Tuesday, November 8, 2016

ইখলাসের গুরত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা:)এর হাদিস:


আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা: হইত বর্নিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সা: কে বলতে শুনেছি যে, পূর্বেকার যুগের তিন লোক কোথাও যাচ্ছিল পথিমধ্যে বৃষ্টি এসে পড়ায় তারা রাত কাটানোর একটি পর্বতের গুহায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হল। তারা গুহায় প্রবেশের পরে একটি পাথর খন্ড গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা স্থির করল তাদের নেক আমলকে অসিলা বানিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলে এই মসিবত হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাদের একজন দোয়া করল, হে আল্লাহ্ আমার পিতামাতা অতিশয় বৃদ্ধ আমি আমার পরিবার পরিজনদের আগেই তাদেরকে দুধ পান করাতাম। একদিন আমি জ্বালানী কাঠের সন্ধানে অনেক দূরে চলে যাই এবং বাড়িতে ফিরতে রাত হয়ে যায়, এসে দেখি আমার বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়েছেন আমি তাদেরকে জাগানো সমীচিন মনে করলাম না তাই তাদের শিয়রে দুধ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, আমার বাচ্চাগুলো আমার পায়ের কাছে ক্ষুধার জন্য কাদছিল কিন্তু পিতা-মাতার আগে তাদেরকে দুধ পান করান সঙ্গত মনে করলাম না এভাবে সকাল হয়ে গেল। অতঃপর তারা ঘুম হতে জাগলেন আমি তাদেরকে দুধ পান করালাম। হে আল্লাহ্! আমি যদি এই কাজটি তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকি তবে তুমি আমাদের উপর থেকে এই পাথরের বিপদ সরিয়ে নাও। এতে করে পাথরখন্ড সরে গেল বটে তবে তারা কেউ বের হতে পারলনা।
অতঃপর অপর ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্ আমার এক চাচাত বোন ছিল যাকে আমি দুনিয়ার সবচাইতে বেশী সূন্দরী মনে করতাম। তাকে আমি ভালবাসতাম পুরুষ নারীকে ঠিক যতটুকু ভাল বাসতে পারে। আমি তার সাথে কাম বাসনা চরিতার্থ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলাম, সে সম্মত হলনা। অবশেষে এক দুর্ভিক্ষের বছরে সে আমার কাছে দূর্বল অবস্থায় এল। আমি তাকে নির্জনে মিলনের শর্তে একশত বিশটি স্বর্ন মুদ্রা দিলাম। এবার সে সম্মত হল। অতঃপর আমি যখন তার দুই উরুর মাঝে অবস্থান নিলাম তখন সে বলল ওহে! আল্লাহ্কে ভয় কর অন্যায় ভাবে আমার স্বতিত্ব নষ্ট করনা। আমি তৎক্ষনাত মেয়েটিকে ছেড়ে চলে এলাম অথচ আমি তাকে প্রচন্ড ভালবাসতাম। এমনকি আমি তাকে যে স্বরন মুদ্রা দিয়েছিলাম তাও ফেলে এলাম। হে আল্লাহ্! আমি যদি এই কাজটি তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকি তবে তুমি আমার উপর থেকে এই পাথরের বিপদ সরিয়ে নাও। এতে করে পাথরখন্ড আর একটু সরে গেল তবু তারা কেউ বের হতে পারলনা।
অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্ আমি একবার কয়েকজন শ্রমিক নিয়োগ করেছিলাম আমি তাদের পারিশ্রমিক যথারীতি পরিশোধ করেছিলাম। তাদের মধ্যে একজন কম পারিশ্রমিক ভেবে তা না নিয়ে চলে গেল। আমি তার পারিশ্রমিকের টাকাটা ব্যবসায় বিনিয়োগ করলাম এবং তাতে অনেক লাভ হল। কিছুদিন পরে লোকটি এসে বলল হে আল্লাহর বান্দা আমার পাওনা টাকা পরিশোধ করুন, আমি বললাম সামনে উট, গরু, ছাগল, ভেড়া, চাকর-বাকর যাকিছু দেখতে পাচ্ছ সব তোমার, সে বলল তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছ? আমি বললাম না। তখন সে সব কিছুই নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই রেখে গেলনা। হে আল্লাহ্! আমি যদি এই কাজটি তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকি তবে তুমি আমাদের উপর থেকে এই বিপদ সরিয়ে নাও। এতে করে পাথরখন্ড পুরপুরি সরে গেল এবং তারা বের হয়ে আসল। (বুখারী ও মুসলিম)



এই হাদিসে রাসুলে করিম (সাঃ) আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন ইখলাসের।
• আমরা কি পারব প্রথম লোকটির মত মাতা-পিতার সেবা করতে?
• পারব কি দ্বিতীয় লোকটির মত আল্লাহ্র ভয়ে অবৈধ কাম-মোহ ত্যাগ করতে?
• তৃতীয় লোকটির মত আমানতদারির বৈশিষ্ট কি আমাদের চরিত্রে থাকা উচিত নয়?
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে উপরোক্ত হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন (আমিন)

0 comments:

Post a Comment