্য পরকালই উত্তম। ৪ . যারা নিজ ধর্মকে তামাশার বস্তু বানিয়েছে, তাদের সংস্রব ত্যাগ কর।দুনিয়ার জীবন তাদেরকে ধোকায় ফেলে রেখেছে। ৫ . তোমরা কি আখেরাত ছেড়ে দুনিয়ার জীবনে সন্তুস্ট আছ? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন নেহায়েতই তুচ্ছ। ৬ . যারা অলৌকিক সুখ স্বাচ্ছন্দ কামনা করে, আমরা এখানে তাদের আশা আকাংখা পূর্ণ করে দেই।অথচ তাদের জন্য পরকালে আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই এবং এখানে যা কিছুই তারা আমল করেছে সব ধুলিস্যাত হয়ে যাবে। ৭ . তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ এবং তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা, কেননা তারা আখেরাতের তুলনায় দুনিয়াকেই বেশি ভালবেসেছে। আমরা স্বীকার করি যে, আবশ্যকীয় জিনিসের জন্য মানুষ মুখাপেক্ষী, কিন্তু পায়খানায় যাওয়াও তো জরুরী, তাই বলে কোন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষ কি সারাদিনই সেখানে বসে থাকাকে পছন্দ করে ? আল্লাহ তায়ালার হেকমতের প্রতি গভীর দৃষ্টিপাত করলে বুঝা যাবে যে, শরিয়তের প্রত্যেকটি জিনিসের মাঝে একটা শৃঙ্খলা রয়েছে। নামাজের সময় বন্টনে পরিস্কার ইঙ্গিত রয়েছে যে, দিন রাত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে অর্ধেক সময় বান্দার হক্ব যাকে সে স্বীয় আরাম আয়েশেও ব্যয় করতে পারে অথবা জীবিকা অর্জনেও ব্যয় করতে পারে এবং অর্ধেক আল্লাহর হক্ব। এমতাবস্থায় তোমাদের মতানুসারে দ্বীন ও দুনিয়াকে যখন সমপর্যায়ে রাখা হয়েছে তখন দিন রাত্রির অর্ধেক সময় দ্বীনের কাজ ও বাকি অর্ধেক সময় দুনিয়ার কাজে ব্যয় করা উচিত।নয়ত দুনিয়ার ঝামেলায় যদি অর্ধেকের বেশি সময় ব্যয় হয় তবে নিশ্চিত বুঝতে হবে যে, দুনিয়াকে আখেরাতের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী বিচারের কথা হল এই যে, রাতদিন চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বার ঘন্টা দ্বীনের জন্য ও বার ঘন্টা দুনিয়ার জন্য ব্যয় করা হোক তবেইত দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের হক্ব আদায় হবে এবং বলা যাবে যে ইসলামে বৈরাগ্য নাই। পরিশেষে আরেকটি বক্তব্য এইযে, বিভিন্ন হাদিসের দ্বারা বুঝা যায়, ফেতনার যুগে যখন কৃপনতা দেখা দিবে এবং মানুষ খাহেশাত নফসানির তাবেদারী শুরু করবে, দ্বীনের উপর দুনিয়ার প্রাধান্য বিস্তার করবে, তখন নবী কারিম (স:) অপরের সঙগ ছেড়ে নির্জনবাসের হুকুম দিয়েছেন। কিন্তু বুজুর্গদের মতানুসারে এখনো সেই জামানা আসেনি, সুতরাং যা করার এখনি করে নেয়া উচিত। কারন সেই সময় হয়ত অনতিবিলম্বে এসে পরবে তখন সংশোধন আর সম্ভব হবেনা। তবে উক্ত হাদিসে বর্ণিত খারাবিসমুহ হতে সাবধান থাকতে হবে। কেননা ঐগুলি সমস্ত ফেতনার দ্বার স্বরূপ, তারপর শুধু ফেতনাই ফেতনা দেখা দিবে। হুজুরে পাক (স:) ওই গুলিকে ধ্বংসাত্ম্ক কার্যাবলীর মধ্যে গন্য করেছেন।আল্লাহপাক আমাদেরকে সমস্ত জাহেরী ও বাতেনি ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। করুন।(আমিন)
0 comments:
Post a Comment